পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

so সংখ্যা ] নবযুগের অর্থনৈতিক সমস্যা \9)సి আমাদের দেহের আভরণ হ’য়ে দাড়িয়েছে। সেইজন্তে আজ আমাদের পুরাতন অর্থনৈতিক মতগুলাকে নতুন চাচে ঢেলে নিতে হবে। আজ আমাদের চোখ থেকে মিথ্যা সত্যতার অঞ্জন মুছে ফেলে দেখতে হবে যে, আমাদের অর্থনীতির বনিয়াদ সম্পূর্ণ ভূল ধারণার উপর স্থাপিত করেছি কি না । সেইজন্যে আজ সেই অর্থনীতিবিৎ পণ্ডিতের প্রয়োজন যে “অৰ্থ” ব্যবহার বাদ দিয়ে অর্থনীতির সৌধ গড়তে পারে। আজ আবার দেখা দরকার যে, এই তথাকথিত সভ্যতার আদিম যুগের বিনিময়-প্রথা ফিরিয়ে আনা যায় কি না। পারিপাশ্বিক অবস্থা দেখে মনে হয় যে, “অর্থের” ব্যবহার উঠিয়ে দিয়ে বিনিময়-প্রথা যদি নতুন পদ্ধতিতে চালান যায় তা হ’লে বৰ্ত্তমানে অর্থনীতির দ্বারা যেসমস্ত দুঃখ-কষ্টের স্বষ্টি করা হয়েছে সে-সমস্ত দূর করা যেতে পারে। দুঃখ-কষ্ট যে বেড়েই চলেছে একথা বোধ হয় আজ আর কেউ অস্বীকার করবেন না । এখন এইসমস্ত দুঃখ-কষ্ট "অর্থের” ব্যবহার তুলে দিলে দূর হবে কি না সেইটেই হ’ল আসল সমস্ত । এখন দেখা যাক "অর্থের” ব্যবহার তুলে দিয়ে বিনিময়-প্রথার পুনঃপ্রচলন করলে দুঃখ-কষ্টের কতখানি লাঘব হ’তে পারে। পূর্বেই মানুষকে বিশ্লেষণ ক’রে আমরা দেখেছি যে, প্রত্যেক মানুষ একাধারে উৎপাদক ও ভোগী। এই উৎপাদক ও ভোগী হিসেবে মানুষকে পৃথক পৃথক শ্রেণীতে বিভাগ করা যায়। বিনিময়-প্রথা যখন প্রচলিত ছিল তখন এই উৎপাদকের সঙ্গে ভোগীর সাক্ষাৎ সম্বন্ধ ছিল ; তাতে প্রত্যেক মানুষকেই উৎপাদক হ’তে বাধ্য হ’তে হয়েছিল। "অর্থের” ব্যবহারে বর্তমানে উৎপাদক ও ভোগীর মধ্যে বহু লোক এসে উপস্থিত হয়েছে। ন্যায়শাস্ত্র মন্থন ক’রে এই মধ্যবর্তী লোকগুলাকে উৎপাদক বলা চলে বটে ; কিন্তু প্রকৃত প্রস্তাবে এদের মধ্যে অনেকেই উৎপাদক ব’লে পরিগণিত হতে পারে না এবং তাদের উৎপাদক বলে মনে করলেও তাদের এই কাজের মূল্য বাস্তবিক পক্ষে সামান্তই বলতে হবে ; পরস্তু এই শ্রেণীর লোকেরাই বর্তমান দুঃখ-কষ্টের মূলীভূত কারণ। বিনিময়-প্রথার পুনঃপ্রচলনে এই মধ্যবর্তী লোকের সংখ্যা একরকম লোপ পেয়ে যাবে এবং প্রত্যেক মানুষকেই ব্যবহার্ষ্য কিছু-নী-কিছু উৎপাদন করতে হবে । এইটেই হবে একটা মস্ত বড় লাভ । এখন অনেকে প্রশ্ন করবেন যে, বিনিময়-প্রথা যে-সব কারণে মানুষ তুলে দিতে বাধ্য হয়েছিল এখনও কি সে-সব কারণ বর্তমান থাকৃবে না ? সমস্ত দিক বিচার ক’রে মনে হয় যে, এখন পূর্বের বাধা কাৰ্য্যকরী হবে না। যখন বিনিময়-প্রথা প্রচলিত ছিল তখন মামুষের বর্তমানের ন্যায় বহুল অভিজ্ঞতা ছিল না । তখন যে-সমস্ত বাধা এসে তার সামনে দাড়িয়েছিল মানুষ এখন সে-সমস্ত অতিক্রম করবার শক্তি অর্জন করেছে। এখন তার রাষ্ট্রীয় জীবন অনেকটা সুগঠিত ও স্বনিয়ন্ত্রিত এবং এই রাষ্ট্রশক্তির সাহায্যেই স্কনিয়ন্ত্রিত ভাবে বিনিময় প্রথা প্রচলিত করা সম্ভবপর হবে ; কারণ “অৰ্থ” ব্যবহার করতে হ’লেও রাষ্ট্রশক্তির সাহায্য আমাদের গ্রহণ করতে হয় । বিনিময়-প্রথা চালাবার পথে যে তিনটে বাধার কথা পূৰ্ব্বে উল্লেখ করেছি সেগুলাকে দূর করে দেওয়া বিশেষ কঠিন কথাও নয়। মানুষ যদি “অর্থ” ব্যবহারের জটিলতাকে ক্ৰক্ষেপ না ক’রে চলতে পারে তা হ’লে বিনিময়-প্রথা চালান তার পক্ষে এ অবস্থায় বিশেষ কঠিন ব্যাপার হবে না । তার পর এখন “অর্থ” ব্যক্তিবিশেষের দ্বারা সঞ্চিত হ’য়ে ধনীনিধনের মধ্যে একটা বিরাটু প্রভেদ স্বষ্টি ক’রে, বিনিময়-প্রথা প্রচলিত হ’লে এরূপ হবার আশঙ্কা অনেক কমে যাবে। আর স্তোশিয়ালিজম, বলশেভিজম প্রভৃতি মতবাদের আশ্রয় নিয়ে ব্যক্তিবিশেষের সম্পত্তি জনসাধারণের সম্পত্তিরূপে পরিণত করার প্রয়োজন হ’বে না এবং সেই কারণে ব্যক্তিবিশেষের স্বাধীনতার উপর কোনও রকম হস্তক্ষেপ করবারe প্রয়োজন হবে না। তার পর পূৰ্ব্বে সভ্যতা বৃদ্ধি করবার জন্তে মামুষের মনের মধ্যে একটা সাড়া প’ড়ে গিয়েছিল ; সেইজন্যে ধীরপদবিক্ষেপে চলবার মত সহিষ্ণুতা তার ছিল না। কিন্তু সভ্যতা বাড়িয়ে সে আজ দেখছে যে, লে ঠিক পথে চলে আসতে পারেনি ; তাড়াতাড়ি পথ চলবার চেষ্টাটা তার ভুল হয়েছিল । আজ তাই সে ধীরে অথচ ঠিক পথে চলবার সহিষ্ণুতা অনেক পরিমাণে অর্জন