পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম সংখ্যা ] ইহার দুই দিবস পরে অর্থাৎ ২৫শে জুনের গভীর রাত্রে সিরাজ ওঁহীর ধনরত্ন ও মণিমাণিক্য কয়েকটি হস্তীর পৃষ্ঠে বোঝাই দিয়া বেগম লুৎফ-উল্লিস ও শিশু কস্তাকে লইয়া আবৃত গো-শকটে আরোহণ পুৰ্ব্বক গোপনে নগর ত্যাগ করিলেন। তিনি সাধারণ পলাতকের ছদ্মবেশে যাত্র কপ্লিয়াছিলেন। র্তাহার ইচ্ছা ছিল, কোন ক্রমে পাটনায় উপস্থিত হইতে পারিলে সেখান হইতে সৈন্ত সংগ্ৰহ করিয়৷ শত্র পক্ষকে আক্রমণ করিবেন। এই উদ্দেশ্বেই তিনি পাটনা অভিমুখে যাইতে লাগিলেন । দুর্ভাবনা, পথশ্রম ও গ্রীষ্মের প্রখর তাপে তিনি অতিশয় ক্লান্ত হইয়া পড়িলেন। বেগম লুৎফ-উন্নিসা প্রাণপণ যত্নে উহার সেবা করিতে নিরত হইলেন এবং রুমাল দ্বারা ব্যজন করিয়া ঘাম মুছইয়৷ রৌদ্রপীড়িত স্বামীকে স্বস্থ করিবার চেষ্টা করিতে লাগিলেন। ভগবানগোলায় পৌঁছিয়| সিরাজ সপরিবারে নৌকারোহণ করিলেন এবং তথা হইতে রাজমহলের দিকে অগ্রসর হইতে লাগিলেন। কিন্তু রাজমহল হইতে প্রায় দুই ক্রোশ দূরে বহরল নামক স্থানে উহাদের নেীক অচল হইয়া গেল ; কারণ, গঙ্গার অপর পার্থে নাজিরপুরের মোহনার দিকে যাইবার মত পানি তখন পাওয়া গেল না । সিরাজ সপরিবারে তিন দিবস তিন রাত্রি প্রায় সম্পূর্ণ উপবাসে কাটাইয়। বহরলে উপস্থিত হইলেন। ক্ষুধায় কাতর সিরাজ বহরলে অবতরণ করিয়াই নিকটবৰ্ত্তী গ্রামে খাদ্যের সন্ধানে চলিলেন এবং দুর্ভাগ্যবশতঃ দীন শাহ নামক এক পাষণ্ড ফকিরের আস্তানীয় গিয়৷ উপস্থিত হইলেন। তাহার পদে বহুমূল্য জুতা দেখিয়া পাপায়। ফকিরের বিষম সন্দেহ হইল এবং মাঝির নিকট খোজ লইয়া—তিনি কে, তাহ। সে শীঘ্রই জানিয়া ফেলিল। পুরস্কারের লোভে উক্ত পামর গোপনে মীর কাসেমের নিকট নবাবের সংবাদ প্রেরণ করিল। সিরাজ স্ত্রী-কন্ত ও ধন-রত্নসহ বন্দী হইলেন : র্তাহীকে রাজধানীতে ফিরাইয়া আনিয়| বন্দী অবস্থায় রাখা হইল । গিরাজের নিষ্ঠর হত্যাকাণ্ডে অনেকেই মৰ্ম্মাহত হইয়াছিলেন সত্য, কিন্তু কেহই বেগম লুৎফ-উন্নিসার মত শোকে বিহবল হন নাই। ১৭৫৮ খৃঃ অব্দের ডিসেম্বর মাসে মীরজাফর নবাবের অন্তঃপুরচারিণী মহিলাদিগের সহিত উহাকে ও উহার চারি বৎসর বয়স্ক শিশু-কম্ব কে ঢাকায় বন্দী করিয় রাখে। সেইখনেই তাহার সাত বৎসর বন্দী অবস্থায় ছি*েন। সরকার হইতে র্তাহাদিগের জন্ত বৎকিঞ্চিৎ মাসত্বারা নির্দিষ্ট হইয়ালি : কিন্তু তাহাও তাহার