পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

o ৫ম সংখ্যা ] অন্তিম ও অলক্ষাস্তিমের বিধিগুলি কতকটা আক্ষিক প্রমাণের সহায়তা লইয়াই হইয়াছে। কিন্তু কোপানিকাসের সময়েও এই দুরূহতা বৰ্ত্তমান ছিল । তিনি যদি প্রত্যক্ষের উপর নির্ভর করিয়াই পৃথিবীর গতি নিৰ্দ্ধারণ করিতেন, তবে পৃথিবীর উপরে অবস্থিত থাকিয়া প্তাহার তাহা করা চলিত না। র্তাহার সৌরজগৎ হইতে সরিয়া স্বতন্ত্র ভাবে দাড়ান আবশ্যক ছিল । কিন্তু তিনি তাহা করেন নাই এবং সেরূপ করা সম্ভবও নহে। তিনি কেবলমাত্র জ্যেতিষ্কমণ্ডলীর গতিবিধির উপর নির্ভর করিয়াই যাহা কিছু কাৰ্য্য নিম্পন্ন করিয়াছেন। অথচ তাহাতে র্তাহার যুক্তি প্রদর্শনে ক্রটি সাধিত হইয়াছে, এরূপ কথা কেহ বলিতে পারিতেছেন না । আমাদেরও সেরূপ সুবিধা আছে । আমরা ধদি কেবল সাক্ষাৎ সম্বন্ধে গুরুত্ব ও শক্তি লইয়াই চর্চা করিতে যাই এবং মূলকণা প্রভৃতি স্বশ্ন হইতে স্বশ্বতর জিনিস অনুসন্ধান করিতে থাকি তবে তাহা সৰ্ব্বদা বিজ্ঞানের বর্তমান সংস্কার যুক্ত বিধির উপর নির্ভর করিয়াই করিতে হইবে। আবহমান সংস্কার-জাত পৃথিবীর নিশ্চলতার উপর নির্ভর করিয়া কোপানিকাসের গবেষণা চালান যেরূপ অসম্ভব, ইহাও তাহাই । তবে আমরা দেখিতে পাই, জগতের শক্তির মধ্যে আমরা ডুবিয়া আছি। আমাদের শরীর গুরুত্বময়। এমতাবস্থায় আমরা শক্তি ও গুরুত্ব সম্বন্ধে যে-তত্ত্ব পাই, তাহা টলেমির সিদ্ধান্তের ন্যায় সম্পূর্ণ আপেক্ষিক (relative)। স্বতরাং এই আপেক্ষিকতা হইতে নিজকে স্বতন্ত্রীকরণ আবস্তক । এই স্বতন্ত্রীকরণ মানসে আমাদের প্রাথমিক জ্ঞানের উপরে দৃষ্টি প্রয়োজন। আমাদের যাবতীয় জ্ঞানের উপরেই ইন্দ্ৰিয়-জ্ঞান প্রতিষ্ঠিত। এমতাবস্থায় আমরা ইতস্তত: যাহা দেখিতে পাই তাহা কি এবং বিজ্ঞান-সন্মত যুক্তিতে তাহার মূলে কি আছে, প্রথমে নিৰ্দ্ধারণ করিতে হুইবে । পক্ষাস্তরে আমরা যাহাকে স্বতঃসিদ্ধ বলি, যাহার প্রমাণের কোন আবশ্বক মনে করি না এবং যাহা প্রমাণ হইতে পারে না বলিয়া স্থির সিদ্ধাস্ত করিয়া বসিয়া আছি , তাহাকে বিশ্লেষণ করিয়া গোড়ার দিকে অগ্রসর হইতে হুইবে । “আমাদের ধরিত্রী সমগ্র বিশ্বের কেন্দ্রে অবস্থিত” ইহা যেরূপ কেবলমাত্র অহংকার-প্রস্থত ; স্বতঃসিদ্ধরূপে আমার ধারণা সমগ্র তত্ত্বের মূলে উপস্থিত হইয়াছে, ইহাও সেই রূপেই অহংজাত। এই অহংপূর্ণ সংস্কার হইতে সম্পূর্ণ মুক্তিলাভ না করিলে মূলতত্বে অবস্থিতি সম্পূর্ণ অসম্ভব। অর্থাৎ অহংকে বলি দিয়া সম্পূর্ণরূপে