পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ግ88 প্রবাসী—ভাদে, ১৩৩৩ [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড আসন স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি নহে, যে উপযুক্ত হইবে তাহারই প্রাপ্য। যাহা হউক ৬৩২ ঈশান্সে অবুবকর খলীফ নির্বাচিত হইলেন। ইহার দুই বৎসর পরে ৬৩৪ ঈশাব্দে আবুবকরের দেহাস্তের পর, প্রধানেরা ওমরকে (Omar) দ্বিতীয় খলীফ নিৰ্ব্বাচিত করিলেন। ওমরের সময়ে মুসলমান সঙ্ঘ আর কেবল উপাসকদের দল রহিল না, তখন তাহারা পারস্তের ও রুমের(Byzantine)রাজ্যদ্বয় জয় করিয়া একটি অতি বিস্তৃত সাম্রাজ্য স্থাপন করিয়াছে। এখন মুসলমান পতির—অমীর-উল-মওমনীন—সম্মান সামান্ত দলপতির সম্মানের মত নহে, উহা পারস্ত ও রুম দেশের সম্রাটদের মিলিত সন্মানের অপেক্ষা বেশী । তথাপি তাহাঁদের প্রধান খলীফ ওমর, রাজাদের মত ব্যয় করিয়া জাকজমক করিয়া জীবন যাপন করিতেন না । তিনি আপনার ব্যবসার আয় হইতে আপনার ব্যয় বহন করিতেন। মাদুর পাতিয়া বসিয়া, একটা মোটা কম্বলের জামা গায়ে দিয়া বসিয়। রাজকাৰ্য্য করিতেন। একটি গল্প আছে, যে একদিন তিনি আপন দ্বারের দালানে ঐক্কপ হীনবেশে মাছুরে বসিয়া রাজকাৰ্য্য করিতেছিলেন, এমন সময়ে তাহার একটি দাসী তদপেক্ষাও হীনবেশে কোনও কার্ধ্যে যাইতেছিল। ওমরের এক বন্ধু বিদ্রুপ করিয়া বলিলেন, "ঐ দেখ, আমীর-উল-মওমনীনের দাসী কেমন মূল্যবান পরিচ্ছদে ভূষিত হইয়া যাইতেছে।” ওমর অমনি বলিলেন, "তুমি ভুল করিয়াছ বন্ধু, ঐ স্ত্রীলোকটি অমীরউল-মওমনীনের দাসী নহে, ও সামান্ত এক বণিক ওমর fRARSfcRA (Omar-bin-khattab) Mfið 1 ওমর বাণিজ্যে আগে যত্ত লাভ করিত, এখন আর তত পারে না, এই বেগার ঘাড়ে লইয়া আর বাণিজ্যে যথেষ্ট মনোযোগ দিতে পারে না ।” ওমর রাজকোষ হইতে বেতন স্বরূপ কিছুই লইতেন না। আবুবকর ওমরের মত ধনবান ছিলেন না, তিনি সাধারণ কোষ হইতে বেতনস্বরূপ প্রত্যহু আধখানি মেষের মাংস লইতেন । ৬৪৪ ঈশাকে ওমর ঘাতকের ছুরিকাঘাতে * মারা পড়িলেন। তখন মুসলমান-প্রধানের ওসমানকে (Osman) তৃতীয় খলীফ নির্বাচিত করিলেন । ওসমান কোরেশ বংশীয়, অতএব হজরং মহম্মদের জ্ঞাতি-সম্পর্কে ভ্রাতুষ্পুত্র ছিলেন। ইহা ছাড়া, খাদীজাবিবির প্রথম স্বামীর ঔরসে যে চারটি কঙ্কা ছিল, তন্মধ্যে রুকিয়া (Rukiya) ওসমানের সহিত বিবাহিত হইয়াছিল, রুকিয়ার মৃত্যুর পর অন্য কন্যা, কুলস্কমের (Kulsum) সহিত ওসমানের বিবাহ হইয়াছিল। খাদীজা বিবির মৃত্যুর পর মহম্মদ যে দশটি বিবাহ করিয়াছিলেন, তাহার একটি (আয়েশা) অবুবকরের কন্যা অন্যা ( হাফেজ' ) ওমরের কন্যা। খাদীজার গর্ভে জাত মহম্মদের একমাত্র সস্তান ফাতেমা (Fatima) অলীর সপত্নী হইয়াছিলেন। অতএব প্রথম বার জন খলীফের মধ্যে প্রথম দুইজন মহম্মদের শ্বশুর, ও শেষের দুইজন মহম্মদের জামাতা ছিলেন। প্রথম দুই খলীফ যেরূপ নিরপেক্ষ ও নিস্পৃহভাবে রাজ্য শাসন করিয়াছিলেন ওসমান সেরূপ পারেন নাই বা করেন নাই ; তিনি জ্ঞাতি কুটুম্ব ও বন্ধু বান্ধব প্রতিপালক ছিলেন ; স্বয়ং রাজকোষ হইতে বহু ধন লইয়া রাজাদের মত বাস করিতেন, তাহার কুটুম্ব ও বন্ধুরা বড় বড় রাজকাৰ্য্য পাইয়াছিল, ও প্রয়োজনাতিরিক্ত বেতন পাইত, সাধারণ প্রজার প্রতি অত্যাচার করিত । ওসমানের কৰ্ম্মচারীদের অত্যাচারে সাধারণ মুসলমানেরা বিদ্রোহী হইয়া বৃদ্ধ খলীফকে মারিয়া ফেলিয়াছিল। এক কথায় প্রথম দুই খলীফের সময়ে খলীফরা আপনাকে সাধারণ মুসলমানের সমান, অবৈতনিক বা নামমাত্র বেতনভুকু কৰ্ম্মচারী বিবেচনা করিতেন ; ওসমানের সময়ে ইরান ও রুমের (Byzantine) সম্রাটদের অমুকরণে রাজা ও রাজপুরুষ হইয়া বসিলেন। ৬৫৬ ঈশাব্দে ৮২ বৎসর বয়স্ক বৃদ্ধ ওসমানকে অসন্তুষ্ট বিদ্রোহী মুসলমানদের হস্তে মৃত্যুমুখে পড়িতে হইল। উপর উপর দুইজন খলীফকে ঘাতকের হস্তে মরিতে দেখিয়া যখন আর কেহও সম্মানাকাজক্ষী হইল না তখন প্রধানেরা বাধ্য হইয়া অলীর দ্বারস্থ হইলেন । অলী প্রথমে অস্বীকার করিলেন, তিনি কোরাণ-মতে নিরপেক্ষ বিচারের পক্ষপাতী ছিলেন, তিনি ওসমানের আত্মীয় প্রতিপালনের ঘোর বিরোধী ছিলেন, তাহাদের পদচ্যুত করিতে বারবার অঙ্গুরোধ করিয়াছিলেন। যখন সকলে জলীর নিরপেক্ষ বিচার স্বীকার করিতে সন্মত হইল, তখন