পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ԳՀՆ প্রবাসী-ভাদ্র, OOHO [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড" পিছন হুইতে তিনি বলিলেন, “দিদি, আপনি নূতন মানুষ দেখে ওরা আপনাকে ঠকাচ্ছে । আপনি আমাদের নৌকায় আমুন না ! আমাদের ত সঙ্গে বেশী লোক নেই। দু' আনাতে আমি এই নৌকোথান ঠিক করেছি। আপনার যদি আমার সঙ্গে যেতে কিছু বাধ-বাধ ঠেকে, তাহ’লে না হয় আধাআধি বখরা করা যাবে।” তরঙ্গিণ'র মাঝি গোলমাল করিয়া উঠিল ; কিন্তু তরঙ্গিণী পয়সা বঁাচাইবার লোভে যত না হউক, বিদেশে সঙ্গিনী লাভের আশায় নবাগতার নৌকাতেই উঠিয়া বসিলেন । তাহার দলের ছোট মেয়ে দুটির একটি নিতান্ত বাচ্চা, আরএকটির বছর চৌদ্দ বয়স, বিবাহ হইয়। গিয়াছে। এই পদোন্নতির গৰ্ব্বে ও গৌরবে তাহার মুখখানি বেশ পাকা পাকা, চালচলনেও একটা মুরুবিবয়ানা আছে । বেণীমাধবের ঘাটের কাছে জোড় জোড়া তক্তা পাতিয়া পাণ্ডার কেহ ফুল কেহ গঙ্গাজলমিশ্রিত দুগ্ধ অথবা দুগ্ধমিশ্রিত গঙ্গাজল বেচিতেছে। তাহাদের মাথার ছাউনির উপর সারি সারি নিশান । কেহ বা একটি গোবৎসকে প্রতি পুণ্যার্থীর কাছে বারবার নূতন করিয়া বিক্রয় করিয়া দান করাইতেছেন। মাঝে মাঝে বালির চরে কি নৌকায় কেহ ঠাকুর লইয়া বসিয়া আছে । যাত্রীরা ঠাকুরদের দুই চারি পয়সার পুজা ছুড়িয়া দিয়া এই শ্বে ডাভ জল ও ফুল কিনিতেছে গঙ্গাকে নিবেদন করিবার জন্ত । পাণ্ডার। তাহদের সাত পুরুষের নামধাম আদায় করিতেছে উত্তরাধিকারসূত্রে কে কাহার ন্যায্য সম্পত্তি বুঝিয়া লইবার ইচ্ছায়। তরঙ্গিণী ও,তাহার সঙ্গিনী ঘাটে নামিলেন, তাড়াতাড়ি স্বান সারিয়া লইতে হুইবে । গৌরী বলিল, “মা, আমি আজ নাম্ষ না।” অল্পবয়স্ক বিবাহিত মেয়েটি হাসিয়া বলিল, “কেন ভাই ! তুমি নাইবে না কেন ? তোমার ত আমার মত কোনো গেরে নেই ! আমায় উনি হাড় জালিয়ে তোলেন, বলেন যে, যে-মেয়েমানুষ একঘাট পুরুষের সামনে স্নান করতে পারে তার লোক-দেখানে ঘোমট একটা স্তাকামি । পুরুষ মাহুযে এত কথাও জানে, ভাই יין গৌরী হাবার মত বলিল, “কে ভাই তিনি ?” মেয়েটি হাসিয়া গৌরীর গালে একটা ঠোন দিয়া বলিল, “আহা, রঙ্গ দেখ না ! কে বুঝতে পাৰ্বছ না ? আচ্ছ, আচ্ছ, বুঝবে, দু’দিন বাদেই বুঝবে। তখন আর অন্য কিছু বুঝবার অবসরই পাবে না। সত্যি বলছি ভাই, পুরুষ মানুষের মত এমন মন আমি সাত জন্মে কারুর দেখিনি। সারাক্ষণ ভাবছে আমরা বুঝি ওদের ফেলে পালাতেই ব্যস্ত ।” নিজের স্বামী সম্বন্ধে গল্প করিবার আগ্রহ’ মেয়েটির স্বতই প্রবল হউক, শ্রোতাটি বিশেষ সুবিধার নয় বলিয়া সে গল্প তেমন জমাইতে পারিতেছিল না । মেয়েটি অগত্যা অন্য পথ ধরিল । সে তাহার ভাইএর রূপ গুণ বর্ণনা করিয়৷ গৌরীকে মুগ্ধ করিবার চেষ্টায় মাতিয়া উঠিল। সে বলিল, “তুমি ভাই, ডাক্তার বরেন গাঙ্গুলির ছেলে নৃপেন গাঙ্গুলির নাম শোননি ? আহা, আমায় আর লুকোতে হবে না । দাদা ত তোমার নাম করতে অজ্ঞান। সেই ত আমাকে বললে মাকে সঙ্গে ক’রে তোমাদের এক নৌকোয় নিয়ে গঙ্গা নাইতে আসতে । আমি কি ছাই অতো কিছু জানি ? তাই ভাবি দাদার আমার রোজ রোজ যমুনার ধারে বেড়াবার এত সখ হ’ল কেন ? মাগে, পুরুষমাহুষের পেটে পেটে এতও থাকে । ওদের চিনে ওঠা দায় ।” ۹-خه خ পুরুষমানুষ সম্বন্ধে মেয়েটির নূতন নূতন গবেষণায় গৌরী কিছুমাত্র উৎসাহিত না হইয়া বরং আরোই গম্ভীর হইয়া গেল। সে যেখানে যেদিকেই যায়, সেখানেই এই নৃপেন আসিয়া জোটে কোথা হইতে ? এ ত বড়ই মুস্কিলে পড়া গেল। স্বনরিয়ার শিক্ষায় ও বক্তৃতায় তাহার জাগরণউন্মুখ মন অনেকটা দ্রুত গতিতেই জাগিয়া উঠিতেছিল। অবশু শিক্ষয়িত্রীর পন্থা এবং উপদেশগুলি ঠিক কাব্যগন্ধী ও মার্জিত রুচির পরিচায়ক সব সময় হইত না ; কিন্তু গৌরী তাহ নিজের মনে ভালমন্দ নানাভ্রেণীতে বিভাগ করিয়া তাহার একটা অর্থ করিয়া লইতে অরিম্ভ করিয়াছিল । যে-কোনো নূতন মানুষের সঙ্গে চট করিয়া এবিষয়ে আলাপ করা যে ঠিক নয়, এরকম একুট ধারণা তাহার ছিল । সুতরাং সে চুপ করিয়াই রহিল।