পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

も>b" করবার আবশ্বকতা অনুভব করবে। এই যে পরস্পরের প্রয়োজন অনুসারে পরস্পরের সঙ্গে মিলন এইটে হ’ল বড় অসুবিধার কথা । দ্বিতীয় অসুবিধা হ’ল তার মূল্যের মাপকাঠি নিয়ে। প্রত্যেকটি প্রয়োজনীয় পদার্থের মুল্য নিৰ্দ্ধারিত হবে কি ক’রে ? আর তারপর অর্থের যে-রকম নান ভাগ ক’রে নেওয়া যায় এই বিনিময়প্রথায় তা সম্ভবপর হ’য়ে ওঠে না । এই উপরোক্ত অম্বিধা গুলার জন্যে মানুষ এমন একটা জিনিষের সন্ধান চেয়েছিল যাতে তার চলার পথ অনেকটা সহজ হ’য়ে আসে ; এবং এই ইচ্ছা থেকেই “অর্থের” আবিষ্কার হয়েছিল । বৰ্ত্তমানে আমাদের সমস্ত ব্যবহারিক জীবন এই “অৰ্থ” ব্যবহারের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে সংশ্লিষ্ট ; এবং এর প্রভাব মানুষের ব্যক্তিগত জীবন থেকে আরম্ভ ক’রে তার জাতিগত জীবনকেও ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়েছে তার আন্তর্জাতিক জীবনের উপর । এই “অৰ্থ” আবিষ্কার হওয়ার পর থেকে মামুষ তার সভ্যতা বাড়িয়ে তোলবার অনেক স্ববিধ পেয়েছে। তার প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি উৎপাদন করুবার পক্ষে এই *অর্থ” তাকে যথেষ্ট সাহায্য করেছে । এহ “অর্থের” ব্যবহারেই মামুষের জীবন-ধারণের পদ্ধতি বদলে যায় এবং তার ব্যবসা-বাণিজ্য বেড়ে উঠবার একটা অবাধ স্বাধীনতা পায়। দ্রব্যাদির আদান-প্রদানের একটা স্থনিয়ন্ত্রিত পদ্ধতি হওয়ায় তার . অর্থনৈতিক জীবনের উপর দিয়ে একটা প্রকাণ্ড ঝড় ব’য়ে যায় এবং তার ফলে তার ব্যবসা-বাণিজ্যে একটা যুগান্তর এসে উপস্থিত হয়েছে। এইসব দেখে প্রায় অধিকাংশ অর্থনীতিবিৎ পণ্ডিতরা মনে করেন যে, “অর্থ” মানুষের ব্যবহারিক জীবনের একটা বিশেষ প্রয়োজনীয় জিনিষ ; এবং এই “অৰ্থ” না থাকৃলে মানুষ তার রাষ্টিক ও অর্থনৈতিক জীবনে কখনও পরিপূর্ণতা লাভ করতে পাৰ্বত না এবং তার জাতীয়তার বিকাশ হওয়া অসম্ভব হ’ত । কিন্তু "অর্থ” ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা ও উপকারিতা সম্বন্ধে সকলেই যে নিঃসন্দেহ হয়েছেন তা নয়। স্যোশিস্বালিষ্ট মতবাদীরা ‘অর্থের” প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে প্রবাসী—শ্রোবণ, ১৩৩৩ [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড যথেষ্ট সন্দিহান হয়েছেন এবং তারা সম্পত্তি-মাত্রেই সাধারণের এই ব্যবস্থা দ্বার। “অর্থের” ব্যবহার দূর ক’রে দিতে চাচ্ছেন । র্যার স্যোশিয়ালিষ্ট মতবাদ মানেন না তাদের মধ্যেও দু’একজন ব্যবহারিক জীবনে ‘‘অর্থের” স্থান অনেক নীচে ব’লে নির্দেশ করেছেন । এদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন জন ষ্টুয়াট মিল। তিনি “অৰ্থ” সম্বন্ধে লিখতে গিয়ে বলেছেন যে, সামাজিক জীবনের স্ববন্দোবস্ত ও পরিমিত ব্যয়ের দিক দিয়ে এর তুল্য বস্তুত: অপদার্থ জিনিষ আর হয় না । যাই হোকৃ, বৰ্ত্তমান যুগে আমাদের দেখতে হবে যে, এই “অৰ্থ” ব্যবহারের দ্বারা আমাদের ব্যক্তিগত জীবন বা জাতিগত জাবন কতখানি মুখকর হচ্ছে। এই যে আমরা আমাদের সভ্যতা বিস্তৃত হয়েছে ব’লে গৰ্ব্ব করি, এই যে অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে ব’লে এবং রাষ্ট্রিক ও সামাজিক স্বাধীনতা পেয়েছি ব’লে অহঙ্কারে আমাদের মন ভরে ওঠে, এর মধ্যে কতখানি সত্য নিহিত রয়েছে সেইটাই আজ বিশেষ ক’রে ভাবতে হ’বে । বৰ্ত্তমানে আমরা দেখছি কি ? আমরা দেখছি যে মানুষের প্রচুর ব্যবহার্য্য উপকরণ অসংস্কৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে মানুষ তার নিত্য-প্রয়োজনীয় জিনিষ প্রচুর ভাবে উৎপাদন করছে এবং মানুষের উৎপাদিকা শক্তিও যথেষ্ট পরিমাণে তার মধ্যে সুপ্ত অবস্থায় বিরাজ করছে ; কিন্তু এ-সত্ত্বেও দারিদ্র্যের নিৰ্ম্মম কশাঘাতে সে নিয়ত নিপীড়িত হয় । খাদ্যদ্রব্যের প্রাচুর্ঘ্য সত্ত্বেও তাকে অনশনে কাল কাটাতে হয় । এই তথাকথিত সভ্যতা-বৃদ্ধির সঙ্গে-সঙ্গে মামুষের দুঃখ-কষ্টও বেড়ে উঠছে। কতকগুলা লোক খুব অর্থশালী হ’য়ে পড়ছে ; কিন্তু অধিকাংশের অবস্থা অতিশয় শোচনীয়। ফলে বিদ্রোহ, বিপ্লব প্রভৃতি ধেন সভ্যতার চিরসাথী হ’য়ে দাড়িয়েছে। বিদ্বেষ, অশান্তি প্রভূতি আগুনের মতন মানুষকে জালিয়ে-পুড়িয়ে দিচ্ছে। স্বতীরং স্বথ ব’লে আমরা যা মনে করেছিলাম বস্তুত তা স্বথ নয়; সভ্যতা বলে যাকে মেনে নিয়েছি প্রকৃত সভ্যতা তা থেকে অনেক দূরে পালিয়ে গেছে। শান্তি বলে যাকে বরণ ক’রে নিয়েছিলাম তা অশাস্তিরূপে