পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

છ%ર স্বতরাং দ্বেষ-হিংসা ভুলে তুমি শান্ত চিত্তে পূজা ক’রে যাও, তোমার পূজায় আমি সদা তুষ্ট।” দেব-প্রকাশ মিলিয়ে গেল ; পূজারীর অজ্ঞান কিন্তু ঘুচল না, বরং বেড়েই গেল। সে লিঙ্গমূৰ্ত্তিতে যেদিকৃটায় হরির প্রকাশ হ’তে দেখেছিল, সেদিকটা থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নেবার জন্যে এক হাতে চোখে আড়াল দিয়ে যে দিকৃটায় আধজটাজুটমান, ফণীবিভূষিত, ডম্বরু-হস্ত বাঘছালবিভূষিত তুষার-শুভ্র মহাদেব-মূৰ্ত্তি প্রকাশ পেয়েছিল সেই দিকৃটায় ঘন ঘন ঘণ্টা নেড়ে পূজা করত, পঞ্চপ্রদীপ ঘুরিয়ে আরতি দিত। কিন্তু হায়, বেচারী ভক্তের সব পূজাই বিফল হ’ত। মনে না ছিল শাস্তি, না ছিল দেবপূজার আনন্দের একটা তৃপ্তি-বোধ । সবাই তার এই অদ্ভুত-রকম পুজা দেখে তাকে চটাবার জন্তে, তাকে দেখলেই "হরি হরি “শ্ৰীবিষ্ণু” নাম উচ্চারণ করত। পূজার সময় বর্জনীয় দেবতার নাম শুনে পাছে পূজা অশুদ্ধ হয়, মনের শুচিত নষ্ট হয়, সেইজন্যে পুজারী বুদ্ধি করে দুই কানে দুটি ছোট্ট ঘটা বেঁধে নিলে। পূজাজর্চনার সময় পাড়ার দুষ্ট লোকেরা যখন পিছনে দাড়িয়ে "হরিনাম ক’রে তার পূজার ব্যাঘাত ঘটাতে আসত তখন সে বার বার নিজের মাথা নাড়া দিত, তাতে ক’রে ছোট ঘণ্টা দুটি টুঙ টুঙ ঠুনঠুন ক’রে বেজে উঠে পূজারীর কানে হরিনামের সাড়া ঢুকৃতে দিত না । তখন মহাদেব ভক্তের অজ্ঞানতা দেখে রাগ ক’রে বললে, “তোর ভক্তি থাকৃলেও এই অন্ধতার জন্তে তুই মূৰ্ত্তি পেলি না। পৃথিবীতে তুই ঘণ্টাকর্ণ বলে চিরটা কাল পূজা পাবি। কিন্তু পূজা শেষ হ’লেই তোর প্রতিমূৰ্ত্তি মুগুরের বাড়িতে চূর্ণ হয়ে যাবে।” ইষ্ট-দেবতার শাপের বরে সেই থেকে পূজারী মানুষ পল্লীর ঘণ্টাকর্ণ দেবতায় পরিণত হয়েছে এই ! হচ্ছে ঘণ্টকর্ণের ইতিহাস । ইনি আবার খোসপাচড়ার দেবতাও বটেন স্বতরাং পল্লীবাসী এর অনুগ্রহ-দৃষ্টিকে খুব ভয়ের চোখেই দেখে থাকে, আর অনুগ্রহ না করবার অনুগ্রহের জন্তেই বৎসরান্তে একবার ক’রে এর পূজা ক’রেই বিসর্জন 6नम्ने ? প্রবাসী—শ্রোবণ, ১৩ee [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড झबनं ঘেটু গাইয়ের দলের মধ্যে একটি বড় ছেলে ছড়ার এক-একটি পদ স্বর করে গেয়ে যাচ্ছিল আর বাকী সাথীর দল প্রত্যেক বারই সমস্বরে ‘বল হরি হরিবোল”—ব’লে তাল দিচ্ছিল। “এলাম রে ভাই গেরস্তর বাড়ী, ঘেটু যায় আজ দেশ ছাড়ি”—ইত্যাদি ব’লে লম্বা ঘেটুর গান শেষ ক’রে তারপর তারা সিধে-সাধবার ছড়া আরম্ভ করলে । “ধান থাকৃতে না দ্যায় ধান, থোস হয় তার থান থান । বড়ি থাকৃতে না দ্যায় বড়ি, খোস হয় তার কড়ি কড়ি । বেগুন থাকৃতে না দ্যায় বেগুণ, ছামো (সামনে) চালে তার ধরূবে আগুন ।”—ইত্যাদি অভিশাপ-পালা শেষ করে আশীৰ্ব্বাদী পালা স্বরু করলে । “যে দ্যায় পাথর পাথর, তার হবে মস্ত গতর। যে দেবে আড়ি আড়ি, ধন হবে তার কঁাড়ি কঁাড়ি । যে দেবে থালা থালা, তার হবে সোনার বালা । যে দেবে বাট বাট, তার হবে সাত ব্যাটা ।” ইত্যাদি আবৃত্তির পর—‘মোষ পড়ল দড়াম দিয়ে। উচ্চারণ করব মাত্র সঙ্গে-সঙ্গে একটি ছেলে জুই হাত জোড় ক’রে উচু দিকে তুলে দড়াম ক’রে মাটির ওপর উপুড় হ’য়ে শুয়ে মোষপড়ার অভিনয় স্বরু কবৃলে—সঙ্গী সার্থীরা সব চেচিয়ে উঠল—“ওগো গিল্লিম, শীগ গীর ক’রে সিধে-পত্তর দিয়ে মোষ তুলিয়ে স্থান গে, অনেক ঘরকে এখন আমাদের সিধে সাধতে যেতে হবে।” রমা হালিমুখে ছেলেদের ভালাভরা চাল, তরতরকারী তেল স্থন প্রভৃতি সিধে দিয়ে তাদের মিষ্টিমুখে বিদেয় ক’রে প্রিয়র হাত ধ’রে ঘরে এসে বসল। - প্রিয় তখন অভিমান-ভরা স্বরে বললে, “কখন থেকে এসে ব’সে আছি, তোমার কিন্তু আর নাগাল পাচ্ছি না। |