পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬২২ র্যাদের আমরা ভদ্রলোক বলে থাকি তার স্থির করেছিলেন যে, রাজপুরুষে ও ভদ্রলোকে মিলে ভারতের গদি ভাগাভাগি করে নেওয়াই পলিটিক্স্। সেই পলিটিক্সে যুদ্ধবিগ্রহ সন্ধিশাস্তি উভয় ব্যাপারই বক্তভামঞ্চে ও খবরের কাগজে, তার অন্ত্র বিশুদ্ধ ইংরাজী ভাষা-কখনে অনুনয়ের করুণ কাকলী, কখনো বা কৃত্রিম কোপের উত্তপ্ত উদ্দীপনা। আর দেশে বখন এই প্ৰগলভ বাগ বাত্য বায়ুমণ্ডলের উৰ্দ্ধস্তরে বিচিত্রবাষ্পলীলা-রচনায় নিযুক্ত, তখন দেশের যার মাটির মানুষ তার সনাতন নিয়মে জন্মাচ্চে, মাচে, চাষ কর্চে, কাপড় বুনচে, নিজের রক্তে-মাংসে সৰ্ব্বপ্রকার শ্বাপদ-মানুষের আহার জোগাচ্চে, যে-দেবতা তাদের ছোয়া লাগলে অশুচি হ’ন, মন্দির-প্রাঙ্গণের বাইরে সেই দেবতাকে ভূমিষ্ঠ হ’য়ে প্রণাম করচে, মাতৃভাষায় কঁদুচে, হাস্চে, আর মাথার উপর অপমানের মূষলধারা নিয়ে কপালে করাঘাত করে বলচে, “অদৃষ্ট"। দেশের সেই পোলিটশান আর দেশের সর্বসাধারণ, উভয়ের মধ্যে অসীম দূরত্ব। . সেই পলিটিক্স ৩tঙ্গ মুখ ফিরিয়েচে, অভিমানিনী যেমন করে বল্লভের কাছে থেকে মুখ ফেরায় । বলচে, “কালে মেঘ আর হেরব না গে৷ দূতী” । তখন ছিল পুর্বরাগ ও অভিসার, এখন চলুচে মান এবং বিচ্ছেদ। পালা বদল হয়েছে, কিন্তু লীল বদল হয়নি। কাল যেমন জোরে বলেছিলেম “চাই,” আজ তেমনি জোরেই বলচি “চাইনে”। সেই সঙ্গে এই কথা যোগ করেছি বটে যে, পল্লীবাসী জন-সাধারণের অবস্থায় উন্নতি করাতে চাই। অর্থাৎ এরাই আমার আপন, ওরা আমার পর। কিন্তু “চাইনে, চাইনে” বলবার হুহুঙ্কারেই গলার জোর গায়ের জোর চুকিয়ে দিই। তার সঙ্গে যেটুকু “চাই” জুড়ি, তার আওয়াজ বড় মিহী । যে অছিলাতেই অর্থ কিছু সংগ্ৰহ করি, ভদ্রসমাজের পোলিটিক্যাল বারোয়ারী জমিয়ে তুলতেই তা ফুরিয়ে যায়, তার পরে অর্থ গেলে শব্দ যেটুকু বাকি থাকে সেটুকু থাকে পল্লীর হিতের জন্যে। অর্থাৎ, আমাদের আধুনিক পলিটিকসের শুরু থেকেই আমরা নিগুৰ্ণ দেশ-প্রেমের চর্চ করেচি দেশের মানুষকে বাদ দিয়ে। এই নিরুপাধিক প্রেমচর্চার অর্থ যার জোগান, তাদের কারে বা আছে জমিদারী, কারে বা আছে কারখানা ; আর শব্দ র্যার জোগান উারা আইন-ব্যবসায়ী। এর মধ্যে পল্লীবাসী কোনো জায়গাতেই নেই, অর্থাৎ আমরা যাকে দেশ বলি, সেই প্রতাপাদিত্যের প্রেতলোকে তার খাকে না । তারা অত্যন্ত প্রতাপহীন-কী শব্দ-সম্বলে, কী অর্থ-সম্বলে। যদি দেওয়ানী অবাধ্যত। চলত, তাহলে তাদের ডাকতে