পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

JNeb* সবুজ শাখা-পত্রসমাচ্ছন্ন বাগানের ভিতর দিয়ে বাড়ীগুলি পিছনে রেখে আমরা ব্যাণ্ডেলের কাছে এসে পড়লাম । প্রখর রোদে তৃষ্ণাৰ্ত্ত হ’য়ে চা পাওয়ার জন্ত মাইল গানেক ক্টাচ রাস্ত দিয়ে ব্যাণ্ডেল ষ্টেশনে গেলাম । রওনা হতে বেল। নটা হ’য়ে গেল। আবার গ্র্যাণ্ডট্রাঙ্ক রোড ধ'রে চললাম। রাস্ত অপেক্ষাকৃত ভাল কিন্তু রোদের তেজে আমাদের বিশেষ কষ্ট হচ্ছিল । মগরা ছাড়াতে প্রায় বারট। বীজ ল । জল খাওয়ার জন্তে আমাদের প্রায়ই এখানে সেখানে মাম্তে হচ্ছিল। এবার অগ্রসর হওয়া কঠিন হ’য়ে উঠল । রাস্তার ধারে একটা বড় আম গাছের ছায়ায় আমরা বিশ্রাম করতে নাম্লাম । আশেপাশের কুঁড়ে থেকে কয়েকটি চাষী সপরিবারে আমাদের ঘিরে দাড়াল। এখনও মনে পড়ে তাদের দেওয়া জল আমরা কত তৃপ্তির সঙ্গে থেয়েছিলাম। মিনিট পনের বিশ্রামের পর আবার রওনা হ’লাম । এবার রাস্ত ক্রমশঃ বেশ ভাল হ’তে আরম্ভ হ’ল । বেলা একটার পর আমরা বৈচিতে মন্মথ কুমার মহাশয়ের ‘গোলাবাড়ীতে খাওয়৷ দাওয়ার জন্য উপস্থিত হ’লাম । এখানে আগেই পবর দেওয়া ছিল । বেলা চারটার সময় চা খাওয়ার পর আমরা রওন। হ’লাম। সবুজ ক্ষেত্রের ভিতর দিয়ে আম কঁঠাল গাছের ছায়ায় ঢাকা লাল রাস্তাটি একে বেকে বৰ্দ্ধমানের দিকে চ’লে গেছে। স্থয্যের তেজ কমে আসাতে আমাদের কষ্ট অনেক কমে গেল । এতক্ষণে সমস্ত দিনের শ্রান্তি লাঘব হ’ল। বাংলা মায়ের স্নিগ্ধ-শু্যামল ছবিগনি আমাদের মনের মধ্যে একটি রঙীন রেখা টেনে দিলে। বন্ধু অশোক উচ্ছসিত হ’য়ে গান গেয়ে উঠল । কিন্তু বেশীক্ষণ এ উচ্ছ্বাস রইল না। কিছু আগেকার ছোট্ট মেঘখানি একটু একটু ক’রে সমস্ত আকাশ ছেয়ে ফেলেছে । চারদিক অন্ধকার ; ঝড় স্বরু হ’ল । বৃষ্টি আসন্ন দেখে গান থামিয়ে আমরা জোরে যেতে লাগ লাম । বড় বড় বৃষ্টির ফোট টুপির পাশ দিয়ে মুখে পড়তে লাগল। আকাশের এই রকম অবস্থার জন্য বৰ্দ্ধমান পৌছানর আশা ত্যাগ ক'রে দূরে ষ্টেশন দেখে সেখানে আশ্রয় নিতে উপস্থিত হ’য়ে দেখলাম সেটি শক্তিগড় ষ্টেশন। আমাদের প্রবাসী-শ্রাবণ, ১৩৩৩ [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড সেখানে পৌছানর সঙ্গে সঙ্গে খুব জোরে বৃষ্টি আরম্ভ হ'ল। রাত কাটাবার জন্য দু’খানা বেঞ্চ দখল ক’রে কম্বল পেতে বিছানা পেতে ফেললাম। চার পাশে সাইকেলের উপর আমাদের ভিঞ্জ পোষাক রাখা হ’ল । রাত ন’টার পর বৃষ্টি থামূলে নিরঙ্ককে খাওয়ার যোগাড়ের জন্য পাঠান হ’ল, বেশী রাত হওয়ায় দোকান বন্ধ হ’য়ে গেছে। কিছু পাওয়া গেল না। হ্যাভারস্যাক থেকে নাসপাতি নিয়ে, আর চিনির সরবত তৈরী ক’রে সে-দিনের মতো খাওয়া শেষ ক’রে ফেললাম । ডায়েরী লেখার পর মশা ও ছারপোকার অল্পগ্রঙ্গে বৃথা ঘুমের চেষ্টা ক'রে বাইরে খোল প্ল্যাটফরমে এসে দাঁড়ালাম। ছিন্ন মেঘের ফকি থেকে পঞ্চমীর চাদের ক্ষীণ জ্যোৎস্ব গাছের ভেজা পাতার উপর প’ড়ে পল্লীমায়ের আর এক শ্ৰী দেখালে । ঠাণ্ডা হাওয়া দিচ্ছিল । কোটটাকে গায়ে টেনে দিয়ে প্ল্যাটফরমে পায়ুচারি ক’রে আমরা কোনোরকমে রাত কাটিয়ে দিলাম। আজ মোট ৬৫ মাইল আসা হ’ল । ૨ ২৩ শে সেপ্টেম্বর বুধবার—তখন আলো-আঁধারের মিলন-মুহূৰ্ত্ত। সদ্যোজাত শিশু-অরুণের যুক্তিম আভা পৃথিবীর কোলে এসে পৌছয় নি। আমরা প্রস্তুত হ’য়ে রাস্তায় এসে দাড়ালাম। লাল রাস্তার দু’পাশের শিশিরে ভেজা সবুজ ঘাসের রেখা যেন রাস্তাটির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আমাদের সঙ্গে চলতে স্বরু করল। কালকের রাতের শ্রান্তি আজ ভোরের হাওয়ায় যেন কোথায় চ’লে গেল, ক্রমশঃ আশে পাশের, গাছে-ঢাকা বিহঙ্গ-নীড়ের মতো স্নিগ্ধ ও শান্তিপূর্ণ গ্রামগুলি ফেলে রেখে আমরা বদ্ধমানের কাছে এসে পড়লাম। এখানে সেখানে বাগানের দেয়ালে কোথাও বা গাছের গায়ে ‘ডিঃ গুপ্ত’, ‘গেলের পাচন' প্রভৃতির বিজ্ঞাপন দেখা যেতে লাগল। ধূমপানরত বৃদ্ধের একবার আমাদের দিকে আগ্রহশূন্ত-দৃষ্টি নিক্ষেপ ক’বে আবার নিজ-নিজ কাজে গভীর মনঃসংযোগ করতে লাগলেন। একটা ছোট পুল পার হয়ে আমরা কার্জন গেটের মধ্য দিয়ে বৰ্দ্ধমান সহরে প্রবেশ করলাম। এক বন্ধুর বাড়ীতে উপস্থিত হ’ম্বে তাকে যথেষ্ট বিস্মিত ক’রে