পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ь •а কোনো ভয় জাগিল না ; সে ত তাহারই সঙ্গে মুখামুখি বোঝাপড়া করিতে চায় । সে আবার কাতর ভাবে মা ও বন্ধুদের দিকে চাহিল । বাধা দিতে র্ত্যহাদের মন সরিল না । ঘরের ঠিক মাঝখানে আসিয়া ঈডিথ একটি অন্ধকার আকৃতির অস্পষ্ট আভাস পাইল ; তাহার হস্তস্থিত কাস্তেখানিও তাহার লক্ষ্য এড়াইল না। ডেভিড হলম্ সে নয়। সে কে এতক্ষণে সে তাহা বুঝিল এবং তাহার সহিত, কথা বলিবার জন্য মনস্থির করিল।. তাহাকে আরো কাছে যাইতে হইবে ; তাহার মুখে কাঙালের মত বেদনা-কাতর হাসি ফুটিয়া উঠিল। সে ঈঙ্গিতে তাহাকে রান্নাঘরের অভ্যস্তরে লইয়া যাইতে বলিল । তাহার এই অস্থির-চিত্ততা দেখিয়া তাহার মা এত ব্যথিত হইলেন যে, তাহার দুই চোখ জলে ভরিয়া গেল ! ঈডিথ একটু স্নান হালি হাসিল । তাহার মনে হইল ম' তাহার শৈশবের কথা স্মরণ করিয়া কাদিতেছেন । সে তখন নিতান্ত ছোট ; রান্নাঘরে মা রান্না করিতেন ; সে ষ্টোভের সম্মুখে শান্তভাবে বসিয়৷ থাকি ত ; আগুনের অঁাচে তাহার মুখ রাঙা হইয়া উঠিত । বালিকা বসিয়া বসিয়া স্কুলে এবং বাহিরে নূতন জ্ঞানলব্ধ বিষয়গুলির কথা অনর্গল বকিয়া যাইত। আজ মা তাহার-সেই শিশু-সন্তানকে যেন কোলে পাইয়াছেন কিন্তু মৃত্যুর নিদারুণ শৃষ্ঠতা তাহার মনে হাহাকার তুলিতেছে। মায়ের দুঃখে ঈডিথ দুঃখিত, কিন্তু মা’র কথা বেশী ভাবিবার সময় নাই । জীবনের অতি সামান্য অংশ মাত্র, হয়ত!মুহূৰ্ত্ত কয়েক আর অবশিষ্ট আছে । ইহার মধ্যেই তাহার জীবনের আরব্ধ কৰ্ত্তব্য সমাপ্ত করিতে হইবে— অন্যদিকে মন দিবার তাহার অবসর কোথায় ? রান্নাঘরের সন্নিকটবৰ্ত্তী হইয়া দ্বারপাশ্বে দণ্ডায়মান ছায়ামূৰ্ত্তিকে সে স্পষ্ট দেখিতে পাইল । লোকটির দেহ স্বকৃষ্ণ আচ্ছাদনাৰ্বত, মস্তক ও মুখ টুপি দিয়া ঢাকা ; হাতে একখানি কাস্তে। সিস্টার ঈডিথ, নিঃসংশয়ে বুঝিল সে কে। সে মনে মনে বলিল, “তাই ত, এ যে দেখছি মৃত্যু প্রবাসী- ভাদে, ১৩৩৪ { ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড দূত।” দূত একটু তাড়াতাড়ি আসিয়াছে বলিয়া তাহার মনে হইলেও সে দমিল না । ঈডিথকে নিকটে আনীত হইতে দেখিয় মৃত্তিকাশায়িত হস্তপদবদ্ধ মূর্তিটি আপনাকে সঙ্কুচি গু করিয়া লুপ্ত করিয়া দিতে চাহিল, রোগিনীর দৃষ্টি হইতে সে আত্মরক্ষা করিতে চায় । সে সভয়ে দেখিল, মেয়েটি ঘন ঘন দরজার দিকে চাহিতেছে এবং যেন সে কিছু দেখিয়াছে। ঈডিথ, তাহাকে দেখিতে পাইলে তাহার চরম অবমাননা হইবে। কিন্তু হলমের সৌভাগ্যবশতঃ ঈডিথের দৃষ্টি তাহার দিকে পড়িল না, সে মাত্র জর্জের দিকে এক দৃষ্টে চাহিয়৷ রহিল । হলম দেখিল, মেয়েটি তাহাদের কাছাকাছি আসিয়া ইসারা করিয়া জর্জকে ডাকিল । জর্জ তাহার মুখাবরণ আরো খানিকট। টানিয়া দিয়া জড় প্রস্তর-মূৰ্ত্তির মত তাহার কাছে গেল, তাহার মুখে বিন্দুমাত্র কোনো ভাবের ছায়া ছিল না । ঈডিথ, মৃদু হাসিয় তাহাকে অস্ফুট ভাষায় অভিবাদন করিল। তাহার শঘ্যাপার্শ্বস্থিত জীবিতদের মধ্যে কেহ তাহার কথা শুনিতে পাইল না । সে বলিল, “দেখ, তোমাকে আমার একটুও ভয় হচ্ছে না। আমি স্বেচ্ছায় তোমার সঙ্গে যাব কিন্তু আজ না । আমাকে আরও একদিন সময় দাও । ভগবান ষে কাজের জন্যে আমায় সংসারে পাঠিয়েছিলেন তার আরো খানিকট বাকী আছে ; আমাকে সেট। শেষ করতে দাও।” ডেভিড হল সস্তপণে মাথা তুলিয়। তাহাকে দেখিতে চেষ্টা কfরল ; দেখিল, তাহার অস্তরের শুচিশুভ্রতা তাহার ধ্বংসোন্মুখ দেহকেও একটা অপূৰ্ব্ব অপার্থিব সৌন্দয্যে মণ্ডিত করিয়া তাহাকে মহিয়সী করিয়৷ তুলিয়াছে। সেই অবর্ণনীয় সৌন্দর্য্যের পায়ে মাথা আপনি অবনত হয় ; ডেভিডের কাছে তাহা এমনই লোভনীয় মনে হইল যে, সে অনিমেষ দৃষ্টিতে তাহাকে দেখিতে লাগিল। ঈডিথ জর্জ কে বলিল, “তুমি বোধ হয় আমার কথা শুনতে পাচ্ছ না, আর-একটু কাছে সরে এস ; অন্তের অগোচরে আমি তোমাকে দুচারটে কথা মাত্র বলব।” জর্জ নত হইয় তাহার মুখের কাছে মুখ লইয়া গেল,