পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/১২৪

শুয়োপোকার মৃত্যু-অভিযান শ্ৰীগোপালচন্দ্র ভট্টাচাৰ্য্য লেমিংস্ নামক ইদুরের মত এক জাতীয় প্রাণী পাহাড়-পৰ্ব্বতের আশেপাশে দলবদ্ধভাবে বাস করিয়া থাকে এত দ্রুতগতিতে ইঙ্গদের বংশবৃদ্ধি হইতে থাকে ষে কিছুদিনের মধ্যেই চতুর্দিক ছাক্টবু ফেলে। গ্রীষ্মকালীন প্রখর রৌদ্রের তাপে ঘাসপাতা শুকাইয়ু গেলে তাহীদের মধ্যে দারুণ খাদ্যাভাব দেখা দেয় । তখন হঠাৎ একদিন দেখা যায় তাহারা যেন পরামর্শ করিয়াই—শীত নাই, রৗদ্র নাই, খাদ্যের অভাব নাই—এমন এক অজানা কল্পিত সুখের রাজ্যের অভিমুখে ছুটিতে থাকে ৷ পাহাড়-পৰ্ব্বত, নদ-নদী, শহর-বন্দর অতিক্রম করিয়া, লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি লেমিংস দলে দলে সম্মুখের দিকেই অগ্রসর হইতে থাকে। শত সহস্র বাধাবিঘ্ন প্রাকৃতিক বিপ্লব, নানাবিধ শত্রুর আক্রমণ–কিছুই ঈষ্ঠাদের অগ্রগতি প্রতিরোধ করিতে সমর্থ হয় না । জীবন থাকি,ত এষ্টরূপ অজানা কোন সুখের রাজ্যে পৌছিতে ন পারিলেও, সম্মুখের দিকে অগ্রসর হইতে হইতে অবশেষে সমুদ্রে আসিয়া উপস্থিত হয় । সমুদ্রই হউক বা ষাগই ইউক—কিছুতেই ভ্ৰক্ষেপ নাই—অগ্রসর হইতেই হইবে । যত ক্ষণ সমুদ্রের ঢেউ তাহাদিগকে মতলে নিমজ্জিত না করে অথবা সামুদ্রিক হিংস্র প্রাণীর কুক্ষিগত ণ হয়, তত ক্ষণ পর্য্যস্ত সাতরাইয়া সম্মুখের দিকে অগ্রসর হইতে থাকে। অদ্ভূত ইহাদের সংস্কার! এই সংস্কারের দ্বারাই হয়ত প্রকৃতি প্রাণীজগতের ভারসাম্য রক্ষা করিতেছে । ক্যারিবু নামক এক জাতীয় হরিণের মধ্যেও এই ধরণের অদ্ভুত স’স্কার দেখিতে পাওয়া যায় । তাহদের চারণ-ভূমিতে কোন প্রাকৃতিক উংপাত অথবা খাদ্যাভাবের আশঙ্কা দেখা দিলেই হাজার হাজার হরিণ দলবদ্ধ হইয়৷ কোনও এক কল্পিত নন্দনকাননে উপনীত হইবার জন্য নদ-নদী পাহাড়-পৰ্ব্বত সকল রকম বাধাবিঘ্ন আগ্রহ করিয়া অগ্রসর হইতে থাকে । কবে যে ইহাদের যাত্রাপথ সমাপ্ত হুইবে তাহ। ইহার জানে ন!— বিরাম নাই, বিশ্রাম নাই, অভিযান চলিতে থাকে—এমনই দৃঢ় একটা সংস্কার! শ্ৰেষ্ঠতম প্রাণীদের মধ্যেও অমুরূপ দৃষ্টান্ত বিরল নহে। মন্ত্রব্য, পশু, পক্ষী প্রভৃতি প্রাণীদের মধ্যে যাযাবরবৃত্তি অনেক ক্ষেত্রেই দেখিতে পাওয়া যায়, এমন কি কোন কোন ক্ষেত্রে নিম্নশ্রেণীর কীটপতঙ্গের মধ্যেও । কিন্তু কাল্পনিক স্বথের আশায় ( একমাত্র সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাণী ছাড়া ) লেমিংস্-এর মত মগধাত্রার এরূপ দৃষ্টাস্ত বোধ হয় উন্নত অবনত সকল শেণীর প্লাণীর মধ্যেই একাস্ত বিরল। কিন্তু সম্প্রতি কীট-পতঙ্গশ্রেণীর একজাতীয় শুয়োপোকার লেমিংস্ এর মত মৃত্যু-অভিযান প্রত্যক্ষ করিয়াছি । গ্রীষ্মের প্রারম্ভে আমাদের দেশীয় জবা বা কাঠালীচাপ প্রভৃতি গাছের পাতার নিম্নভাগে ঈষৎ সবুজাভ সাদা রঙের এক জাতীয় শুয়োপোকা দেখিতে পাওঁয়া যায়। হাজার হাজার ‘ক্যারিবু হরিণ কল্পিত নম্বন-কাননের পথে অগ্রসর হইতেছে -