পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

*とやり “প্রজ্ঞ-বিরহিত হইয়। বাগিন্দ্রিয় কোন নাম বিজ্ঞাপিত করিতে পারে না ; লোকে বলে, আমার মন অন্যত্র ছিল, আমি এ নাম অবগত হই নাই’ । ইহার পরে এই ভাষাতেই বলা হইয়াছে যে, প্রজ্ঞবিরহিত হইয়। অপরাপর ইন্দ্রিয়গণ ও নিজ নিজ বিষয় জানিতে পারে না। প্রজ্ঞাবিরহিত হইয়া চক্ষু, শ্রোত্র, জিহবা, ইস্ত, শরীর, পদদ্বয়, এই সমুদায় ইন্দ্রিয় রূপ, শব্দ, অল্পরস, কৰ্ম্ম, স্থখ-দুঃখ এবং গতি বিজ্ঞাপিত করিতে পারে না । লোকে বলিয়াই থাকে আমার মন অন্যত্র ছিল, আমি এই রূপ শব্দাদি অবগত হই নাই । সৰ্ব্বশেষে ঋষি বলিতেছেন, “প্রজ্ঞা-বিরহিত হইলে ধী সম্ভব হয় না, জ্ঞাতব্য বিষয়ও জানা যায় না’ ( ৭ )। পূৰ্ব্বে বলা হইয়াছে যে, প্রাণ হইতেই ইন্দ্রিয়-সমূহের উৎপত্তি, ইন্দ্রিয়-সমূহ হইতে ভূতমাত্রার এবং ভূতমাত্র হইতে জগতের উৎপত্তি। এখানে বলা হইতেছে, প্রজ্ঞার সাহায্য ভিন্ন ইন্দ্রিয়-সমূহ রূপ রসাত্মক জগং বিজ্ঞাপিত করিতে পারে না। অর্থাৎ ইন্দ্রিয়-সমূহ যে কেবল প্রাণের উপরই নির্ভর করিতেছে তাঙ্ক নহে, ইহাদিগকে প্রজ্ঞার উপরও নির্ভর করিতে হইতেছে । এই প্রকার ব্যাখ্য। করিয়া ঋষি বুঝাইতে চাহিতেছেন যে, প্রাণ ও প্রজ্ঞা— বিভিন্ন হইয়াও বিভিন্ন নহে ; ইহাদিগের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ রহিয়াছে ; প্রকৃত পক্ষে ইহার দুই নহে—একই । প্রজ্ঞাত্মাকেই জানিতে হইবে ইহার পরে ঋষি বলিতেছেন—“বাক্যকে জানিতে ইচ্ছা করিবে না, বক্তাকেই জানিতে হইবে” । ইহার পরে অনুরূপ ভাষা ব্যবহার করিয়া বলা হইয়াছে —গন্ধ, রূপ, শব্দ, রস, কৰ্ম্ম, মুখ-দুঃখ, গতি, মন এই সমুদায়কে জানিতে ইচ্ছা করিবে না ; ইহাদিগের বিষয়ীকে অর্থাৎ স্ত্রা ভা, রূপবিং, শ্রোত প্রভৃতিকেই জানিতে হইবে । প্রজ্ঞামাত্র ও ভূতমাত্রা ইহার পরে ঋষি বলিতেছেন :–“এই দশটি ভূতমাত্র। (অর্থাৎ রূপ-রসাদি বিষয়) প্রজ্ঞাশিত এবং দশটি প্রজ্ঞামাত্রা (অর্থাৎ চক্ষুরাদি ইন্দ্রিয়) ভূতাশ্রিত। যদি ভুতমাত্র ন৷ থাকিত, প্রজ্ঞামাত্রা থাকিত না এবং যদি প্রজ্ঞামাত্রা না থাকিত ভুতমাত্রা থাকিত না । এতদুভয়ের মধ্যে কেবল মাত্র একটি হইতে কোনরূপই সিদ্ধ হয় না।” ইহার পরই ঋষি বলিতেছেন—“ইহা নানা নহে (অর্থাৎ প্রজ্ঞামাত্র ও ভুতমাত্রা পৃথক