যুক্তির উপরে গবেষণা-বিধায়না ও উন্মোচন৷ ԵՀծ দাড়াইতে হইবে। অনেক বিষয় আমরা ধারণা করিতে পারি না। পার্থিব সচলতায় সহজে ধারণা আসে না । দিনে পৃথিবীর উপরে দাড়াইয়া আছি, রাত্রে পৃথিবী ঘুরিয়া ধায়। তখনও দেখি আমরা পৃথিবীর নীচে নামিয়া পড়ি নাই । দিনের মতই উপরে দাড়াইয়৷ আছি। নিম্নে বলিয়৷ কোন দিকে :পতন হয় না। এসমস্ত কথা সেকালে মানব-ধারণার অতীত বলয়াই বিবেচিত হইত। এখনও যদি স্বতঃসিদ্ধ (axiom) বিশ্লেষণ করিয়। এরূপ কোন তত্ত্বে উপস্থিত হওয়া যায় যাহা সাধারণ হিসাবে মানব-ধারণার অতীত কিন্তু যাহার যুক্তির মধ্যে কোন অসামঞ্জস্ত বৰ্ত্তমান নাই, তাহা হইলে সে-অবস্থায় কেবল ধারণার বহির্ভূত বলিয় তাহাকে গ্রহণ করিতে কোন আপত্তি নাই । উন্মোচক গবেষণার ধারণা সাধারণ ধারণা হইতে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র ; এই নিমিত্ত যে, কেবলমাত্র গবেষকের মস্তিষ্কে প্রস্থত হইলেই চলিবে তাহা নহে, ইহাকে যেন অপরে গ্রহণ করিতে সমর্থ হয়, তাহার উপযুক্ত করিয়া তোলা আবশ্যক। পরম্পরা-ক্রমে যদি গ্যালিলিও, কেপলার ও নিউটন জন্মগ্রহণ না করিতেন, তবে কোপানিকাসের পক্ষে সাফল্যলাভ স্বদুর-পরাহত হইত। তাহার বহুকাল পূৰ্ব্বে অপর এক মনীষী তাহারই উদ্ভাবিত সত্য মুনিব-জগতের সমক্ষে উপস্থিত করিতে প্রয়াস পাইয়াছিলেন । ইহার নাম আৰ্য্যভট্ট । কিন্তু নিতান্তই দুঃখের বিষয়, গ্রহণের অসমর্থতা-প্রযুক্ত তদীয় চিন্তার ধারাটি পৰ্য্যন্ত বিলুপ্ত হইয়া গিয়াছে। কেন তাহার মনে পার্থিব অচলত সম্বন্ধে সন্দেহ উপস্থিত হইল, কেনই বা তিনি পৃথিবীকে সচলা বলিয়া নিৰ্দ্ধারিত করিলেন, তাহা ংরক্ষিত করাও কেহ আবশ্যক বলিয়া বোধ করেন নাই। তাহার যাহ-কিছু সমস্তই ক্ষণভঙ্গুর দেহের অনুসরণ করিল। তুলনায় পার্থিব আবৰ্ত্তণের ধারণ অপেক্ষা সমগ্র চিন্তাজগতের কেন্দ্রজাত স্বতঃসিদ্ধ-নিচয়ের কুহেলিকা উন্মোচন করিয়া কেন্দ্রোত্তরে উপস্থিতি যে সমধিক আয়াসলভ্য, তদ্বিষয়ে দ্বিধা করার কোন কারণ স্বভাবতঃই থাকিতে পারে না। উন্মোচন ক্রমশঃই জ্ঞানরাজ্যের স্বল্প হইতে স্বল্পতর স্তর আবিষ্কার করিবে । এঅবস্থায় এই স্বতঃসিদ্ধের কুহেলিকজাল ছিন্ন করার নিমিত্ত কত অাৰ্য্যভট্ট যে, মরুপ্রাস্তরস্থিত মরীচিকায় আত্মনিয়োগ করিতেকরিতে শুষ্ক কণ্ঠে জীবন-সংগ্রামের অবসান করিবে, কতকাল পরে যে, গ্যালিলিণ্ড, কেপলার ও নিউটন যুক্ত দেশে পুনরায় দ্বিতীয় কোপানিকাসের জন্মগ্রহণ সম্ভব হইবে, কে জানে ?