নিয়মিতভাবে পাইতেন না। তাঙ্গাদিগের বন্দী জীবনের খাদ্য এবং নিত্য-প্রয়োজনীয় অন্যান্ত দ্রব্যাদির জন্য র্তাহাদিগকে দারুণ কষ্ট পাইতে হইত। মইমুদ্দৌলা মুজাফফার জঙ্গ মোহাম্মদ রেজা খ। ঢাকায় অষ্টিয় তাহাদিগের দুঃখ-কষ্টের অনেক লাঘব করেন। তিনি নিয়মিতভাবে মাসে মাসে র্তাহাদিগের বরাদ্দ টাকা উহাদিগকে পঠাইয় দিতেন। ইহার পর স্বচতুর ইংরাজগণ নিজেদের উদেখা সাধন ও সুনাম রক্ষার জন্ত র্তাহাদিগকে মুক্তি প্রদান পূর্বক পুনরায় মুর্শিদাবাদে *jiं ँङ्गl cनि । ইহার পর অভাগিনী লুৎফ-উল্লিস জীবনের অবশিষ্ট দিনগুলি স্বামীর গৌরবের কথা স্মরণ করিয়া কাটাইয়া দিয়াছিলেন। স্বামীর মৃত্যুর পর অনেকেই উহাকে বিবাহ করিবার প্রস্তাব করিয়াছিলেন, কিন্তু তিনি এক মুহূৰ্ত্তের জন্তও তাঁহাতে কর্ণপাত করেন নাই। একদা মুর্শিদাবাদের জনৈক প্রসিদ্ধ আমির তাহীর পাণিপীড়নে উৎসুক হইয় একান্তু আগ্রহের সহিত প্রস্তাব করিলে তিনি উাহাকে অত্যন্ত বিনীত ভাবেই নিরস্ত করিয়া বলিয়াছিলেন যে, যিনি একদা হস্তীর অধিকারিণী ছিলেন, অভাবে পড়ির অশ্বতর লাভ করিলে তাহার অন্তর তৃপ্ত হইতে পারে कि ? কষ্টিপাথর – বেগম লুৎফ-উগ্লিসা Գg» এইখানেই আমরা তাহার জীবনের বিশেষত্ব দেখিতে পাই। দরিদ্র্য অথবা লাঞ্ছন কোন দিনই উহাকে স্বামী-চিন্তু হইতে বিচলিত করিতে পারে নাই । তিনি যে সিরাজকে কত গভীরভাবে ভালবাসিয়াছিলেন, ইহাই তাহার প্রকৃষ্ট নিদর্শন । মুর্শিদাবাদে মতি-ঝিলের অপর পার্শ্বে অর্থাৎ ভাগিরথীর দক্ষিণ দিকে “খোশবাগ” নামক যে-সমাধি-উদ্যান ছিল, তাহার পর্যবেক্ষণের তার তিনি গ্রহণ করেন। এইখানেই নবাব আলীবর্দী ও র্তাহার পরম স্নেহের দৌহিত্র সিরাজউদৌল। পাশাপাশি সমাহিত হইয়াছিলেন। এই সমাধিক্ষেত্রণ লগ্ন লঙ্গরখানা (অন্নতৃত্রে) ও অতিথি-নিবাস প্রভূতিয় ব্যয়ের জন্ত মাসিক ৩০৫ তিন শত পাঁচ টাকা ধাৰ্য্য ছিল । বেগম লুৎফ-উন্নিসাই তাহ প্রাপ্ত হইতেন। ১৭৬৫ খৃঃ অস্বর ডিসেম্বর মাসে বেগমের মুর্শিদাবাদে পৌঁছিয়া গবর্ণমেণ্টের নিকট একখানি আর্জি পেশ করেন। তাহতে তাহাদিগকে মুক্তি দিবীর জন্ত ইংরাজ সরকারকে অশেষ ধন্যবাদ জানান হয় এবং র্ত হীদের অবশিষ্ট দিনগুলির গ্রাসাচ্ছাদনের জন্য যৎসামাঙ্ক মাসহায়t প্রার্থনা করা হয় । এই আর্জিতে যে-সকল মহিলার শীলমোহর (সহি ) ছিল, তন্মধ্যে নবাব আলীবর্দী খt২ বিধয পত্নী বেগম সারাফ-উননিস এবং বেগম লুৎফ-উন্নিসা