পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/২৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২১০ প্রবাসী SN98g করলেন । এর রইলেন বোটে প্রায় চল্লিশ মিনিট । তার পর দিন সকালেও অনেক লোকসমাগম । এদিন অপরাহ্লে রাতওয়াল এলাকার লাঠিখেলার দল এসে কবিকে তাদের লাঠিখেল দেখিয়ে গেল । লাঠিয়ালদের লম্ফকম্প এবং পায়তাড়া দেখবার মত ব্যাপার ছিল । কি অফুরন্ত ফুর্তি, এদের ভিতরকার নির্ভয় আনন্দ এদের কসরতে ফুটে উঠেছিল । তার পর দিন সকালেই কবির বোটে এল একটি ছেলে, তার হাতে একটু শাদা কাগজ দিয়ে বললে, “কিছু লিখে দিন৷” সে বালকটি চলে যাবার পর, কিছুক্ষণ পরে কবি সেই কাগজে লিখে দিলেন— “সীমাশূন্তে মহাকাশে দৃপ্ত বেগে চন্দ্র স্বধ্য তার যে প্রদীপ্ত শক্তি নিয়ে যুগে যুগে চলে ক্লাস্তিহার, মানবের ইতিবৃত্তে সেই দীপ্তি লয়ে, নরোত্তম, তোমরা চলেছ নিত্য মৃত্যুরে করিয়া অতিক্রম।” অপরাহ্লে দলে দলে প্রজারা এল কবিকে তাদের শ্রদ্ধা নিবেদন করতে । জনতার মধ্যে সভায় কবি বিদায় নিলেন প্রজাদের কাছে । সামনে যে-সব প্রজার ছিল তাদের মধ্যে প্রবণের অশ্র সম্বরণ করতে পারে নি । সে এক অপূৰ্ব্ব বিদায় গ্রহণ আর বিদায় দেবার দৃপ্ত। সন্ধ্যার পর ধীরে ধীরে পতিসরের কুল ছেড়ে বোট চলল ফিরে আত্রাই ঘাটের দিকে। এসেছিলাম এই পথে দিনের আলোয় একটা আনন্দের ভাবে, যাচ্ছি ফিরে ভারাক্রাস্ত চিত্তে । রাত্রির অন্ধকারকে দ্বিগুণতর অন্ধকার ক’রে দিলে, ঐসব প্রজাদের বিষাদ ছায়াবৃত মুখ, যারা পতিসরের নদীকূলে সমবেত হয়েছিল কবিকে বিদায় দিতে । রাত্রির অবসান হ’ল ; বোট আর কিছু দূরে এগিয়ে ষাবার পর কানে এল নহব, আর শানাইয়ের বাদ্যধ্বনি । দূরে দেখা গেল নদীর তীরে ভিড়। পতিসর হতে আত্রাইয়ের পথে, পাচুপুর। এই পাচুপুরের জমিদারবাড়ীতেই খুব ঘটা ক'রে বাজছে শানাই। পাচুপুরের জমিদারবাবুর মহাসমারোহে রবীন্দ্রনাথকে অভ্যর্থনা করলেন—এই অভ্যর্থনার জন্তই পাচুপুরের নদীতীরে লোকের ভিড় । রবীন্দ্রনাথ বোটেই রইলেন । জমিদারপরিবার বোটে এসেই কবিকে তাদের শ্রদ্ধ-সন্মান যথারীতি নিবেদন করলেন। জমিদার-বাড়ীর গৃহিণীর কবির জন্য যে সব আহার্ষ্য বোটে এনে উপস্থিত করেছিলেন, রবীন্দ্রনাথ সেদিন মধ্যাহে তাই গ্রহণ করলেন । জমিদারবাবুদের সেকেলে কেতায় তৈরি বিরাট অট্টালিকা। এক এক সরিকের এক একটি মহল। সব মহল যে বাইরে তা নয়—আমরা যে-মহলে গিয়ে ভোজনসাধনায় মন এবং রসনাকে নিযুক্ত করেছিলাম, সেটা নিশ্চয়ই সাবেক যুগের একটি বিরাট পরিবারের অন্দরমহল । এখানকার পালা শেষ ক’রে বেলা ১২টার সময় বোট চলল, পাচুপুর ছেড়ে আত্রাই অভিমুখে । নৌকা ছাড়বার সময় আবার বেজে উঠল শানাই, নদীর দুই তীরে কাতারে কাতারে জড় হ’ল নরনারী । এখান হ’তে যাত্রাপথে, বোটে কবির সঙ্গে ছিলাম আমরা তিন জন, নওগার এস-ডি-ও, ঠাকুর-ষ্টেটের ম্যানেজার শ্ৰীযুক্ত বীরেন্দ্র সৰ্ব্বাধিকারী, এবং আমি । আত্রাই পৌছবার পূৰ্ব্বক্ষণ পধ্যস্ত কবি গ্রাম সম্বন্ধে তার অভিজ্ঞতাং অনেক কথাই আমাদের বললেন । আত্রাই-ঘাটে বোট ভিড়বার কিছুক্ষণ পরেই এলেন রাজসাহীর বর্তমান কালেক্টর শ্রীযুক্ত অন্নদাশঙ্কর রায়, আই-সি-এস মহাশয় । ষ্টেশনে নেমেই এস-ডি-ও-র সঙ্গে অফিসিয়াল কাজের কথা সেরে নিয়ে তিনি এলেন বোটে কবির কাছে। সাহিত্য বিষয়ে আলাপ স্বরু হ’ল। তার পর আলোচন। সুরু হ’ল গ্রামের সমস্তা নিয়ে । গাড়ী আসবার সময় হ’য়ে এল । কবির পালকী কবিকে আত্রাই রেল প্ল্যাটফমে পৌছে দেবীর কিছুক্ষণ পরেই ট্রেন এল। কবির সঙ্গেই ঐ অন্নদাশঙ্কর রায় গাড়ীতে উঠলেন । নাটোর ষ্টেশনে তিনি নেমে গেলে, কবির কামরার বাতি নিবিয়ে দিয়ে আমরাও নিজেদের কামরায় গিয়ে উঠলাম। -