পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম সংখ্যা } জীবনদোলা ዓoፃ মাচুষটি। গৌরী আজ আর তাহার দিকে কুতুহলী হইয়া তাকাইল না । সে ঘরে ফিরিয়া যাইবার জন্য দরজায় ঢুকিতে যাইতেছে ; হঠাৎ স্থনরিয়া আসিয়া বলিয়া গেল, “ওই যে নিপেন-বাৰু।” গৌরী বুঝিল এ তবে সেই একই মানুষ । তাহার ভয় বাড়িয়া চলিল । মুনরিয়া অকস্মাৎ গৌরীকে প্রণয়তত্ত্ব শিখাইতে লাগিয়া গেল । সে গৌরীকে একলা পাইলেই কোনো না কোনো ছুতা করিয়া নানারকম বক্তৃতা স্বরু করিয়া দিত । সাহেব মেম, বাঙ্গালী ও হিন্দুস্থানী সকল জাতি সম্বন্ধেই তার কিছু কিছু অভিজ্ঞতা ছিল । সেইগুলিকে স্বীয় বুদ্ধি ও রুচির রঙে রঙিাইয়া সে যখন গৌরীকে উপহার দিত, তখন গৌরী বিস্ময়বিস্ফারিত নেত্রে তাহার মুখের দিকে তাকাইয়া সব গলাধঃকরণ করিত বটে ; কিন্তু অনেক সময় বুঝিতে পারিত না সত্য কথা শুনিতেছে কি আজগুবি গল্প শুনিতেছে । সে সহজ চোখে মানুষকে যাহা দেখিতেছে, মানুষ যে তাহার চেয়ে অনেক বেশী রহস্যময় বিকৃতমস্তিষ্ক এবং কখনও বা ভয়ঙ্কর এইরকম একটা ধারণাই স্থনরিয়ার শিক্ষায় তাহার মনে জাগিয়া উঠিতে লাগিল। কিন্তু এই ধারণার উপর বিশ্বাস সে একটানা জীয়াইয়া রাখিতে পারিত না। ( ه لا ) কি একটা যোগ ছিল ; তাই তরঙ্গিণী সকন্যা গঙ্গণসঙ্গম স্বানে যাইবেন ঠিক করিয়াছিলেন । ভোর না হইতে নৌকা বোঝাই করিয়া নানা বিচিত্র রঙের শাড়ীর আঁচল উড়াইয়৷ হিন্দুস্থানী মান্দ্রাজ ও মারাঠি মেয়ের যমুনা বাহিয়া চলিয়াছে। সঙ্গে মাঝি মাল্লা ছাড়া দুই-একটি করিয়া মাত্র পুরুষ। পথেও সাধু সন্ন্যাসী এবং স্নানযাত্রীর ভিড় লাগিয়া গিয়াছে। লোটা ও লম্ব লাঠি লইয়া পুরুষের দল আগে আগে চলিয়াছে, পূজার সরঞ্জাম লইয়া সালঙ্কার মেয়ের পিছন পিছন মন্থরগতিতে চলিয়াছে । যাহাদের পর্দা বেশী তাহারা চলিয়াছে ঘেরাটােপ দেওয়া একা গাড়ীতে। গাড়ীতে জনবহুল্য হওয়ায় ঘেরাটোপের আড়াল হইতে রূপ ও কাসার মল ও চুটকিতে ভূষিত অনেক জোড়া পা বাহির হইয়া আছে। পড়িয়া যাইবার ভয়ে স্বন্দরীদের হাতও বাহিরের খোটার গায়ে দৃঢ়মুষ্টি হইয় আছে দেখা যাইতেছে। একা গাড়ীর ঝমর ঝমর শব্দে পথ মুখরিত , তাহার উপর আছে পাণ্ডাদের চীৎকার। প্রয়াগের পাগু ত আছেই তাহার উপর জুটিয়াছে গয়া কাশী বৃন্দাবনের পাও । কেহ চেচাইতেছে “গঙ্গাবিষ্ণু ছোটেলাল, গয়াজীক পাগুl,” কেহ বা হাকিতেছে “মাধরাম শিউরাম সাঢ়ে সাত ভাই।” যাত্রী গ্রেপ্তার করিবার জন্য সবাই যেন ওৎ পাতিয়া বসিয়া আছে । সঙ্গম হইতে গঙ্গাজল ও গঙ্গামূত্তিক আনিতে হইবে ; তরঙ্গিণী পূজার বাসন-কোশন গুছাইতে ব্যস্ত। গৌরী সাজিয়া গুজিয়া প্রস্তুত হইয়াছে ; বেড়ানো এবং প্রসাধনটাই তাহার মুখ্য উদ্দেশু, স্নানযাত্রাট। একেবারেই গৌণ। বেলা হইয়া গিয়াছে, তার উপর এত লোকের ভিড় বলিয়া সে বরং জেদই ধরিয়াছে যে, আজ স্বান করিবে না। একপাল লোকের সঙ্গে ঠেলাঠেলি করিয়া নদীতে নামিতে তাহার লজ্জা করে । মা বলিলেন, “আচ্ছা বাপু, তুই না হয় নৌকোতেই থাকিস, একটু জল ছিটিয়ে দিলেই হবে ।” ঝি স্থনরিয়া ও ভৈরে। মহারাজ নামক ব্রাহ্মণকে সঙ্গে লইয়া তাহার বাড়ীর কাছের যমুনার ঘাটে উপস্থিত হইলেন নৌকা ভাড়া করিতে। ঘাটের সিড়ির উপর দাড়াইয় কেহ বা ভিজা মাটির উপর লম্বা করিয়া পাতা তক্তার পথ দিয়া চলিতে চলিতে, আরো অনেক যাত্রী মাঝিদের সঙ্গে দর কষাকষি করিতেছিল । নুতন যাত্রীদের কাছে "গঙ্গাজীকে কসম” করিয়াও তিনচারগুণ ভাড়া আদায় করিতে তাহদের কিছুমাত্র সঙ্কোচ দেখা যাইতেছে না। আর-একটি স্থূলকায় বাঙালী গৃহিণী গায়ে এক গ সোনার গহন পরিয়া কপাল ঢাকিয়া চুলে লতাপাত কাটিয়া তাহার উপর অৰ্দ্ধ ঘোমটায়ু মুখখানি ঈষৎ আবৃত্ত করিয়া হাতে তামার ঘটি গামছা ও গরদের শাড়ী লইয় তরঙ্গিণীর পিছনে আসিয়া দাড়াইলেন। র্তাহার সঙ্গে অল্পবয়স্ক দুটি মেয়ে। তরঙ্গিণী মাঝির সঙ্গে রফা করিয় যখন এগারো আনায় একটি নৌকা ঠিক করিলেন তখন