ও র্তাহার কস্তার লীল-মোহরই সবিশেষ উল্লেখ্যযাগা। কিন্তু এই দরখাস্তে কোনই ফল হয় নাই । ১৭৮৭ খৃঃ অব্দে বেগম লুৎফ-উল্লিস। বড়লাট বাহাদুরের কাছে আর-একখানি দরখাস্ত পেশ করিয়াছিলেন দেখিতে পাওয়া যায়। ঐ দরখাস্তের অবিকল অনুবাদ নিয়ে লিখিত হইল ঃ– ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলার মৃত্যুর পর হইতে র্তাহার আত্মীয়দিগের বিশেষতঃ আমার অলঙ্কার ও ধনরত্ন সমস্তই লুষ্ঠিত হইয়াছে। আমি এক্ষণে অতিশয় দুঃখ কষ্ট ও নিষ্ঠরতার মধ্যে দিন গুজরান করিতেছি। "আমার এ দুঃখের কাহিনীর পুনরুল্লেখ করিয়া অপরের দয়া আকর্ষণ ও নিজের কষ্টের বুদ্ধি করিতে চাহি না । সেইজন্য আমি অল্প কথায় জানাইতেছি যে, নবাব সিরাজউদ্দৌলার মৃত্যুর পর আমরা মীর মোহাম্মদ জাফর আলী খাঁ কর্তৃক জাহাঙ্গীর নগরে ( ঢাকায় ) নির্বাসিত হইয়l. তথায় বন্দী অবস্থায় বাস করিতেছিলাম এবং ৬•• টাকা হিসাবে মাসহরাও পাইতেছিলাম। তৎপরে কোম্পানী বাহাদুর যখন নিজ হ:স্ত দেশের শাসন-ভার গ্রহণ করিলেন, তখন আমরা জাহাঙ্গীরনগর হইতে দেশে ফিরিয়া আদি। আমীর কন্ঠীর মৃত্যুর পর ঐ ৬• • টাকা পুনরায় বিভক্ত হইয়া যায়। তাঁহাতে আমার চারিটি দৌহিত্রী ••• টাকা পায় আর আমি মাত্র ১•• টাকা প্রাপ্ত হই। আমাৰ আশ্রিত ও ব:ীদিগের অনেকে পুরাতন নবাবে জীবিতকাল হইতেই আমার অধীনে অবস্থান করিতেছে । তাহাদিগকে এক্ষণে বিদায় দিতে আমি অক্ষম। কারণ, আমার মৃত স্বামীর সন্মান ও গৌরব তাঁহাতে নিশ্চয়ই ক্ষুণ্ণ হইবে। তস্বাতীত সমাজে আমাদিগের পদ ও সন্মান বজায় রাথিবীর জন্য কতকগুলি পুরুদ ভূতা বাতাল করাও একান্ত আবখ্যক । কিন্তু আপনাদিগকে জানাইতেছি যে, এইসমস্ত ব্যয়ের জঙ্গ আমাকে কোন জায়গীর প্রদত্ত হয় নাই এবং অন্ত কোনরূপ টাকা দেওয়ার ব্যবস্থাও করা হয় নাই। অধিকন্তু নবাবের মৃত্যুর পরেই আমার যাহা । दिष्ट्र मन्त्रखि छिन, जबड़े अश्नझड श्ब्रांप्छ । यांभांद्र क्रांत्रिf cशैश्छिौद्र মধ্যে দুইটি বিবাহিতা ; তাহাদিগের সস্তান-সন্ততি হইয়াছে। সেই কারণে তাহাদিগের ব্যয় বাড়িয়া গিয়াছে। অপর দুইটি এখনও অনুঢ়া ; তাহাদিগের বিবাহের গুরুভার এখন আমারই উপর রহিয়াছে এবং সেভীর আমাকেই বহন করিতে হইবে । কিন্তু আমার বর্তমান অবস্থায় তাহার বাবস্থা করা সম্পূর্ণ অসম্ভব। কোন রাজা যদি দোষী সাব্যস্ত হন, তবে তাহার পত্নী ও সন্তানসন্ততিগণ কোন অংশেই তাহার জগু