পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/২৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

●8*● প্রবণসী وقاoج ছাপ নাই। মৃতের কাপড়াচাপড় লইয়া বড় বাস্তার কলে আসিয়া ঘরে ঢুকিয়াই হাউ হাউ করিয়া কাদিয়া উঠিল। কাচিয়া আনিতেছে, গল্পও চলিতেছে । পিছনে পরাণের মা ! বুঝিলাম, এই পঞ্চা । নিতান্ত ষষ্ঠ দিন সন্ধ্যাম্ব সৌদামিনী ফিরিয়া আসিল । বলিল, “গা কেমন করছে বাৰু, সময় ভাল না ; তুমি বাড়ী যাও। আবার এস একদিন, যদি মনে পড়ে ।" বলিয়া মাদুর পাতিয়া গুইল। আমার ঘরেই সে গুইত। ঐ এক বই দ্বিতীয় ঘর ছিল না। রাত্রের মধ্যেই বুঝিলাম, রোগ কঠিন । অনভ্যস্ত হাতে যথাসাধ্য সেবা করিতেছিলাম । শেষরাত্রে আমায় বলিল, “গেলে না বাৰু? আর জন্মে তুমি আমার বাপ ছিলে। মনে হইল বলি, “তুমিই আমার মা ছিলে ।” বলিতে মুখ ফুটিল না। ফুটিলেও ওর মত সহজ করিয়া বলিতে পারিতাম না নিশ্চয় । , একটু থামিয়া বলিল, “কোথায় গেল পোড়ারমুখোট। এই সময়। পরাণের মারে সকালে একটু ডেকে দিও দিনি বাৰু।” পরাণের মাকে ডাকিয়া আনিয়াছিলাম। কি কথা হইল জানি না । মায়ের দেওয়া হাতের আংটিটা বেচিয়া যথাসাধ্য চিকিৎসা করাইলাম। বুকের মধ্যে যেন একটু তৃপ্তির স্পর্শ পাইলাম। মনে হইল মায়ের দেওয়া আংটী সার্থক হইল । অনেক করিয়াও কিছু হইল না। সন্ধ্যাবেলায় শ্বাস উঠিল । বাড়ীতেও পূৰ্ব্বে দু-একটা মৃত্যু দেখিয়াছি। বুকের মধ্যে এমন মোচড় কোন দিন থাই নাই । কি করিব দিশ মা পাইয়া বসিয়া বসিয়া ফোট ফোটা জল মুখে দিতেছিলাম—অসহায়ের সাত্বনা । এমন সময় একটা লোক রোগ, নিরীহ, বালকের মত দেখিতে এবং প্রায় কুৎসিত বলা যায়। পরাণের মা কোথা হইতে তাহাকে ধরিয়া আনিয়াছিল। সে প্রায় উপুড় হইয়া সৌদামিনীর মুখের উপর পড়িল, “ওরে আমারে ছেড়ে গেলে আমি বঁচিব কেমন করে ? আমি মুরুখ খ,মানুষ ; আমার অপরাধ নিও ন', ও সছ দিদি।” সৌদামিনী যেন মন্ত্রে চোখ খুলিল। পরম ক্ষেহে পঞ্চার মাথাটা টানিয়া নিয়া বলিল, “এমন করে যাবার সময় কাদিস নে পঞ্চা । তোরই ত রইল সব। আবার ঘর সংসার করে মানুষ হ ।” পঞ্চ ডুকরিয়া উঠিল, "ওরে, না, না, না।" বলিয়া গলা জড়াইয়া ধরিল । আর দাড়াইতে পারিলাম না। পরাণের মাকে ডাকিয়া লইয়া পকেট হইতে আংটির টাকাপয়সা যা বাকী ছিল দিয়া বলিলাম, ওর কাজ যেন ভাল করে হয় পরাণের মা” । বলিয়া ছুটিয়া বাহির হইয় আসিলাম । দাদা চুপ করিলেন । বৃষ্টি কখন থামিয়া রাস্তায় জল নামিয়া গিয়াছে। ট্রাম আবার চলিতে মুরু করিয়াছে। রাস্তার কোলাহল শ্রান্ত । ছপ ছপ খড় খড় করিতে করিতে ট্রাম-রাস্তার পাথরের উপর দিয়া একটা ছ্যাকড়া গাড়ী চলিয়া গেল । আমরা নিঃশব্দ হইয়া বসিয়া এতক্ষণ গল্পের স্বপ্লচিত্রজগতে ডুবিয়া ছিলাম। এই স্বায়ুসংপীড়ক কঠিন শব্দে একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলিয়া যেন জাগিয়া উঠিলাম ।