পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা ] বেদিয়া Wood: এই হচ্ছে গানের.ভাব। গানের স্বরে গিট্‌কিরী-মূর্ছনার বালাই নেই, একটানা উদাস স্কুরের ভিতরেও একটা নূতনত্ব আছে। প্রিয় এগিয়ে গিয়ে বললে—“হঁ্যা গো, এটা ত এখন ঠিক দুপুর পেরিয়েছে ; এখন ভোরের গান কেন ? একটা অন্য কিছু গাওনা শুনি।” “ওমা, মীমুর মা, আমাদের গান শুনবেন ? এ গান কি ভাল লাগবে আপনার ?” ব'লে তারা দ্বিতীয় গান স্বরু করলে— “লাল রঙের গাইটি আমার কেমনে হেরাইল, ও সে বিহেন বেল গাইটি আমার কেমনে পেলাইল হায় রে হায় কেমনে পেলাইল । রাখাল-বালকের সরল প্রাণের এই মেঠে স্বরের করুণ আক্ষেপ, এলোমেলো দ্বন্দ্ব প্রাণ পেয়ে যেন সজীব হ’য়ে উঠেছে। প্রিয়র এ-স্বরের গান ভালো লাগল। চাবার মেয়েরা উৎসাহ পেয়ে ঢেকির তালে-তালে এই ধরণের গান আরও অনেকগুলি গেয়ে চলল। বন্ধুর এই চাষীদের গান-শোনার আগ্রহ দেখে রমা হেসে বললে— হায় রে হায়, কেমনে হেরাইল— “এই গেয়ে স্থর তোমার এত ভালো লাগল ? ও তার বাছুরটি যে হামলে মরে দুধের বিহনে— আশ্চর্য্যি !" বেদিয়া শ্ৰী জীবনানন্দ দাশগুপ্ত চুলিচালা সব ফেলেছে সে ভেঙে, পিঞ্জর-হারা পাখী ! পিছু-ডাকে ক ভূ আসে মা ফিরিয়া, কে তারে আনিবে ডাকি ? উদাস উধাও হাওয়ার মতন চকিতে যায় সে উড়ে', গলাটি তাহার সেধেছে অবাধ নদী-ঝর্ণার স্বরে, লয় সে বন্দ। রংমহলের, মোতিমহলের বাদী ; ঝাড়ো হাওয়া সে যে, গৃহ-প্রাঙ্গণে কে তারে রাখিবে বাধি’ ! কোন স্বদূরের বেনামী পথের নিশানা নেছে সে চিনে ; ব্যৰ্থ ব্যথিত প্রশস্তর তার চরণ-চিহ্ন বিনে । যুগযুগান্ত কত কাস্তার তার পানে আছে চেয়ে, কবে সে আসিবে উষর ধূসর বালুকা-পথটি বেয়ে তারি প্রতীক্ষণ মেগে’ ব’সে আছে ব্যাকুল বিজন মরু ! দিকে দিকে কত নদী-নিঝর কত গিরিচূড়-তরু ঐ বাঞ্ছিত বন্ধুর তরে আসন রেখেছে পেতে, কালে মৃত্তিক ঝরাকুস্কমের বন্দনা-মালা গেঁথে’ ছড়ায়ে পড়িছে দিকদিগন্তে ক্ষ্যাপী পথিকের লাগি’ ! বাবলা বনের মুছল গন্ধে বন্ধুর দেখা মাগি’ লুটায়ে রয়েছে কোথা সীমাস্তে শরৎ-উষার শ্বাস । ঘুঘু-হরিয়াল-ডাহুক-শালিখ-গাঙচিল-বুনো হাস

  • د سمسماند جیb

নিবিড় কাননে তটিনীর কুলে ডেকে যায় ফিরে ফিরে’ বহু পুরাতন পরিচিত সেই সঙ্গী আসিল কি রে! তারি লাগি ভায় ইন্দ্ৰধনুক নিবিড় মেঘের কূলে, তারি লাগি আসে জোনাকী নামিয়া গিরিকদের মূলে, ঝিনুক মুড়ির অঞ্জলি লয়ে’ কলরব ক’রে ছুটে মাচিয়া আসিছে অগাধ সিন্ধু তারি দুটি করপুটে ! তারি লাগি কোথা বালুপথে দেখা দেয় হীরকের কোণা, . তাহারি লাগিয়া উজানীনদীর ঢেউয়ে ভেসে আসে সোনা ! চকিতে পরশপাথর কুড়ায়ে বালকের মত হেসে' ছুড়ে ফেলে দেয় উদাসী বেদিয়া কোন সে নিরুদ্দেশে ! যত্ব করিয়া পালক কুড়ায়, কাণে গোজে বনফুল, চাহে না রতন-মণি-মঞ্জুষ—হীরে-মাণিকের জুল ; __ —তার চেয়ে ভালে অমল উষার কণক রোদের সাঁথি, তার চেয়ে ভালো আলো ঝলমল শীতল শিশির বীথি, তার চেয়ে ভালো স্বদূর গিরির গোধূলি-রঙীন জটা, তার চেয়ে ভালো বেদিয়া বালার ক্ষিপ্ৰ হাসির ছটা । কি ভাষা বলে সে, কি বাণী জানায়, কিসের বারতা বহে মনে হয় যেন তারি তরে তবু দুটি কাণ পেতে রহে আকাশ বাতাস আলোক আঁধার মৌন স্বপ্ন ভরে, মনে হয় যেন নিখিল বিশ্ব কোল পেতে তার তরে !