পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম পংখ্যা ] এই ব’লে কাগজখানির যে-অংশে কৃষ্ণচন্দ্রের নামটি ছাপা ছিল তা লাল পেনসিল দিয়ে দেগে দিলেন। কৃষ্ণচন্দ্র চুপ ক’রে রইলেন, কোনো কথাই বললেন না। ক’দিন পরেই একট। বন্ধ পেয়ে তিনি বাড়ী গিয়েছেন। বাড়ী হ’তে ফিরবার সময়, তিনি বাড়ীর অভিভাবক তার ছোট ভাইকে জিজ্ঞাসা করলেন,—“বাড়ীতে কি কিছু অভাব-অনটন আছে ?" ভাই বললেন, “না আজকাল আর কোনো বিশেষ অভাব বা কোনো জিনিষের দরকার নেই। একরকম চলে যাচ্ছে।” কৃষ্ণচন্দ্র স্কুলে এসে প্রধান শিক্ষককে বললেন– “আমি বা উীতে জিজ্ঞাসা ক’রে এলাম আজকাল আর আমাদের বেশী টাকার কোনো প্রয়োজন নেই, যা পাচ্ছি তাতেই চলে যাচ্ছে। কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিন, এখন আমার আর মাইনে বাড়িয়ে কাজ নেই ।” প্রধান শিক্ষক মহাশয় অবাক হ’য়ে চেয়ে রইলেন,— একালেও এমন নিলোভ লোক আছে ! ૨ একদিন ক্লষ্ণচন্দ্র একখানি কাপড় কিনতে যশোহরের বাজারে গিয়েছেন । কাপড়ের দোকানগুলি প্রায়ই মাড়োয়ারীদের । তাদের অভ্যাস—কাপড়খনি যত টাকায় বিক্রি করবে প্রথমে চাইবে তার দ্বিগুণ ব৷ দেড় গুণ। যারা এই নিয়ম জানেন, তার সেই মতোই দর ক’রে কাপড় কিনে থাকেন । কৃষ্ণচন্দ্র এনিয়ম একটুও জানতেন না। তিনি একট। দোকানে অনেক কাপড় দেখে নিজের পছন্দ-মতো একখানি ঠিক ক’রে দাম জিজ্ঞাসা করলেন,—“কত দাম লাগবে ?” মাড়োধারী কাপড়খানির কোণে যে দাগ ছিল ত৷ উলটেপালটে দেখে একটু চিন্তা করলে, তার পর বললে— “বাবু আড় হাই রূপেয় পড়বে।” কৃষ্ণচন্দ্র ২০টি টাকা দিয়ে কাপড়খানি তুলে নিলেন । তার পর হন ইন্‌ ক’রে নিজের বাসা বাড়ীর পানে চললেন। মাড়োয়ারী ;অবাক হ’য়ে গেল । এতদিন সে এই ছেলেদের পাত তাড়ি—কবি কৃষ্ণচন্দ্র ۹ ھ سb বাজারে কাপড় বিক্রি করছে কিন্তু এমন খরিদ্ধার সে একটিও দেখেনি যে,দাম চাইবামাত্র আর কোন দর না ক’রে টাকা দিয়ে দেয় ! কাপড়খানির খাটি দাম হ’ল ১০ টাকা, অভ্যাস-মতো ১২ টি টাকা বেশী ক’রেই সে চেয়েছিল। এখন ২॥০ টাকাই দিতে দেখে তার ধৰ্ম্ম-বুদ্ধিতে আঘাত লাগল। ভাবলে এমন সরল ধাৰ্ম্মিক লোককে ঠকান উচিত নয় ! এতে বামচন্দ্রজী রুষ্ট হবেন । অম্নি সে দৌড়ে কৃষ্ণচন্দ্রের পানে গেল। একটু গিয়েই দেখা পেলে । “বাৰু ! বাবু!” কৃষ্ণচন্দ্র থামলেন, জিজ্ঞাসা করলেন,—“কি ব্যাপার ?” মাড়োয়ারী বললে—“ও কাপড়ের দাম আড়াইরূপেয়া নাহি, দেড় রূপেয় । এক রূপেয়া ফেরৎ লেগু ’ “তবে প্রথমে দিলে কেন, নিলেই বা কেন ?” “বাবু, আমাদের বেশী ক’রে দাম চাওয়াই অভ্যাস।” “কী ! তুমি মিথ্যা কথা বল! তোমার কাপড় আমি চাষ্ট্র ন৷ ” এই ব’লেই কাপড়খানা ফেলে দিলেন । তার পর কাপড়, টাকা বিছুই না নিয়ে হন ইন্‌ ক’রে আপন পথে চ’লে গেলেন । মাড়োয়ারী সেইখানেই অবাক হ’য়ে দাড়িয়ে রইল ! \$y কৃষ্ণচন্দ্র যশোহরের বাজারে মাছ কিন্‌তে গিয়েছেন। একখানি কাগজের ঠেঙীয় কতক গুলি খলসে মাছ কিনে পথ-দিয়ে ইটিতে ঠাটতে বাসায় ফিরছেন। তিনি যখন জেলা স্কুলের সম্নে ভোলা পুকুরের ধারে এসে উপস্থিত হলেন তখন কাগজের ঠোঙার মধ্য মাছ গুলি বড়ই ন’ড়ে উঠল । তাই দেখে তার মনে হ’ল—‘এতগুলি মাছ আটকে রেখে বড়ই কষ্ট দিচ্ছি। আমাকে যদি কেউ এমনি ভাবে আটক ক’রে রাখত তবে কতই না কষ্ট বোধ করতাম !” এই ভেবেই তিনি পুকুরের বাধা ঘাটে নেমে মাছগুলিকে জলে ছেড়ে দিয়ে হাস্তে হাসতে বললেন—“যাও, তোমাদের স্বাধীনতা দিলাম।”