পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/২৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অগ্রহায়ণ মাটির বাস। ২১৩ মালিশ প্রায় রাত বারোটা অবধি চলিল, তাহার পর মাম্বের হাতের গোটা-দুই চড় খাইয়া তবে ঠাও হইল । শীতের দিন, ভোরবেলাটা অন্ধকার হইয়া থাকে, কুয়াস কাটে না অনেক বেলা পৰ্য্যস্ত। কিন্তু মৃণালের ঘুম ভাঙিয়া ষাং, খানিক এ-পাশ ও-পাশ করিয়া সে উঠিয়া বসে। চিনি-টিনি এখন কুণ্ডলী পাকাইয়া পরস্পরের গায়ে মাথা গুঞ্জয়া ঘুমাইয়া আছে। মুখ দুইটি দেখিলে মনে হয় একেবারে দেবশিশুর মুখ, কোনও রকম দুষ্টামির চিহ্নমাত্র কাথাও নাই। অথচ চোথ চাহিবামাত্র কোথা হইতে যে দুষ্ট সরস্বতী ইহাদের স্কন্ধে আসিয়া ভর করেন, তাহা মৃণাল ভাবিয়াই পায় না । মামীম ভোর থাকিতেই উঠেন, ন হইলে তাহার কাজকর্মের সুবিধা হয় না। নামে মাত্র একটি ঝি আছে, সে কুঞ্জ যথাসম্ভব কমই করে, বেশীর ভাগ কাজ তাহাকে এক পতেঙ্গ সারিতে হয়। মৃণালও তাহার সঙ্গে সঙ্গে উঠিয় ড়িল । অন্যান্য বার সে বাড়ী আসিলে সারাক্ষণ মামীমার সঙ্গে সঙ্গে ঘোরে, যথাসাধ্য র্তাহার কাজে সাহায্য করে । এবার কিন্তু ঠিক করিয়া আসিয়াছে, পড়াশুনায়ই সে বেশীর ভাগ সময় দিবে, ঘরের কাজের দিকে বেশী ভিড়িবে না । মামীম জানেন, ইহা তাহার পরীক্ষার বৎসর। নিশ্চয়ই বিশেষ কিছু মনে করিবেন না। সে মুখ-হাত ধুইয়া মামাবাবুর ঘরে ঢুকিয় প্রদীপ স্বালাইয়া পড়িতে আরম্ভ করিল। এখন বাড়ী একেবারে মীরব, যেন নিগুতি রাত, হাট বসাইবার লোকগুলি এখনও জাগে নাই কিনা ? ঘণ্টা-দুই মৃণাল এখন নিরুপদ্রবে পড়িতে পারিবে । উঠানের ওধার হইতে মাঝে মাঝে ধটি-বাটির টুংটাং শব্দ আসিতেছে। রাধী বাসন গুচাইতেছে, এখনই পুকুরঘাটে লইয়া যাইবে । জার দূরে গোয়ালে গরুবাছুরের সাড়াও মধ্যে মধ্যে পাওয়া Rাইতেছে। মামীম উনান ধরাইতেছেন, ধোয়ার ঝর্ণাঙ্গ ধরে বলিয়াই অনুভব করা যাইতেছে । মৃণাল জানালাটা খুলিয়া দিয়া তাহার সামনে পড়িতে বসিয়াছে। ভোরের অস্পষ্ট আলোয় গোয়ালঘর, খিড়কিপুকুরের ঘাট, তরিতরকারির বাগানের খানিক খানিক দেখা তিনি । যায়, এখনও সব কিছু কুয়াসার ঘোমটায় মুখ অৰ্দ্ধেক ঢাকিয়া রাখিয়াছে। শিরশির করিয়া শীতের বাতাস বহিতেছে, মৃণাল গায়ের র্যাপারটা আরও ভাল করিয়া গায়ে জড়াইতেছে । মন যত সে বইয়ের পাতায় নিবদ্ধ করিতে চায় চোথ ততই তাহার বাহিরের মুক্ত প্রকৃতির মধ্যে ডুবিয়া যায়। তাহাদের পোষা ইসেগুলি গা ঝাড় দিতে দিতে পুকুরের পাড়ে ইহারই মধ্যে প্রাতরাশের সন্ধানে বাহির হইয়াছে, তাহাদের কলরব ঘরে বসিয়াই বেশ শোনা যায়। গোয়ালে মংলী গাইয়ের নূতন বাছুরটা গলা ছাড়িয়া ডাকিতেছে, তাহার বোধ হয় অfর বন্দী হইয়া থাকিতে ভাল লাগে না । মৃণালের ইচ্ছা করিতে লাগিল, ছুটিয়া গিয়া সেটাকে একটু আদর করিয়া আসে। কি সুন্দর উহার চোখ দুটি ! এমন নিষ্পাপ দৃষ্টি আর কোনও জীবের আছে কি ? কবির হরিণশিশুর পিছনে ত কম সময় নষ্ট করেন না, কিন্তু ইহাদের প্রতি এত অবজ্ঞা কেন ? মৃণাল কবিতা লিথিতে জানিলে এই বাছুরটার নামে গোট দশ-বারো কবিতা লিগিয়া ফেলিত বোধ হয় । কিন্তু এই রকম করিলেই তাহার পরীক্ষার পড়৷ হইয়াছে আর কি ? মৃণাল তাড়াতাড়ি জানাল বন্ধ করিয়া দিয়া জোর করিয়া পড়ায় মন ডুবাইয়া দিল। ঘন্ট দেড়েক সত্যই সে নিৰ্ব্বিবাদে পড়িয়া ফেলিল। তাহার পর গুইবার ঘর হইতে নানা রকম শব্দ উখিত হইতে লাগিল, বুঝা গেল ভোরের শান্তি টুটিবার উপক্রম হইয়াছে। টিনি, চিনি আর খোক উঠিলেই নিশ্চিন্ত, আর কাহাকেও কিছু করিতে হইবে না। মামীম ইহার মধ্যে অনেক কাজ সারিয়া ফেলিয়াছেন। দুধ দোয়ানো, জাল দেওয়া সবই হইয়া গিয়াছে, এইবারে সকলের খাইবার পালা। মৃণালও ছোট ভাইবোনদের সঙ্গে রান্নাঘরেই থাইতে চলিয়া গেল । এখানে চা নাই, ডিম ভাজা নাই, টোষ্ট-মাখনও নাই । কিন্তু বড় বড় কাসার বাটিতে থাটি দুধ আছে, তাহাতে ইচ্ছামত কেহ মুড়ি ডিজাইয়া খাইতেছে, কেহ খই, কেহ চিড়া । মৃণাল চিঁড়াটাই বেশী পছন্দ করে। তাহার পর ঘরে-তৈয়ারী নারকেল-নাড়ু আছে, মুড়কির মোওয় আছে, চন্দ্রপুলি অাছে। . ষে যাহা চায়, তাহাই পায়।