পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূজার শাড়ী ঐ সীতা দেবী অনিল একরকম দৌড়ষ্টতে দৌড়াইতে বাড়ী ফিরিতেছিল। আফিসের বেল ত হইয়াই গিয়াছে, এখন একেবারে এগারেট না বাজিয়া গেলেই সে বঁাচে । অধর তাহার বাল্যের খেলার সার্থী, অতি পুরাতন বন্ধু। হঠাৎ কাল সে কলিকাতায় আসিয়া উপস্থিত হইয়াছে। কাজেই কাল বিকাল হইতে রাত বারোট। পৰ্য্যন্ত তাহার কাছে না কাটাইয়া অনিল কিছুতেই পারে নাই। রাত্রে বাড়ী আসিয়া স্ত্রীর সঙ্গে বেশ একপালা ভালরকম ঝগড়া হইয়া গিয়াছে। সকালে উঠিয়াও দেখা গেল, স্বযমার মুখ ভার। অধরের কাছে আর-একবার যাইবার জন্য অনিলের তখন দুই পা উংস্থক হইয়াছিল, তবু সে দুই মিনিট দাড়াইয়া একটু ইতস্তত: করিল। স্বযমার মুখে ঝড়ের যে-রকম পুৰ্ব্ব লক্ষণ দেখা যাইতেছে, তাহাকে আরো চটান বুদ্ধিমানের কাজ হইবে কি না সন্দেহ। তাহার সঙ্গে এখনি একটা মিটমাট করিয়া ফেলিলে, আখেরে অনিলেরই ভাল হওয়ার কথা। তা না হইলে এই ঝগড়ার রেশ যে কতদিন ধরিয়া চলিবে তাহা ঠিক করিয়া বলা শক্ত। সুষমা মেয়েটির রূপ আছে, গুণেরও অভাব মাই, কিন্তু কি রাগ ! দুই মিনিট এধার ওধার ভাবিয়া অনিল বাহির হইয়াই পড়িল । নিজেকে নিরর্থক সাস্তুন দিতে দিতে চলিল । বিকাল নাগাদ সুষম এসকল ঝগড়া-ঝাটির কথা ভুলিয়াই যাইবে । আর নাও যদি যায়—বাকিট পরিষ্কার করিয়া ভাবিবার চেষ্টা সে ত্যাগ করিল। যাহাই হউক, স্ত্রী রাগ করিবে বলিয়াত আর কোনো আৰ্য্য পুরুষ-মানুষ ঘরে বসিয়া থাকিতে পারে না ? পৌরুষ দেখাইবার মাত্র ঐ একটি ক্ষেত্র তাহাদের বাকী আছে, এটাও ছাড়িলে নিতান্তই পুরুষ মাচুষের খাতা হইতে নাম কাটাইতে হয় । কিন্তু আফিসের বড়-সাহেবটি স্ত্রী নয়,তাহাকে উপেক্ষ করিবার উপায় ছিল না। কাজেই বন্ধুর লোভনীয় সঙ্গ ত্যাগ করিয়াও অনিলকে স্বানাহারের জন্য বাড়ীর দিকে দৌড়াইতে হইল । স্বযমার গাম্ভীৰ্য্য যেন দশ বারো গুণ বাড়িয়া গিয়াছে বলিয়া বোধ হইল। সে অনিলের সঙ্গে কথাই বলিল ন৷ এবং ভাত চাহিবার বহু পূর্বেই এক থালা ভাত বাড়িয়া আসনের সামনে ঝনাং করিয়া আনিয়া রাখিল । স্ত্রীর মুখের পানে তাকাইয়া অনিলের বুকের ভিতরটা যেন মুশ ভাইয় গেল। বড়-সাহেবের টান না থাকিলে সে বাড়ীতেই থাকিয়া যাইত, কিন্তু তাহা করিবার উপায় ছিল না । সেখানে কিরূপ সাদর অভ্যর্থন লাভ করিবে মনে করিয়াই তাহার বুক কঁাপিতেছিল। ভাত ডাল মাখিয়া সে কোনরকমে তাড়াতাড়ি গিলিয়। গিলিয়া থাইতে লাগিল । সুষম রান্নাঘরের দরজায় দাড়াইয়া দেখিতে লাগিল, তাহার আর-কিছু চাই কি না। ঝগড়া-ঝণটি করিলেও স্বামীর খাওয়াদাওয়া ব্যাপারে সে কখনও পান হইতে চূর্ণটুকু খসিতে দিত না । - লীলা এতক্ষণ আপনার পুতুলের রান্না লইয়া ব্যস্ত ছিল । হঠাৎ ছুটিয়া বাহিরে আসিয়া অনিলকে দেখিয়া সে তাহার পিঠের উপর ঝাপাইয়া পড়িল । বাবার গালে গাল ঘষিতে ঘষিতে বলিল, “বাবা, আজ আমার সিস্কের জামা আনবে না ?” “কিসের জামা রে ?” তাড়াতাড়িতে কোনো জামার কথা অনিল মনেই আনিতে পারিল না। লীলা চীৎকার করিয়া বলিল, “এরই মধ্যে ভুলে গেলে, বা রে! পূজোতে আমি নূতন জামা পর্ব না বুঝি ?” “ও তাইত। আজ বিকেলে অফিস থেকে ফিরবার সময় ঠিক তোর ফ্রক নিয়ে আসব,” বলিয়া তাড়াতাড়ি এক গেলাশ জল ঢকু ঢক্‌ করিয়া খাইয়া অনিল