পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা ] মৃত্যু-দূত । °C8& মেনে নিয়েছিল। লোকটার জাম সেলাই ক’রে তার কিছু উপকার করাটা ঈডিথের কাছে এত আনন্দদায়ক হয়েছিল যে, আমি তাকে নিজে সাহায্যও করলাম না ওই . কাজে—কারণ আমি ওই নোংরা জামাটার থেকে নানা রকম ছোয়াচে ব্যারামের ভয় করেছিলাম । সে সমস্ত বিপদ । তুচ্ছ ক’রে সমস্ত কাজটা নিজে করতে লাগল। তা ছাড়া সিস্টার ঈডিথ ছিল আমার উপর-ওয়ালা—আমাকে ছোয়াচে ব্যারাম যাতে না ধরে সে-দিকে তার লক্ষ্য ছিল –নিজের অবস্থা যাই হোক না কেন, সমস্ত রাত্রিটা ধ’রে সে সেই জামাটা সেলাই কবৃলে ।” টেবিলের অপর পাশ্বে যুবকটি দয়া ও করুণীর এই ইতিহাস শুনিয়া গভীর পরিতৃপ্তির সহিত হাতদুটি তুলিয়। যুক্ত করে কাহাকে ধেন নমস্কার করিয়া বলিল, “ভগবানকে ধন্যবাদ–সিস্টার ঈডিথের মঙ্গল হোক ৷” সিস্টার মেরীর মুখ অপার্থিব আনন্দে উদ্ভাসিত হইয়া উঠিল। তিনি বলিলেন, “শান্তি শান্তি, ভগবানকে ধন্যবাদ । সিস্টার ঈডিথের মঙ্গল হোক। স্থখে দুঃখে আমরা যেন এই প্রার্থনাই করতে পারি। তাকে ধন্যবাদ। আর সিস্টার ঈঙিথও ধৰ্ম্ম যে, সে তার কৰ্ত্তব্য পালন করেছে – সে সমস্ত রাঞ্জি জেগে সেই বীভৎস কোটের উপর ঝুঁকে প’ড়ে এমন গৌরব ও আনন্দের সঙ্গে তা সেলাই করতে লাগল যেন সে রাজপরিচ্ছদ সেলাই করছে।” সেই দিনের সেই হতভাগ্য অতিথিটি হস্তপদৰদ্ধাবস্থায় ভূমিশয্যায় পড়িয়া থাকিয় এক অদ্ভুত শাস্তি ওঁ সাত্বনা অনুভব করিল। সে কল্পনায়ু দেখিল, একটি সুন্দরী বালিকা নিশীথের গভীর নিস্তব্ধতার মধ্যে একাকী বসিয়া এক দরিদ্র ভিখারীর কদৰ্য্য শতছিন্ন কোট সেলাই করিতেছে। এতাবৎকাল যে বিরক্তি ও হতাশায় তাহার মন পীড়িত হইতেছিল তাহাতে যেন এই চিন্ত শান্তিপ্রলেপের মত কাজ করিল। জর্জট যদি না অমন হাড়িপার। মুখ লইয়া তাহার কাছে নিফল পাষাণের মত দাড়াইয়া থাকিয়া তাহার প্রত্যেক কাজ নিরীক্ষণ করিত তাহা হইলে সে বহুক্ষণ ধরিয়া এই চমৎকার চিত্রটি উপভোগ করিত।

    • ー〉*

সিস্টার মেরী বলিতে লাগিলেন, “ভগবানকে অশেষ ধন্যবাদ যে সিস্টার ঈডিথ সমস্ত রাত্রি জেগে অতিথির জামার বোতাম বসিয়ে, ফুটোতে তালি লাগিয়ে ভোর চারটে পর্য্যন্ত এইভাবে বসে রইল, কোনো দুর্গন্ধের বা ব্যারামের ছোয়াচ লাগার ভয় করলে না ; পরে তার জন্যেও কখনো অমৃতাপও কবুলে না। সেই দারুণ শীতের রাত্রে কনকনে হাওয়ায় ঘরখানি যেন ঠিক বরফের ঘরের মতো ঠাণ্ড বোধ হচ্ছিল—তাতে ভোর পর্য্যন্ত ব’সে থাকার জন্যেও কখনে। তাকে অস্থতাপ করতে দেখিনি । ভগবানের অশেষ করুণা !” যুবকটি বলিল—“শাস্তি শাস্তি ।” সিস্টার-মেরী বলিলেন, “ধখন তার কাজ শেষ হ’ল তখন শীতে তার শরীর যেন জমাট বেঁধে গেছে । আমি বুঝতে পারছিলাম সে বিছানায় অনেকক্ষণ ধ’রে ছটফট আর এপাশ ওপাশ কর্ছিল—কিছুতেই শরীর গরম হচ্ছিল না, তার ঘুমও আসে না। একটু তন্দ্রার ভাব আসার পরই সে উঠে বস্ল দেখে আমি তাকে আরো খানিকক্ষণ ঘুমোবার জন্যে অস্তুরোধ করলাম, বললাম যে, তার ঘুম ভাঙবার আগে অতিথি জেগে উঠলে আমিই তার তত্ত্বাবধান করব । যুবক বলিল, “সিস্টার মেরী, আমি জানি আপনি বরাবরই সিস্টার ঈডিথের শুভাকাঙ্ক্ষী বন্ধু।” সিস্টার মেরীর মুখে একটু শীর্ণ হাসি ফুটিয়া উঠিল, তিনি বলিলেন, “আমি জানি, এটা সিস্টার ঈডিথের কাছে অনেক ত্যাগ-স্বীকার করা। কিন্তু তবু সে আমাকে খুর্দী করবার জন্যে শুতে গেল । সে বেশীক্ষণ মুমোবার স্থযোগ পায়নি। লোকটা সকালে উঠে কফি খাওয়া শেয ক’রে তার কোটটা দেখে আমায় জিজ্ঞেস করলে আমি তার কোটখানা সেলাই করেছি কি না। আমি 'ন' বলতে যে সেলাই করেছে সে তাকে ডেকে দিতে বললে । “তার নেশা তখন কেটে গেছে,সে শাস্ত হ’য়ে ভদ্রভাবে কথাবাৰ্ত্ত বলছিল। আমি জানতাম যে, তার কাছ থেকে ধন্যবাদ পেলে সিসটার ঈডিথ স্বর্থী হবে। তাই আমি তাকে ডেকে দিলাম। যখন সে এল তখন সমস্ত রাত্রি জাগরণের