পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা ] মৃত্যু-দুত V86: বিদ্রোহ সম্পূর্ণ নিরর্থক। কিন্তু সে এই দুৰ্ব্বলতাকে দূর করিতে চেষ্টা করিল না, সে কিছুতেই এই অত্যাচার সহ করিবে না—সে প্রয়োজন হইলে শেষ বিচারের দিন পৰ্য্যন্ত বিদ্রোহ করিবে । সিসটার মেরী যতক্ষণ গত বৎসরের এই ঘটনার কথা বর্ণনা করিতেছিলেন যুবকটি উত্তরোত্তর অধীর হইয়া উঠিতেছিল ; সে আর স্থির থাকিতে পারিল না— লাফাইয়া উঠিয়া বলিল—“সিস্টার মেরী, আপনি এখনো সেই পশুটার নাম করেননি বটে, কিন্তু আমি বুঝতে পারছি সেই লোকটাই ডেভিড হল্ম্।” সিস্টার মেরী মাথ নাড়িয়া সম্মতি জানাইলেন । নিদারুণ হতাশায় দুই হাত প্রসারিত করিয়া যুবক বলিয়া উঠিল, “হা ঈশ্বর।— "সিস্টার মেরী, আপনি কেন তাকে এখানে আনবার জন্তে জেদ করছেন—সেই ঘটনার পরে আপনি তার কোনে উন্নতি দেখেছেন ? মনে হচ্ছে যেন আপনি তাকে এখানে আনিয়ে সিস্টার ঈডিথকে দেখাতে চান যে, ভগবানের কাছে তার প্রার্থনা বিফল হয়েছে। তাকে এত ব্যথা দিচ্ছেন কেন, বুঝতে পারছি না।” সিস্টার মেরী অস্থির হইয় তাহার দিকে চাহিলেন, তাহার চোখে ক্রোধও ফুটিয়া উঠিল—তিনি বলিলেন, —“আমার কথা এখনো শেষ • • • • • • 22 } যুবকটি তাহাকে বাধা দিয়া বলিল, “সিস্টার মেরী, আমরা প্রতিহিংসার বশে যেন কোনো কাজ না ক’রে বসি, এটা আমাদের দেখতে হবে। আমার অন্তরের ইষ্টবুদ্ধি আমাকে বলছে আজ এই মুহূর্তে ডেভিড হলম্কে ডেকে এনে দেখাতে যে, এক পবিত্র মহিমময়ী আত্মা শুধু তারই জন্যে আজ দেহত্যাগ করতে বসেছেন। আমি বুঝতে পারছি, সিসটার মেরী, যে আপনি লোকটাকে বুঝিয়ে দিতে চান যে, সেই রাত্রে তার ছেড়া কোর্টট সেলাই কবৃতে গিয়ে সিস্টার ঈডিথ এক ছোয়াচে ব্যারাম ধরিয়ে আজ মৃত্যুশয্যায় শায়িত। আমিও আপনাকে অনেক বার বলতে শুনেছি যে, সেই রাজির পর একদিনও সিস্টার ঈডিথ স্বস্থ ছিলেন ণী । কিন্তু এর কি কোনো প্রয়োজন আছে ? আমরা যারা সিসটার মেরীর সৎসঙ্গ এতকাল ভোগ করেছি স্বয়ং আজও র্যারা তার সম্মুখে বৰ্ত্তমান—তাদের কি এমন নিষ্ঠুর প্রতিহিংসা নেওয়া উচিত ?” মহিলাটি টেবিলের উপরে কুকিয়া মুখ না তুলিয়াই ধীর শাস্তভাবে বলিলেন, “প্রতিহিংসা ? কোনো লোককে একথা বুঝিয়ে দেওয়া কি প্রতিহিংসা নেওয়া যে, সে এককালে কি অমূল্য সম্পত্তির অধিকারী ছিল—আজ নিজের দোষে তা হারিয়েছে ? মবৃচে-পড়া লোহাকে আগুনের মধ্যে দিয়ে খাটি ক’রে নেওয়াকে কি তুমি প্রতিহিংস মনে কর ?” যুবকটি তীব্র প্রতিবাদ করিয়া বলিল, “আপনি যা বলছেন তা আমি মেনে নিচ্ছি। ডেভিড হলমের বিবেকুের উপর অনুতাপের বোঝা চাপিয়ে আপনি তাকে পরিবর্তিত করতে চান। কিন্তু আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন যে, এটা আমাদেরই গোপন রাগ ও প্রতিহিংসার ফল হ’তে পারে ? সিস্টার মেরী, আমরা কখন কি করি সব সময় ঠিক বুঝে উঠতে পারি না। ভুল করা অসম্ভব নয়।” o সিস্টার মেরীর মুখ বেদনায় পাওর হইয়া গেল । অন্তরের গভীর আত্মত্যাগের প্রেরণায় উদ্ভাসিত শাস্তদুষ্টি লইয়া যুবকটির দিকে তিনি চাহিলেন—তাহার দৃষ্টি যেন বলিতেছিল—আজ রাত্রে আমার নিজের অন্তর আমাকে প্রতারিত করিবে না—আমি নিজের জন্য কিছুই কামনা করি না । যুবক লজ্জিত হইয়া উত্তর দিতে গেল, কিন্তু তাহার মুখে কথা জুটিল না। পরমুহূৰ্বেই সে টেবিলের উপর মাথা রাখিয় দুই হাতে মুখ ঢাকিয়া ফেলিল। তার বহুক্ষণের রুদ্ধ আবেগ ফাটিয়া বাহির হইল—সে কাদিতে লাগিল । মহিলাটি তাঁহাকে বাধা দিলেন না—তিনি নিঃশব্দে প্রার্থনা করিতে লাগিলেন—ভগবান, আজিকার ভয়াবহ রাত্রি শান্তিতে পার করিয়া দাও । আমি তোমার দুৰ্ব্বলতম সন্তান—তোমাকে অতি সামান্তই বুঝি—আমাকে শক্তি দাও যেন আমার বন্ধুদের সাহায্য করিতে পারি। সিস্টার ঈডিথের অমুখের সে-ই যে একমাত্র কারণ,