পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

و ۹ مت প্রবাসী –আশ্বিন, ১৩৩৩ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড সরাইতে ও তাহার গহন ময়নাকে পরাইতে বাধা দিতে কি রকম উদগ্রীব হইয়া উঠিয়াছিল। সে সেদিন যাহা কিছু করিতে যাইতেছিল, তাহাতেই লোকে বাধ৷ দিতেছিল। ছেলেবেলাকার কথা দুই দিনেই সে ভুলিয়া গিয়াছিল ; কিন্তু আজ নানা কথার স্রোতে তাহাও তাহার মনে পড়িয়া গেল। কেন এমন হইয়াছিল ? যদি ভাল কিছু হইত মা কি তাহা হইলে এমন করিয়া গোপন করিতে ব্যস্ত হইয়া উঠিতেন ; নিশ্চয় কোনো অমঙ্গল তাহার জীবনে লুকাইয়া আছে, যাহা নিজে সে আজিও জানিতে পারে নাই। ছাদে বসিয়া আকাশ-পাতাল ভাবিতে ভাবিতে গৌরী কখন ঘুমাইয় পড়িল । রাত্রে যখন হরিকেশব বাড়ী ফিরিলেন তখন তরঙ্গিণী অশ্রশ্লাবিতমুখে ঘরে বসিয়া । বহুকাল পরে তরঙ্গিণীকে আবার এমন শোকাকুল দেখিয়া হরিকেশব ভীত হইয়। উঠিলেন, সভয়ে প্রশ্ন করিলেন, “কি হ'ল আবার ? গৌরীর কিছু অমুখ-বিসুখ করেছে নাকি ?” তরঙ্গিণী দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া বলিলেন, “অমুখ করেনি, তার বাড়া। মেয়েটা কি-সব ছাই-ভস্ম অমিয় জিজ্ঞেস করছে, আমি কি করুব বল না! আমার যে মাথা কুটে মরুতে ইচ্ছে করছে। মেয়ের মাথায় এসব কে ঢোকালে কে জানে ?” ( २२ ) প্রথম শোকের আঘাত পাইয়া হরিকেশব তাহার হাত হইতে পলাইতে চাহিয়াছিলেন, শুধু যে কন্যাকে বাচাইবার জম্বাই তাহা নহে; নিজেকেও বাঁচাইবার প্রয়োজন ছিল। ভিনি জানিতেন, সংসারের ভিতর থাকিতে হইলে এখন ংসারের সহিত র্তাহার যে-সংগ্রাম বধিবে, বেদনাক্লিষ্ট হৃদয়ে তাহার সে-সংগ্রামে দাড়াইয়া থাকিবার শক্তি নাই । কিন্তু সময়ের প্রলেপে ক্ষতের জালা জুড়াইয়। উঠার সঙ্গে সঙ্গে তাহার আজন্মের পৌরুষশক্তি আবার গঞ্জিয়৷ উঠিতেছে। সংগ্রাম হইতে দূরে সরিয়া দাড়াইয়া মানুষ যে জয়ী হইতে পারে না, এমন-কি প্রকৃত শক্তিও সঞ্চয় করিতে পারে না তাহা তিনি চিরকালই বুঝিতেন, আজ আবার নূতন করিয়! বুঝিবার সময় আসিল । গৌরীর মনে যে-প্রশ্ন জাগিবে এবং সমাজের যত নিভৃত কোণেই আশ্রয় লওয়া যাক না, সমাজ যে আপনার আচার-ব্যবহার ক্রিয়াকলাপে গৌরীর চক্ষু ফুটাইয়া তুলিবে, গৌরী বড় হইয়া উঠিবার সঙ্গে সঙ্গেই এই ভাবনা হরিকেশবকে পাইয়া বসিয়াছিল। তরঙ্গিণীর মতন তিনি ভুলিয়া নিশ্চিন্ত হইয়া ছিলেন না । গৌরীর আঘাত পাইবার দিন আগাইয়া আসিতেছে, ইহা তিনি অনুভব করিতেছিলেন ; তবে সে-আঘাতটা বাহিরের সমাজের নিৰ্ম্মমতার জালা শুদ্ধ বহন করিয়া আনিবে না এই ছিল তাহার পরম সাত্বন।। তরঙ্গিণীর নিকট সকল কথা শুনিয়। হরিকেশব সম্বেহে তাহাকে শাস্ত করিয়া বলিলেন, “এ যে আসবে সে ত জানা কথা, তরু । তার জন্যে কেঁদে কোনো ফল আছে কি ? আসল আঘাতটা যখন বহন করতে পেরেছ তখন তার এ ক্ষুদ্র অংশটুকু দেখে ভয়ে পেছোলে চলবে কেন ? গৌরী বড় হচ্ছে, সংসার-সমাজের একেবারে বাহিরেও এসে পড়েনি, তার উপর তার নিজের স্মৃতিতেই অনেক ঘটনা জেগে উঠে তাকে ভাবিয়ে তুলছে ; কাজেই ওকথা তার কাছ থেকে একেবারে চাপা দিয়ে দিতে ত তুমি পারবে না।” তরঙ্গিণী তবু সজল চক্ষে স্বামীর মুখের দিকে চাহিয়৷ বলিলেন, “কিন্তু ওই সৰ্ব্বনেশে কথাগুলো মেয়েটার মুখের ওপর আমি কি ক'রে বলব ?” হরিকেশব বলিলেন, “তুমি না পার অগত্য। আমাকেই বলতে হবে। আমারই -কাছে পাঠিয়ে দিও তাকে । যতই নিষ্ঠুর হোক, এ সভ্য কথাটা আমাকেই তাকে । শোনাতে হবে । তুমি ত জান,আর বেশী দিন বাইরে বাইরে থাকা আমার হবেন । আমার মেয়াদ ফুরিয়ে এসেছে, ইচ্ছে করলে অবশ্ন আর কিছুদিন পালিয়ে বেড়াতে পারতাম, কিন্তু তা করলে বুদ্ধির কাজ করা হবে মনে হচ্ছে না। আমি গৌরীকে এই অল্পদিনেই যেটুকু গ’ড়ে তুলেছি, তাতে আমার ভরসা হয় যে, সকল কথা তাকে বুঝিয়ে বললে আমি তাকে যা বোঝাতে চাই তা সে বুঝবে। দেশে ফিরে যাবার আগে গৌরীকে এখান থেকেই আমি তৈরী করে নিয়ে যেতে চাই, যাতে নিজের মঙ্গলের জন্ত আমার পাশে দাড়িয়ে সে লড়তে পারে আর