নহে)” । ইহার পরে বলা হইয়াছে —“যেমন বক্ষের অর-সমূহে \ প্রবাসী—আশ্বিন, ১৩৩৩ [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড নেমি এবং নাভিতে অর-সমূহ প্রতিষ্ঠিত থাকে, তেমনি ভূতমাত্রা প্রজ্ঞামাত্রাতে এবং প্রজ্ঞামাত্র ভূতমাত্রাতে প্রতিষ্ঠিত থাকে’ (৩৮)। ঋষির বলিবার উদ্দেশ্য এই ;–বিষয় এবং বিষয়ী অচ্ছেদ্য ভাবে সম্পর্কিত। বিষয় ছাড়া বিষয়ী থাকিতে পারে ন এবং বিষয়ী ছাড়াও বিষয় থাকিতে পারে ন} । এক অপরে প্রতিষ্ঠিত। প্রকৃতপক্ষে বিষয় বিষয়ী পৃথক নহে । আত্মাই ব্ৰহ্ম ঋধির শেষ কথা এই :–“এই প্রাণ প্রজ্ঞাত্মা, আনন্দ, অমর ও অমৃত । ইনি সাধু কৰ্ম্ম দ্বারা বৰ্দ্ধিত হয়েন না এবং অসাধু কৰ্ম্মম্বারাও হীন হয়েন না। ইনি যাহাকে উৰ্দ্ধে লইতে চাহেন তাহাকে সাধু কৰ্ম্ম করাইয়া থাকেন আর যাহাকে নিম্নে লইতে চাহেন তাহাকে অসাধু কৰ্ম্ম করাইয়। থাকেন। ইনিই লোকপাল, ইনিই লোকাধিপতি, ইনি সৰ্ব্বেশ্বর । ইনিই আমার আত্মা—এইরূপ জানিবে (৩৮) । এই অধ্যায়ের উপসংহারের প্রাণকে আবার প্রজ্ঞাত্ম। বলিয়। বর্ণনা করা হইল। ইনিই আনন্দ স্বরূপ, অমৃত স্বরূপ ও অজর। এই প্রাণ নিত্য পরিপূর্ণ, ইহা বুঝাইবার জন্য বলা হইল যে, সাধু বা অসাধু কাৰ্য্য দ্বারা ইহার হ্রাসবৃদ্ধি হয় না। এখন প্রশ্ন –পাপপুণ্য করে কে ?—ইহার উত্তর এই—প্রাণ ইন্দ্রিয়-সমূহের অন্ত ভূত হইলেও ইহার শ্ৰেষ্ঠত্ব আছে। এই প্রাণ হইতেই ইন্দ্রিয়-সমূহ উৎপন্ন হইয়াছে। প্রাণই ইন্দ্রিয়-সমূহের কৰ্ত্ত, ইন্দ্রিয়বিশিষ্ট জীবের কৰ্ত্ত। ইনিই ইন্দ্রিয়বিশিষ্ট জীবকে নিয়মিত করিতেছেন এবং বিশ্বজগৎকেও নিয়মিত করিতেছেন । বিশ্বজগং প্রাণ হইতে উদ্ভূত এবং প্রাণেই প্রতিষ্ঠিত। এইজন্যই বলা হইয়াছে, “ইনি লোকপাল, লোকাধিপতি এবং সৰ্ব্বেশ্বর”। এই সঙ্গে সঙ্গে বলা হইয়াছে, ইনি আমার আত্মা । সংক্ষেপে বলা যাইতে পারে— আত্মাই ব্রহ্ম ঐতরেয় আরণ্যকের নিম্নতম স্তরে প্রাণকে ব্রহ্ম বলা হইয়াছে। ইহার শেষ সিদ্ধাস্ত প্রজ্ঞানরুপী আত্মাই ব্রহ্ম। এস্থলে প্রাণকে একবারেই অগ্রাহ করা হইল। কৌষীতকি উপনিষদে প্রাণকে অগ্রাহ করা হয় নাই। ঋষি নানা উপায়ে প্রমাণ করিতে চেষ্টা করিয়াছেন যে, প্রাণই প্রজ্ঞ এবং প্রজ্ঞাই প্রাণ। তাঁহার মতে প্রাণরূপী প্রজ্ঞ। কিংবা প্রজ্ঞানরূপী প্রাণই আত্মা এবং এই আত্মাই ব্রহ্ম ।