পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা ] মৃত্যু-দূত ●"。 তাহার মা তাহাকে থামাইবার চেষ্টা করিতেছেন এই দৃপ্ত দেখিলেও হালি সম্বরণ করা কঠিন হইত। এই ঘর দুইখানি দেখিলে এই ধরণের হাস্যকর ছবি মনে জাগিয়া উঠা বিচিত্র নয়, কিন্তু নববর্ষের উৎসবরক্তনীতে, রাত্রি বারটার অল্প পরেই যে দুইজন লোক সেখানে প্রবেশ করিল তাহাদের মনে কোনো হালকা ভাব জাগিল না। লোক দুইটি এমন জীর্ণ শীর্ণ ও শতছিন্ন বেশ পরিহিত যে, যদি উহাদের মধ্যে একজনের ছিন্ন পরিচ্ছদের উপর একটি কালো অালখাল্লা ও এক হাতে মরিচা-ধর একটি কাস্তে না থাকিত তাহা হইলে তাহাদিগকে নেহাৎ পথের ভিখারী ছাড়া কিছু মনে হইত ন, কারণ, ভিখারীর এই সজ্জ একটু অদ্ভুত বটে। আরো একটি অত্যাশ্চৰ্য্য ব্যাপার এই যে ইহার বন্ধ দরজা উন্ম,ক্ত না করিয়াই যেন দরজা ভেদ করিয়া ভিতরে প্রবেশ করিল। দ্বিতীয় লোকটির সাজসজ্জায় ভয়াবহ কিছু ছিল না, কিন্তু সে যেন স্বচ্ছন্দে চলিতেছিল না, তাহাকে তাহার সঙ্গী হিড় হিড়, করিয়া টানিয়া লইয়া চরিতেছিল ; তাহার অদ্ভুত অস্বাচ্ছন্দ্য গতির জন্য তাহাকে প্রথম জন অপেক্ষাও ভীষণ দেখাইতেছিল। সে হাত-পা-বাধা অবস্থায় ঘরে টুকিতেই তাহার সঙ্গী তাহাকে গভীর ঘৃণাভরে ঠেলিয়: মেঝেতে ফেলিয়া দিল ; সে সেখানে দুর্দশ ও বীভৎসতার গুপের মত পড়িয়া রহিল, তাহার চক্ষু নিদারুণ ক্রোধ জ্বলিতে লাগিল, তাহার মুখাবয়বে একটা উগ্র পৈশাচিকত। ফুটিয়া উঠিল । তাহারা যখন ঘরে প্রবেশ করিল তখন ঘরখানি নির্জন ছিল না । গোল টেবিলের পাশে একটি রুগ্ন শীর্ণ যুবক বসিয়াছিল, তাহার চোখে সরল বালকোচিত দৃষ্টি ; তাহার পাশে একটি প্রৌঢ় মহিলা, কমনীয়-দর্শন, কিন্তু ধৰ্ব্বাকৃতি। যুবকটির কোটের উপর বড় বড় অক্ষরে ‘মুক্তিফৌজ' কথাটি লেখা ছিল। মহিলাটি কালে পোষাক পরিহিত, মুক্তিফৌজের সিসটারদের টুপি-ব্যতীত আর কোনো চিহ্ন তাহার পরিধেয় বস্ত্রে ছিল না। টুপিটি টেবিলের উপর থাকিয় তাহার সহিত ওই সম্প্রদায়ের সন্ধ প্রকাশ করিতেছিল। উভয়েরই মানসিক অবস্থা শোচনীয় ; মহিলাটি নিঃশব্দে কঁাদিতেছিলেন এবং মাঝে মাঝে অত্যন্ত অস্থিরভাবে হস্তস্থিত অশ্রুসিক্ত রুমালে চোখ মুছিতেছিলেন, যেন তাহার অপরিসীম ব্যথা তাহাকে বিশেষ কোনো কৰ্ত্তব্য সম্পাদনে পরামুখ করিয়াছে। যুবকটির চক্ষুও রুদ্ধ বেদনায় রক্তাক্ত ; লজ্জায় সে অন্যের সম্মুখে উচ্ছ্বসিত হইয়া কাদিতে পারিতেছিল না । মাঝে-মাঝে র্তাহারা দুই একটি বাক্য-বিনিময় করিতেছিলেন । র্তাহীদের চিস্ত পাশের ঘরের এক রোগীকে লইয়া—রোগীর জননীকে কন্যার সহিত নির্জনে থাকিবার অবসর দিয়া ক্ষণকালপূৰ্ব্বে রোগীর কক্ষ তাহারা পরিত্যাগ করিয়া আসিয়াছেন। র্তাহারা মুমুম্বুর চিস্তায় এরূপ মগ্ন ছিলেন যে, মনে হইল আগন্তুক দুইজনকে তাহারা লক্ষ্যই করেন নাই। তাহার। নিঃশব্দে আসিয়াছিল ; একজন দরজার চৌকাঠে ংেলা ন দিয়া দাড়াইল, অন্যজন তাহার পদতলে অবশ ভাবে পড়িয়া রহিল । টেবিলের পাশ্বে উপবিষ্ট যুবক ও মহিলাটি গভীর রজনীতে বন্ধদ্বার পথে অভ্যাগত দুইজনকে প্রবেশ করিতে দেখিয়া চমকিয় উঠিভেন, সন্দেহ নাই । হস্তপদ-বদ্ধ আগস্থক মেঝেয় পড়িয়া থাকিয় অবাকবিস্ময়ে দেখিল যে, গৃহস্থিত দুইজনেই থাকিয়া-থাকিয়৷ তাহাদের দিকে দৃষ্টিনিক্ষেপ করিয়া ও যে কারণেই হউক তাহাদের উপস্থিতি টের পাইতেছে না। সে নিজে সবই প্রত্যক্ষ করিতেছিল। এমন কি, সহরের ভিতর দিয়া আসিতে আসিতে সে জীবিত দৃষ্টি লইয়া সহরটিকে যেমন দেখিত সকলই ঠিক তেমনই দেখিয়াছে অথচ পথে কেহ তাহাকে যেন চিনিতে পারে নাই । এ অবস্থাতেও দুষ্টবুদ্ধি বশতঃ সে বর্তমান অদ্ভূত চেহারায় তাহার শক্ৰদের দেখা দিয়া ভtহাদিগকে ভয় দেখাইতে প্রয়াস করিয়াছে, কিন্তু অনেক চেষ্টা করিয়া ৪ তাহাদের নিকট আত্মপ্রকাশ করিতে পারে নাই । এই ঘরে সে এই প্রথম পদার্পণ করিলেও উপবিষ্ট মহিলা ও যুবকটিকে চিনিতে তাহার বিলম্ব হইল না ; সে যে কোথায় আনীত হইয়াছে, সে-বিষয়েও তাহার সন্দেহ মাত্র রহিল না । কাল সমস্ত দিন ধরিয়া যেখানে