পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

హిe 8 ংশ যদি তাহার ক্রটতে লুপ্ত হইয়া যায়, তাহা হইলে নরকে যাওয়াই ত তাহার উচিত ? আজ সে একরকম মনস্থির করিয়াই বসিয়া ছিল। সে স্বামীকে আবার বিবাহ করিতে অনুরোধ করিবে । বুকের ভিতর তাহার যেন রক্তপাত হইতেছিল, তবু সে আপনার সংকল্প ছাড়িল না। তাই না খাইয়া সে আজ স্বামীর জন্য বসিয়াছিল। এক-একটা মিনিট যেন একএকটা ঘণ্টার মত দীর্ঘ মনে হইতেছিল, ঘড়ির কাটাও যেন নড়িতে চায় না। দেবেন্দ্র সচরাচর দেরিই করিতেন, আজ যেন তাহার দেরি করার ঘট আরো বাড়িয়া গিয়াছিল। ইন্দির রোজ সকালেই স্বান করিত, কিন্তু আজ এতক্ষণ না-থাইয়া বসিয়া থাকিয় তাহার অসহ গরম বোধ হইতে লাগিল। আর-একবার স্নান করিবে বলিরা সে আস্তে আস্তে সিড়ি দিয়া নামিতে লাগিল। তাহার খাস দাসী কদম ছুটিয়া আসিয়া বলিল “ম, এই ভয়ানক রোদুরে কোথায় যাচ্ছেন ?” ইন্দির হাসিয়া বলিল, “গরমের জন্যেই যাচ্ছি, আরএকবার একটা ডুব দিয়ে আসি।” রৌত্র তখন সত্যই প্রচণ্ড হইয়। উঠিয়াছিল, কিন্তু হাওয়াও বেশ খানিকটা ছিল। ইন্দির ঘাটের সিড়ির উপর বসিয়া বসিয়া এই জলকণাস্পৃষ্ট ঝিবুঝিরে হাওয়াটুকু উপভোগ করিতে লাগিল। জলের ঘন নীল রংটা যেন তাহার বুকের জালা খানিকটা জুড়াইয়া দিল । কতক্ষণ যে সে ঘাটের সিড়িতে বসিয়াছিল, তাহার ঠিকানা নাই। হঠাৎ লীলার ডাক কানে আসিয়া তাহার ঘোর ছুটাইয়া দিল। তাড়াতাড়ি উঠিয়া পড়িয়া জিজ্ঞাসা করিল, "লীলা, তোমার কাক এসেছেন নাকি ?”

  • না গো না, এখনও আসেননি। সেই দুঃখে রোদে বসে বসে তুমি যেন জর কোরোনা।”

ইন্দির হাসিয়া বলিল, “রোদে আর কই বসে আছি ? আচ্ছা, তোমার যখন এত ভাবনা, তখন আর দেরি করব না। মাধীকে একটা শাড়ী দিয়ে যেতে বল ত ।” লীলা চলিয়া গেল । কয়েক মিনিট পরেই মাধী প্রবাসী—আশ্বিন, ১৩৩ [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড একখানা শুাওলা রংএর ঢাকাই শাড়ী, লাল ডোরকাটা টার্কিশ তোয়ালে, রূপার সাবান-দানিতে সাবান আনিয়া উপস্থিত করিল। ইন্দির একটা ডুব দিয়া, মাথা । গা মুছিয়া, কাপড় ছাড়িয়া বাড়ী ফিরিয়া চলিল । ঘরে ঢুকিতে যাইতেছে এমন সময় সিঁড়িতে শুনিতে পাইল তার স্বামীর পায়ের শব্দ। সিড়ির মাথার কাছে আসিয়া ইন্দির উকি মারিয়া দেখিল, যদিই মুখখান একটু দেখা যায়। তাহার লঘু পদধ্বনি শুনিতে পাইবার কথা নয়, তবু দেবেন্দ্রও কেন জানি না ঠিক সেই সময় উপর দিকে তাকাইয়া দেখিলেন। দুইজনে চোখাচোখি হইতেই আনন্দের হাসিতে দুজনের মুখই ভরিয়া গেল । দেবেন্দ্র দুই তিন লাফে বাকি সিড়ি ক’টা পার হইয়া আসিয়া পত্নীর দুই হাত ধরিয়া জিজ্ঞাস করিলেন, “তোমাকে কিসের মত দেখাচ্ছিল জান ?” ইন্দির হাসিয়া, স্বামীর বুকের কাছে একটুখানি সরিয়া আসিয়া বলিল, “কি করে জানব, আমি ত আর নিজেকে দেখতে পাইনি ?” "মনে হচ্ছিল যেন নন্দন-কাননের কোন অদৃপ্ত গাছ থেকে সবুজ পাতায় ঘেরা একটি শাদা গোলাপ শুন্তে দোল খাচ্ছে।” “যাও, যাও, বুড়ে বয়সে আর অত কবিত্বে কাজ নেই,” বলিয়া ইন্দিরা দেবেন্দ্রের হাত ছাড়াইয়া ঘরের ভিত্তর ছুটিয়া পলাইল। আনন্দ আর বিষাদের ঢেউ যেন একই সঙ্গে তাহার বুকের ভিতর ফুলিয়া ফুলিয়া উঠিতে লাগিল। এখনও তাহার মত হতভাগিনীর জন্ত এতখানি ভালবাসা জগতে আছে। কিন্তু কি করিয়া সে আজ স্বামীকে আবার বিবাহের কথা বলিবে ? নিজের হাতে নিজের সমস্ত স্বখের মূলে কুঠারাঘাত করা ত কম কথা নয় ? কিন্তু একাজ তাহাকে করিতেই হইবে । সে যেন দেখিতে পাইল তাহার শ্বশুর-গোষ্ঠীর শত শত পরলোকগত পুরুষ কাতর চক্ষে তাহারই দিকে চাহিয়া আছেন। সে যেন আত্মস্থখ বলি দিয়াও র্তাহাদের নরকবাস-ভয় হইতে উদ্ধার করে। দেরি করিয়া লাভ নাই, কাজেই ইন্দির কথা স্বর