পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bbre প্ৰৰাণী-জাখিন, ১৩৩e [२७° चीन, »ब ५७ হরিকেশব গৌরীর মাথায় হাত দিয়া বলিলেন, “কষ্ট হ’লেও বলতে হবে, মা। একথা পরে বলবার আগে আমারই তোমায় বুঝিয়ে দিতে হবে। যার সঙ্গে মামুষের বিয়ে হয় সে যখন পৃথিবী ছেড়ে চলে যায় তখন সে বিয়ের সবই শেষ হ’য়ে যায় । তোমাকে নিয়ে আমরা যে বিয়ের খেলা খেলেছিলাম ভগবান তা ভেঙে দিয়েছেন। এখন প্ত আর তার কোনো অর্থ নেই।” কথাকয়ট বলিয়া হরিকেশব গৌরীর মুখের দিকে তাকাইতে পারিতেছিলেন না। র্তাহার প্রশাস্ত গম্ভীর মুখ বেদনায় ও হৃদয়াবেগে পীড়িত ও ক্লিষ্ট হইয়া অশ্রধারায় ধৌত হইয়া যাইতেছিল । গৌরী পাছে দেখিয়া ফেলে তাই মুখটা যথাসম্ভব নীচু করিয়া তিনি যেন কোথায় লুকাইতে চাহিতেছিলেন। পিতার প্রসন্ন মুখের এই সকরুণ ছবি কিন্তু গৌরীর চোখ এড়াইল না। সে আর সকল কথা ভুলিয়া পিতার দুঃখে আকুল হইয়া দুই হাতে তাহার গলা জড়াইয়া ধরিয়া কাদিয়া তাহার বুক ভাসাইয়। দিল । থাকিয়া থাকিয়া ছোট একখানি হাত দিয়া পিতার পিঠে সস্নেহে হাত বুলাইয়া ফুপিয়া ফুপিয়া কেবলই সে যলিতেছিল, “বাধা গো, লক্ষ্মীটি, তুমি অমন কোরো না, চুপ কর। আমি আর কথখনে ওসব ছাইভস্ম পরতে চাইব না।" গৌরীর কথায় হরিকেশবের চক্ষে অশ্রীর বাণ বেন উথলিয়া উঠিল। বৃদ্ধের বহুকালের রুদ্ধ বেদনার অশ্রু অবুঝ শিশুর না-বোঝা ব্যথার অশ্রীর সহিত মিলিয়। ঝরিতে লাগিল । রহস্ত যতদিন ঢাকা থাকে ততদিন তাহার না-দেখা ন-জানা মূৰ্ত্তি মানুষের মনে ভয় বিস্ময় কৌতুহলের বন্ধ তুলি য়। তাহাকে অস্থির চঞ্চল করিয়া তোলে ; মানুষ শান্তি পায় না, কেবলি গোপনকে প্রকাশ করিবার চেষ্টায় ঘুরিয়া মরে . কিন্তু যে-মুহূৰ্ত্তে রহস্ত প্রকাশ হইয় পড়ে তখনই সে যত বড় আঘাত লইয়াই আস্বক না কেন, অশাস্তির সেই দুরন্ত তাড়না থামিয়া যায়। নিশ্চয়তা মানুষকে একটা স্থিরতার ভিত্তি আনিয়া দেয়, আর ঘুরিয়া भब्रिहउ झग्न नां । গৌরী যখন আপনার ভাগ্যলিপি বুঝিল, তখন بیت متضم= অস্থির হইয়া কাদিল—সে আপনার শোকে নয়, পিতার ব্যথার শোকে । জানার সঙ্গে-সঙ্গেই তাহার চিন্তা-তরঙ্গে আকুল মন অনেকখানি শান্ত হইয়া গেল। তাহাকে কি-একট রহস্তে ঘিরিয়া আছে এই ভাবনায় তাহার ক্ষুদ্র দেহ-মন ভাঙিয়া পড়িতেছিল ; কিন্তু সে রহস্য যে কি জানিতে পারিয়া আঘাত ত তাহাকে তেমন করিয়া স্পর্শ করিতে পারিল না। একে অতীতের অদেখা মৃত্যু, তাহাতে মানুষটি অপরিচিত-প্রায়, গৌরীর হৃদয়-তন্ত্রীতে ব্যথার আঘাত পৌছিবে কোন পথ দিয়া ? মৃত্যু তাহাঙ্কে কাদাইতে পারিল না। কিন্তু বাঙালীর মেয়ে সে আপনার বঞ্চিত জীবনের কথা যতটুকু বুঝিল তাহাতেই নিরানন্দের স্নান ছায়ায় তাহার ফুলের মত মুখখানি অন্ধকার হইয়া গেল। অজানা সেই মানুষের মৃত্যু তাহার কাছে যতই অর্থহীন হোক পৃথিবীর কাছে তাহার বহু অধিকার যে সেই মাচুষটিই হরণ করিয়া লইয়া গিয়াছে হিন্দুর মেয়ের মনে সেকথা ধরা পড়লিই । গৌরী চোখের জল মুছিয়া পিতার হাত ধরিয়া স্তব্ধ হইয়া বসিয়া রহিল । তরঙ্গিণী সংসারের কাজের ছলে একবার সেইদিকে আসিয়া পড়িয়া স্বামী ও কন্যার মুখ দেখিয়া চোখে অচল চাপা দিয়া ছুটিয়া গিয়া ঘরের মেঝেতে লুটাইয়া পড়িলেন । হাস্যচঞ্চল আদরিণী গৌরীর এই অশ্রমলিন অকালগম্ভীর মুখের ছবি একটা জমাট কঠিন কালো ছায়ার মত র্তাহার সমস্ত বুকটা অন্ধকার ও ভারী করিয়া তুলিয়াছিল, মনে হইল গৌরীর মুখের হাসির সঙ্গে যেন বিশ্বের হাসি আলোও কে আজ নিঃশেষে মুছিয়া লইয়া গিয়াছে। বর্ষার মেঘে জোড়া ধূমল আকাশ সমস্ত পৃথিবীর উপর শোকাচ্ছন্ন সজল নয়নে চাহিয়া আছে ; সে চোখে আলো নাই, দৃষ্টি নাই, আছে শুধু দিগন্তজোড়া বিরাট একটা শূন্ততা । স্বষ্টি তাহার বিষঃ ছায়ার অন্তরালে যেমন করিয়া লুপ্ত হইয়া গিয়াছে, তেমূনি করিয়া জীবন-জোড়া কুয়াশার ঘন অন্ধকারেই হয়ত ছোট এই মেয়েটির ভবিষ্যতের সকল হাসি ডুবিয়া যাইবে ; কে জানে ? তরঙ্গিণীর অস্তরে ভরাবর্ধার যে আকুল উচ্ছ্বাস গুমরিয়া গুমরিয়া প্রতি মূহুর্ভে ফাটিয়া পড়িতে চাহিতেছিল তাহাকে তিনি রোধ করিতে পারিতেছিলেন না ।