পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৯২৮ সংস্করণ দেখলে, তা হলেও তার স্বপ্রগামী দৃষ্টি সে- । সব বাইরের ছোট জিনিষকে অতিক্রম ক’রে সহজেই তীর্থস্থানের প্রাকৃতিক সংস্থানটিকে গভীর সন্ত্রমের চক্ষে দেখতে পারলে। সমগ্র ভারতবর্ষে গঙ্গার যে তর তর কাহিণী গৌরবময়ী মূৰ্ত্তির বিচিত্রত দেখা যায় হরিদ্ধারে তার কিছুই নাই, বরং হরিদ্বারের মতন গঙ্গার এত ক্ষুদ্র পরিসর বোধ হয় কোনে স্থানেই চোখে পড়ে না। কালীঘাটের আদি-গঙ্গার সঙ্গে তার সাদৃশ্ব কিছু আছে বটে ; কিন্তু সেখানকার গঙ্গার জলের সঙ্গে এখানকার জলের স্বাদ ও বর্ণের যা তফাৎ সেটাতে আশমান-জমীন তফাৎ বললে বোধ হয় একটুও অত্যুক্তি হয় না। এখানে গঙ্গার জল খুবই অ-গভীর, উচু নীচু ছোট বড় প্রস্তর খণ্ডের ওপর দিয়ে তুষারগল স্বাদু নীরধারা প্রবল বেগে নিম্নমুখী হ’য়ে ধেয়ে চলেছে। কী তার বেগ, কী তার উদাম গতি ! তলস্থ উপল-শয্যা সেই অতি নিৰ্ম্মল জলের ফাকে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। তার মধ্যে মাছের ঝাকের কী নিৰ্ভীক খেলা ! অহিংসা পরম ধৰ্ম্ম বলে এস্থানে মাছ ধরার বা খাবার কোনো বালাই নেই। বরং যাত্রীরা ঐ-সব মাছদের আহার বিতরণ করে কিছু পুণ্য-সঞ্চয়ের আশা রাখেন ; স্বতরাং মাছগুলি একেবারে ভয়লেশহীন । গঙ্গার জলের এমন মিষ্ট স্বাদ যে, বর্ণনা করা চলে না। প্রবাল প্রত্যহ সেই নিৰ্ম্মল জলে স্নান ক’রে আর এদিকে সেদিকে ঘুরে বেড়িয়ে ভারী আনন্দ বোধ করতে লাগল। দূরে হিমালয়ের তুষারমণ্ডিত উচ্চশির আকাশপটে সাদা তুলার রঙের মেঘসজ্জার ন্যায় চোখে পড়ে। সে গম্ভীর মহান দৃশ্বে সহজেই শির নত হ’য়ে আসে ; হৃদয়ও নত হ’য়ে বিনা তর্ক-যুক্তিতেই এই স্থানকে মহাতীর্থ বলে স্বীকার ক’রে নেয়। আর সেই অতীতকালের মহানুদৰ্শী ভক্ত পুরুষদের স্বদুর ভবিষ্যদৃষ্টিকে ধন্যবাদ দিয়ে ওঠে-ধারা স্থানে স্থানে প্রকৃতির অপূৰ্ব্ব বৈভববৈচিত্র্যে মুগ্ধ হ’য়ে অনাগত ভবিষ্যৎ মানব-সন্তানদের কল্যাণের জন্যে এমন সব বিরাট তীর্থক্ষেত্রের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। একদিন প্রবাল সেখানে একজন সাধুর নাম-মাহাত্ম্য শুনে তার সঙ্গে দেখা করতে গেল । બર প্রবাসী—জাম্বিন p ృతిలిe [ २७+ खांभ, »य थ७ স্থানে অনেকগুলি বড় বড় বনস্পতি পরম্পর পরম্পরের শাখায়-শাখায় জড়াজড়ি ক’রে নীচের দিকে বেশ একটি স্বপ্রশস্ত ছায়াযুক্ত স্থান রচনা করেছিল। সাধুর সেই স্থানটিই হচ্ছে আস্তানা। বর্ষায় তিনি সে-স্থান ছেড়ে চ'লে যান ; শীত, গ্রীষ্ম প্রভৃতি ঋতুতে সেই আস্তানাটিতেই বাস করেন । আজকালকার দিনে গেরুয়া বস্ত্রের বিশেষ কোনো মৰ্য্যাদা নেই, কারণ ভণ্ড, জুয়াচোর প্রভৃতি অনেক রকমের দুষ্ট লোকই ঐ জিনিষটিকে তাদের ভণ্ডামীর ভাল রকম আড়াল ব’লে নিৰ্ব্বিবাদে ওর আশ্রয় নেয় । আসল বা মেকী চেনাও দুর্ঘট। শিক্ষিতর আবার বিশেষ ক’রে এইজন্যেই ও-পোষাকটিকে মোটেই শ্রদ্ধার চক্ষে দেখতে পারে না। তার উপর মাঝে মাঝে ঐ ধরণের গেরুয়াধারী বড় বড় মোহান্তদের যে-ধরণের কীৰ্ত্তিকলাপ শুনতে পাওয়া যায়, তাতে সত্যিই ও-পোষাকটার ওপর লোকে বীতশ্রদ্ধ হ’য়ে পড়েছে। প্রবালেরও মনের ধারণ কতকটা সেইরকম ছিল। কিন্তু এই সাধুটিকে দেখে তার সে-ধারণা ভেঙে চুর হয়ে গেল । সাধুকে প্রণাম করতেই তিনি বিনয়ের সহিত ‘নমো নারায়ণ’ বলে নিজের মাথা ঈষৎ নত ক’রে তার পর আশীৰ্ব্বাদের ভঙ্গীতে হাত তুলে হিন্দীতে বললেন– কি চাও, লাল ! লাল মানে বৎস। প্রবাল তার মধুর কণ্ঠস্বরে খুশী হয়ে বললে যে, সে একজন শিক্ষার্থী। সাধু বললেন যে, শিক্ষার্থীদের জন্তে ত নানা স্থানে শিক্ষার ব্যবস্থা আছে,তিনি আর কি শিক্ষা দেবেন। প্রবাল বললে যে, সন্ন্যাসপন্থী সাধুদিগের কাছে থেকে সে কিছু জ্ঞান লাভ করতে চায়। সাধু সেদিন বিশেষ কিছু বললেন না । কিন্তু প্রবাল ফু’চার দিন তার কাছে যাওয়া-আসা কবৃবার পর তিনি প্রবালকে সরল-ভাবাপন্ন দেখে খুলী হলেন এবং তার মধ্যে সত্যিকারের জ্ঞানপিপাসা আছে দেখে কিছু-কিছু জ্ঞানগর্ত কথা বলতে লাগলেন। প্রবাল জিজ্ঞেস করলে—‘সন্ন্যাসীরা যে সংসার-আশ্রম থেকে এরকম দূরে দূরে থাকেন এতে কি বোঝায় না যে, সংসারকে র্তারা অবজ্ঞা করেন ? সন্ন্যাসী হেসে বললেন—‘না বৎস, তা মোটেই নয়। সংসার-রূপ মূলের ওপরেই সন্ন্যাসবৃক্ষ