পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

* 8や প্রবাসী—ভাদে, OOHO [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড অগ্রজের স্ত্রী, পুত্র, পৌত্র ইত্যাদি পরিবারবর্গ সকলেই ছিলেন ; অর্থাৎ হজরং মহম্মদের বংশে যে কয়টি জীব তখন জীবিত ছিল, সকলেই সেই যাত্রীদলে ছিল । অল-হুসেন কুফাতে আসিতেছেন, সংবাদ পাইয়া ইয়াজীদ কুফা নগরে আপনার পক্ষপাতী এক নূতন শাসনকৰ্ত্তা ও কিছু নূতন সাহসী সৈন্য পাঠাইলেন। নূতন শাসনকৰ্ত্ত কুফাবাসীদের স্পষ্ট কথায় বুঝাইয়া দিলেন যে, “যে কেহ অল-হুসেনের পক্ষাবলম্বন করিয়া অস্ত্র ধারণ করিবে, তাহাকে সবংশে অতি নিৰ্দ্দয়ভাবে বিনাশ করিতে তিনি প্রেরিত হইয়াছেন ; তাহাদের প্রতি কোন প্রকার দয়া বা অনুগ্রহ করা হইবে না, অতএব কুফীবাসীরা সাবধান হউক।” কুফাবাসীরা স্বভাবতঃ অতি চঞ্চলমতি ও তদপেক্ষা বেশী ভীরু । তাহার। ইয়াজীদের ঘোষণা শুনিয়া অত্যস্ত ভীত হইল, ও যদিও তাহারা অল-হুসেনকে সাত আট শত মাইল হইতে ডাকিয়া আনিয়াছিল, তথাপি তিনি আসিলে তাহাকে সাহায্য করিতে একটি লোকও অগ্রসর হইল না। অল-হুসেনের দলে তাহার এক কিশোরবয়স্ক পুত্র অত্যন্ত পীড়িত ছিলেন। তিনি তখন অশ্বপৃষ্ঠে বসিতে পারিতেন না। তাহাকে একথানি খাটে শোয়াইয়া সেই খাটের চারিদিকে দড়ি ও বঁাশ বাধিয়া দোলার মত করিয়া লইয়া যাইতে হইয়াছিল। যথা সময়ে হুসেনের দলে ইফ রাৎ awi (Euphrates} <its ##zati (Karbala) নামক স্থানে পহু ছিলেন। তখন ইয়া জীদ-প্রেরিত দূত সসৈন্যে আসিয়া হুসেনের সহিত সাক্ষাৎ করিলেন ও বলিলেন, “আমার প্রভু খলীফ ইয়াজীদ আপনাকে অভিবাদন করিয়া আমাকে বলিতে বলিয়াছেন যে, যদি আপনি ইয়াজীদকে খলীফ বলিয়া স্বীকার করেন ও শপথ গ্রহণ করেন, তবে আপনাকে ইয়াজীদের সম্মানিত অতিথি রূপে কুফার রাজ-প্রাসাদে রাখা হইবে, ও পরে সসম্মানে দমিশকে লইয়া যাওয়া হইবে । কিন্তু আপনি যদি তাহা স্বীকার না করেন তবে আমাকে প্রাণপণে আপনাকে অগ্রসর হইতে বাধা দিতে আজ্ঞা করিয়াছেন । আমি রাজ-সেবক ও দূত মাত্র; রহুল আল্লার দৌহিত্রকে কটু কথা বলিবার বা র্তাহার পথ রোধ করিবার অপরাধ ক্ষমা করিবেন।” হুসেন ইয়াজীদকে খলীফ বলিয়া গ্রহণ করিতে অস্বীকার করিলেন, অতএব সেনাপতি বাধ্য হইয়া তাহাকে অগ্রসর হইতে বাধা দিলেন। হুসেনের সহিত খাদ্যদ্রব্য যথেষ্ট পরিমাণে ছিল, কিন্তু জল ফুরাইয়াছিল ; তাহার শিবিরে এক বিন্দু জল ছিল না। স্ত্রী, পুরুষ, বালক, বালিকা, সকলেই জলাভাবে মরণাপন্ন হইয়াছিল। দুগ্ধপোষ্য শিশুদের জলাভাবে জিহবা ও ওষ্ঠ শুষ্ক কাষ্ঠবৎ হইয়া গিয়াছিল ; তাহাদের মাতাদের স্তনেও জলাভাবে দুগ্ধ ছিল না ; শরীরের রক্ত শুষ্ক হইয়া গিয়াছিল। শিবিরের সকলের জিহবা ও ওষ্ঠ এমন শুকাইয়াছিল যে, মুখ দিয়া শব্দ বাহির হইতেছিল না । হুসেন বার বার বিপক্ষের সেনাপতির কাছে জল চাহিলেন, কিন্তু একই উত্তর পাইলেন, “ইয়াজীদকে প্রথমে খলীফ বলিয়া স্বীকার করুন, তবে আমরা আপনার সেবা করিব নতুবা সম্মুখে প্রায় দুইশত গজ দূরে নিৰ্ম্মল জলপূর্ণ ইফরাং নদী প্রবাহিত, কিন্তু আমরা প্রাণপণে যুদ্ধ করিয়া আপনাকে নদী-তীরে যাইতে, অথবা এক বিন্দু জল লইতে দিব না।” পর দিবস হুসেনের দলের লোকদের অবস্থা আরও শোচনীয় হইয়া পড়িল। হুসেন আপনার যে অল্প অমুচরগুলি সঙ্গে ছিল তাহাদের অনুরোধ, পরে আজ্ঞ করিয়া বলিলেন, “ইয়াজীদের শক্রতা কেবল আমার সহিত ; অতএব আমাকে সে শত্রুতার ফল ভোগ করিতে দাও, তোমাদের সহিত ইয়াজীদের শক্রতা নাই, তোমরা আমার সহিত কেন কষ্ট পাইতেছ ও প্রাণে মরিতেছ, তোমরা আমার শিবির - ত্যাগ করিয়া আপনার প্রাণ বঁাচাও ” ইয়াজীদও তাহাদের শিবির ত্যাগ করিতে অনুমতি দিয়াছিলেন । কিন্তু সেবকের। সে-কথা শুনিল না ; বলিল, “আপনার সহিত আসিয়াছি এখন আপনার যে গতি আমাদেরও তাহাই ; আপনাকে মৃত্যুমুখে ফেলিয়া আমরা নিজের প্রাণ লইয়া পালাইতে পারিব না, যাইব না, অতএব বৃথা আজ্ঞ করিবেন না।” এই সময়ে হুসেনের এক প্রভূভক্ত অমুচর গলাতে একটি চামড়ার জলপাত্র বাধিয়া, তরবারি হস্তে সহস্ৰ শত্রু ভেদ করিয়া নদীতে ঝাপাইয়া পড়িল, জলপাত্র পূর্ণ করিল, কিন্তু স্বয়ং এক গগুষ জল খাইল না, ভাবিল তাহার