ఏ}\ు বৃষ্টির বিরাম ছিল না ; তবুও কেমন একটা গুমোট গরমের ভাপ সানিতে কলিকাতার সিক্তসন্ধ্যা থম্ থম্ করিতেছিল। এমন দিনে সাধারণতঃ কেহ ঘরের বাহির হয় না । নেহাৎ প্রয়োজনে ছোট ভাই বিনোদকে সঙ্গে লইয়া ষ্ট্র্যাও রোড ধরিয়া কুমারটুলী অভিমুখে চলিতেছিলাম। তখন বৃষ্টি একটু ধরিয়া আসিয়াছে। শীকর-ভারাক্রাস্ত বায়ুস্তর ভেদ করিয়া গঙ্গার ওপারের কারখানাগুলির আলো মাতালের চোখের মত ঘোলাটে দেখাইতেছিল ; ল্যাম্প -পোষ্ট ও টেলিগ্রাফ-পোষ্টগুলির গায়ে কিম্বা টেলিগ্রাফের তারে তারে সঞ্চিত জলের উপর গ্যাসের আলো পড়িয়া চকু চকু করিতেছে। পথে লোকজন বা যানবাহনাদির বিশেষ বালাই ছিল না ; কচিৎ কদাচিৎ একআধখান ট্যাকৃসি কিম্বা ছ্যাকুরা গাড়ী উৰ্দ্ধশ্বাসে কাদা ছিটাইয়া ছুটিতেছিল ;–দূরে একখানা রিক্স ঠুনঠুন ঘণ্টা বাজাইয়া মন্থর গতিতে চলিয়াছে ; পিছনের আলোটি চোখের সম্মুখে একটি লাল রেখা টানিয়া দিতেছে। বৃষ্টির ভয়ে দ্রুত চলিতে লাগিলাম। নিমতলা পার হইতেই বেশ সমারোহ-সহকারে বৃষ্টি স্বরু হইল ; একটি গাছতলা আশ্রয় করিয়া কোনো রকমে মাথা রক্ষা করিতেছি, দেখি সেই রিক্সওয়াল বিশেষ শ্রাস্তভাবে সেখানে উপস্থিত হইয়া হাপাইতে লাগিল। রিক্সখানা থালি। রিক্সওয়ালা সম্ভবতঃ বহুদূরের সোওয়ার লইয়া তাহাকে গন্তব্যস্থলে পৌছাইয়া ফিরিতেছে। বৃষ্টি থামিবার গতিক দেখিলাম না। তবু ভাল ; একখানা রিক্স পাওয়া গেল । এই সামান্য পথটুকু—ক’ পয়সাই বা দিতে হইবে । পরিশ্রান্ত রিক্সওয়াল ততক্ষণে মুখ মাথা মুছিয়া স্বস্থ হইয়াছে। কষাকষি করিয়া দুই আন ভাড়া স্থির হইল । উঠিতে যাইতেছি, রিক্সওয়ালা বলিল, ‘হুজুর, দু’জনকে পারব না ’ বলিলাম, “সে কি রে, এই রোগ। রোগ দু'জন লোক, আর কতটুকুই বা রাস্ত৷ ” “আজ্ঞে না, হুজুর, পারব না।"একটু আশ্চৰ্য্য হইলেও চটিয়া গেলাম। বলিলাম, “দুনিয়া শুদ্ধ লোক দু’জন তিনজন লোক নেয়। তুই ব্যাট নিবি না কেন ?—অমন ষাড়ের মত শরীর তোর—” “শকেগ৷ নেহি বাবু বলিয়া সে সেই বৃষ্টির প্রবাসী—আশ্বিন, ১৩ee বিমুকে উঠাইয়া দিয়া নিজে, { ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড মধ্যেই বৃক্ষতল ছাড়িয়া গাড়ী লইয়া বাহির হইয়া পড়িল । অমন শক্ত-সমর্থ লোকের ব্যাকুলতাপূর্ণ ‘শকেগা নেকি? শুনিয়া মনটা নরম হইল । তাহার দৃষ্টিতে এমন একট। অদ্ভুত শঙ্কা ও কাতরতা মাখানে ছিল যে, আমার মন অসোয়াস্তিতে ভরিয়া গেল । বৃষ্টি আর গাছের পাতার আচ্ছাদন মানিল না । দাড়াইয়া দাড়াইয়া ভিজিতে লাগিলাম। রিক্সওয়াল তখন কিছুদূর চলিয়া গিয়াছে। ইকিয়া বলিলাম, দশ পয়সা দিব। সে একবার মুখ ফিরাইয় দেখিল এবং পর মুহূর্তেই গাড়ী লইয়া দৌড়াইতে স্বরু করিল। বহুদূর হইতে রিক্সখানার ঠন্ ঠুন আওয়াজ কানে আসিতে লাগিল ; পিছনের লাল আলোটি তখনো বর্ষামাত অন্ধকার পথে একটি গতিশীল সিঁদুর টিপের মত দেখাইতেছিল । সিক্তদেহে পথে নামিয় পড়িলাম। সেদিন শ্রাবণনিশীথিনীর গাঢ় তমিশ্র। ভেদ করিয়া একটি কঠোর মুখের মলিন বেদনাকাতর দৃষ্টি আমার মনে ঘুরিয়া ফিরিয়া জাগিতে লাগিল । 卉 華 兼 কিছুদিন পরের কথা। এলফিনষ্টোন পিক্চার প্যালেসে ছবি দেখিয়া একটি পরিচিত লোকের অপেক্ষায় হগসাহেবের বাজারের কোণে দাড়াইয়া ছিলাম । হঠাৎ এক রিক্সওয়ালার সহিত দুই বিপুলকায় মাড়োয়ারীর বিশুদ্ধ হিন্দিতে বচস - হইতেছে শুনিতে পাইলাম । মাড়োয়ারীযুগলের গলা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাইতেছে দেখিয়া ব্যাপার কি জানিবার জন্য একটু ঔংস্থক্য হইল। কাছে গিয়াই দেখি, ষ্ট্র্যাও রোডের সেই রিক্সওয়ালা । বচসার কারণ—সে দুইজনকে লইতে পারিবে না। ওই দুইটি বিপুলকায় বস্তাকে একসঙ্গে গাড়ীতে উঠিতে দিতে যেকোনো রিক্সওয়ালার আপত্তি হইতে পারিত এবং তাহাতে আশ্চৰ্য্য হইবার বিশেষ কিছু ছিল না। কিন্তু পূর্বের কথা স্মরণ করিয়া আমি বিস্মিত হইলাম, সেই লোক তাহাতে সন্দেহ নাই। মাড়োয়ারী দুইজন অন্য যানের উদ্দেশ্বে প্রস্থান করিল। রিক্সওয়ালাকে পরীক্ষা করিবার কৌতুহল হইল। তাহার সহিত ভাড়া স্থির করিয়া
পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯৮৩
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
![](http://upload.wikimedia.org/wikisource/bn/thumb/3/3e/%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A7%80_%28%E0%A6%B7%E0%A6%A1%E0%A6%BC%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%82%E0%A6%B6_%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%97%2C_%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A5%E0%A6%AE_%E0%A6%96%E0%A6%A3%E0%A7%8D%E0%A6%A1%29.djvu/page983-1024px-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A7%80_%28%E0%A6%B7%E0%A6%A1%E0%A6%BC%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%82%E0%A6%B6_%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%97%2C_%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A5%E0%A6%AE_%E0%A6%96%E0%A6%A3%E0%A7%8D%E0%A6%A1%29.djvu.jpg)