হ’ত বটে,—সে কেবল খাজনা বঙ্ক ক’রে মুরবার জন্তে ; আর যাদের অদ্য-ভক্ষ্য ধমুগুণ, তাদের এখনো মাঝে মাঝে ডাক পাড়া হয় দোকান বন্ধ করে হরতাল করবার জঙ্কে, উপর-ওয়ালাদের কাছে আমাদের পোলিটিক্যাল বঁকা ভঙ্গীটাকে অত্যন্ত তেড়া করে' দেখাবার উদ্দেষ্ঠে । এই কারণেই রায়তের কথাটা মুলতবীই থেকে যায়। আগে পাত হোক্ সিংহাসন, গড়া হোক মুকুট, খাড়া হোক্ রাজদগু. ম্যাঞ্চেষ্টার পরুক কোপনি,—তার পর সময় পাওয়া বাবে রায়তের কথা পাড় যার। অর্থাৎ দেশের পলিটিক্স আগে, দেশের মানুষ পরে। তাই মুরুতেই পলিটিক্সের সাজ ফরমাসের ধুম পড়ে গেছে। স্ববিধা এই যে, মাপ নেবার জন্তে কোনো সজীব মানুষের দন্থকার নেই। অস্ত দেশের মামুখ নিজের দেহের বহর ও আবহাওয়ার প্রতি দৃষ্টি রেখে বায় বার কেটে ছোটে বদলে জুড়ে যে-সাজ বানিয়েছে, ঠিক সেই নমুনাট দরজির দোকানে চালান করলেই হবে। সাজের নামও জানি, একেবারে কেতাবের পাতা থেকে সদ্য মুখস্থ, কেন না আমাদের কারখানা-ঘরে নাম আগে, রূপ পরে। ডিমোক্রেসি, পালেমেন্ট, কানাডা অষ্ট্রেলিয়া দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রতত্র ইত্যাদি ; এর সমস্তই আমরা চোখ বুজে কল্পনা করতে পারি ; কেন না গায়ের মাপ নেবার জন্তে মানুষকে সামনে রাখার কথাই প্রবাসী—শ্রোবণ, ১৩০৩ [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড একেবারেই নেই। এই সুবিধাটুকু নিষ্কণ্টকে ভোগ করবার জন্তেই বলে থাকি, আগে স্বরাজ, তারপরে স্বরাজ যাদের জন্তে। তারা পৃথিবীতে অন্য সব জায়গাতেই দেশের প্রকৃতি, শক্তি ও প্রয়োজনের স্বাভাবিক প্ৰবৰ্ত্তনার আপনিই আপনার স্বরাজ গড়ে তুলেচে, জগতে আমরাই কেবল পঞ্জিকার কোনো-একটি আসন্ন পয়লা জানুয়ারীতে আগে স্বরাজ পান, তার পরে স্বরাজের লোক ডেকে যেমন করে হোক সেটাকে তাদের গায়ে চাপিয়ে দেব। ইতিমধ্যে ম্যালেরিয়া আছে, মারী আছে, দুর্ভিক্ষ আছে, মহাজন আছে, জমিদার আছে, পুলিশের পেয়াদা আছে, গলায় ফল লাগানো মেয়ের বিয়ে, মায়ের শ্রাদ্ধ, সহস্ৰবাহু সমাজের ট্যাক্সে, আং আছে ওকালতীর দ্ৰংষ্ট্রকেরাল সৰ্ব্বস্বলোলুপ আদালত । কিন্তু ভাব বার কথা এই যে, বৰ্ত্তমান কালে একদল জোয়ান মানুষ রারতের দিকে মন দিতে শুরু করেচেন। সব আগে উীর হাতের গুলি পাকচ্চেন। বোঝা যাচ্ছে, তারা বিদেশে কোথাও একট। নজস্ব পেয়েছেন। আমাদের মন যখন অত্যন্ত আড়ম্বরে স্বদেশিক হ’য়ে ওঠে তখনে দেখা যায় সেই আড়ম্বরের সমস্ত মালমসলার গায়ে ছাপ মার গাছে–Made in Europe: য়ুরোপে প্রকৃতিগত ও অবস্থাগঃ কারণের স্বাভাবিক বেগে মানুষ সৌষ্ঠালিজম্, কমু্যনিজমৃ. সিণ্ডিক্যালিজম প্রভৃতি নানা প্রকার সামাজিক পরিবর্তনের পরখ করচে। কিন্তু আমর যখন বলি রায়তের ভালো করব, তখন যুরোপের বাধি বুলি ছাড়া আমাদের মুখে বুলি বেরোয় না। এবার পূর্ববঙ্গে গিয়ে দেখে এলুম, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কুশাকুরের মতে ক্ষণভঙ্গুর সাহিত্য গজিয়ে উঠচে । তার মল ছোটো ছোটো এক-একটি রক্তপাতের ধ্বজ। বলচে পিষে ফেলে, দ’লে’ ফলে ; অর্থাৎ ধরণ নির্জমিদার নিম হাজন হোক। যেন জবরদস্তিত্ব দ্বারা পাপ যায়, যেন অন্ধকারকে লাঠী মারলে সে মরে। এ কেমন, যেন বৌয়ের দল বলচে, শাশুড়িগুলোকে গুও লাগিয়ে গঙ্গাযাত্র করাও তাহ’লেই বধুর নিরাপদ হবে! ভুলে যায় যে, মরা শাশুড়ির ভূত ঘাড়ে চেপে তাদের শাশুড়িতর শাশুড়িতম করে তুলতে দেরী করে না। আমাদের দেশের শাস্ত্রে বলে, বাইরের থেকে আত্মহত্যা করে ম'লেক্ট ভব-বন্ধন ছেদন করা যায় ন—স্বভাবের ভিতর থেকে বন্ধনের মুলচ্ছেদ করতে হয়। যুরোপের স্বভাবটা মীর-মুখে । পাপকে ভিতর থেকে মায়ুতে সময় লাগে—তাদের সে ভর সর না। তার বাইরে থেক্ষে মানুষকে মারে । একদিন ইংরেজের নকল করে আমাদের ছেড়া পলিটিক্স্ নিয়ে, পালামেন্টে রাজনীতির পুতুলখেল খেলুতে বসেছিলেম। তার কারণ, সেদিন পলিটিক্সের আদর্শটাই যুরোপের অন্ত সব কিছুর চেয়ে আমাদের কাছে প্রত্যক্ষগোচর ছিল । তখন যুরোপীয় বে-সাহিত্য আমাদের মন দখল করেচে, তার মধ্যে ম্যাট্রসিনি, গারিবালুডির স্বরটাই ছিল প্রধান। এখন সেখানে নাটো পাল বদল হয়েছে। লঙ্কাকাণ্ডে ছিল রাজধীরের জয়, ছিল দানবেঃ হাত থেকে সীতার মুক্তির কথা। উত্তরকাও আছে দুৰ্জুখের জন্ম রাজার মাথা হেঁট, প্রজার মন জোগাবার তাগিদে রাজরাণীকে বিসর্জন । যুদ্ধের দিনে ছিল রাজার মহিমা, এখন এক প্রজার মহিমা । তখন গান চলছিল বাহিরের বিরুদ্ধে ঘরের জয়—এখনকার গান, ইমারতের বিরুদ্ধে আঙিনার জয় । ইদানিং পশ্চিমে বলশেভিজ (, ফাসিজম প্রভৃতি যে স্য উদ্যোগ দেখা দিয়েছে, আমরা যে তার কার্য্যকারণ, তার আকারপ্রকার স্বম্পষ্ট বুঝি তা নয় ; কেবল মোটের উপর বুঝেছি যে, গুওতপ্লেং আখড়া জমূল। অমুনি আমাদের লকল-নিপুণ মন গুওমিটাকেই সৰ-চেয়ে বড় করে দেখতে বসেচে। বরাহ অবতার পক্ষ-নিমঃ ধরাতলকে দাতের ঠেলার উপরে তুলেছিলেন, এর তুলতে চায় লাষ্ট্র ঠেলায় । একথা ভাব বার অবকাশও নেই, সাহসও নেই