পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/২৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ミsb〜 প্রবাসী S్సNరిః8 হইয়া যায়। বাতি জালাইয়া কাজ করা পল্লীবাসীরা যেন পছন্দ করে না । দিনের কাজ দিন থাকিতে শেষ হইলেই ভাল, রাতে যখন ভগবান আলোক দেন নাই, তখন রাতে কাজ করা হয়ত তাহার বিধান নয়। রাত্রিটার সবটাই প্রায় ইহার ঘুমাইবার জন্য রাখিয়া দেয়, তেমনি দিনের আলো ফুটিতে-না-ফুটিতে তাহারা বিছানা ছাড়িয়া উঠিয়া কাজে লাগিয়া যায় । চিনি, টিনি, থোকা সকলে থাইতে বসিয়া গেল । মেয়ে দুটি খায় ধা, ছড়ায় তাহার বেশী । তাহাদের মা আবার এসব নোংরামি মোটেষ্ট দেখিতে পারেন না, অথচ থোকাকে সামলাইয়া মেয়েদের খাওয়াইয়া দিতেও পারেন না । কাজেই থাইতে বসিয়া চিনি-টিনি ভাত-ডাল যত না খায়, মীর থায় ভার বেশী। এখন মৃণাল আসাতে কয়েকটা দিন তাহারা বাচিয়া গিয়াছে, সে-ই তাহাদের গুছাইয়া খাওয়াইয়া দেয়, মুখ-হাতও ধুইয়া দেয়। তাহার পর মৃণাল, মল্লিক-মহাশয় এবং তাহার বড় ছেলে খাইতে বসিলেন। মামীম সবাইকে দিয়া-থুইয় তবে নিজে পাইতে বসেন, দুই বেলাই তাহার এই ব্যবস্থা। মৃণাল আগে আগে রাত্রে তাহার সঙ্গে থাইত, এখন কিছুক্ষণ পড়াশুনা করিতে হয় বলিয়া আগে খায় । কিন্তু হারিকেনের মৃদ্ধ আলোতে বেশীক্ষণ পড়াশুনা করিতে ইচ্ছা করে না। চারিদিকের গভীর নীরবতারও ষেন কেমন একটা মুর আছে । সেই স্থর ঘুমপাড়ানি গানের মত কেবলই তাহার মনের ভিতর গুঞ্জন করিয়া ফিরে, দেখিতে দেখিতে ঘুমে তাহার চোখ ঢুলিয়া আসে। আলো কমাইয়া দিয়া, বইখাতা গুছাইয়৷ তুলিয়া রাখিয়া সে শুইতে চলিয়া যায়। সকাল বেলা জলখাবার খাওয়া শেষ করিয়া মৃণাল আরএক পালা পড়িতে বসিবে মনে করিতেছে, এমন সময় মামাবাবু বাহিরের কাজ সারিয়া ফিরিয়া আসিলেন । আজও তাহার হাতে একখানি চিঠি। মৃণালকে ডাকিয়৷ বলিলেন, “ওরে মিষ্ট, তোর বাবা যে আসছে।” মৃণাল কিছু বলিবার আগেই মল্লিক-গৃহিণী বাহিরে আসিয়া উৎসুক ভাবে জিজ্ঞাসা করিলেন, “কবে গো ?” মৃণাল চিঠি লইবার জন্য হাত বাড়াইয়ু বলিল, “দাও না দেখি মামাবাবু, বাবা কি লিখেছেন।” মল্লিক-মহাশয় চিঠিখানা মৃণালের হাতে দিয়া বলিলেন, “আসছে পরশু। পূজোর সময় আসতে পারবে না, বিজয়ার পরেও কি কাজ পড়েছে, তাই আগেই আসছে।” গৃহিণী বলিলেন, “তা যখন হয় এলেই হল । মিঠুকে কত বছর ধে দেখে নি তার ঠিকঠকানা নেই। নিজে আবার যে-বছর বিয়ে করলে সেই বছর মিঠুকে নিয়ে গিয়েছিল। তার বছর-দুই পরে একবার দেখতে এসেছিল। তার পর থেকে ত বাপে বেটীতে দেখাসাক্ষাৎ নেই। সেই সাত বছরের মেয়ে দেখে গেছে আর এবার এসে সতেরো বছরের দেখবে। ধন্তি বাপ যা হোক । সাধে কি বলে, ম। মরলে বাপ তালুই ?” মৃণাল অনেক কষ্টে তাহার বাবার লেপ পোষ্টকাঙথান পড়িতেছিল। মুগাঙ্কের লেখা এমন অদ্ভুত রকম জড়ানো যে তাহার পাঠোদ্ধার করা এক অসম্ভব ব্যাপার । যাহা হউক, এইটুকু বুঝিতে পারিল যে তিনি পরশু দিন আসিতেছেন, তবে দিন দুইয়ের বেশী থাকিতে পরিবেন না । চিঠিখন মামীমার হাতে দিয়া সে গিয়া ঘরে ঢুকিল। কিন্তু মন পড়ায় কিছুতেই বসিতে চায় না। কতদিন পরে বাবাকে সে দেখিবে । বাপের চেহারা এখন আর স্পষ্ট তাহার মনে পড়ে না, আবছায়া মতন একটা মূৰ্ত্তি মনে ভাসিয়া উঠে । এখন তিনি কেমন হইয়া গেছেন কে জানে ? এখানকার কাহারও সঙ্গেই এই দীর্ঘ দশ-এগারে বৎসরের মধ্যে র্তাহার দেখা হয় নাই । বাপকে দেথিবীর ইচ্ছা মনে মনে মৃণালের অনেকখানিই ছিল, কিন্তু তাহা সে বলিবে কাহার কাছে ? মামাবাবু গম্ভীর প্রকৃতির মানুষ, সারাক্ষণ কাজে ব্যস্ত, তাহার সঙ্গে গল্প চলে না । মামীম মুগাস্কমোহনকে একেবারেই দেখিতে পারেন না, কাজেই তাহার সামনেও মৃণাল এ-সকল কথা তোলে না। টিনিচিনি এখন পর্য্যস্ত জগৎসংসারে দুইটি মাত্র রসের সন্ধান পাইয়াছে, তাহা খাওয়ার এবং খেলার । ইহার অতিরিক্ত আর কিছু বুঝিতে তারা অক্ষম । কাজেই মুণাল মনের ইচ্ছা মনেই রাখে । এতদিন পরে বাবাকে দেখিতে পাইবে শুনিয়া মনটা তাহার আনন্দে দুলিয়৷ দুলিয়া উঠিতে লাগিল, কিন্তু এ আনন্দের ভাগ লইবার লোক এ বাড়ীতে কেহ ছিল না । সারাটা দিন এই কথাটা ঘুরিয়া ফিরিয়া তাহার মনে কেবলই ধ্বনিত হইতে লাগিল । নিজেকে ভাগ্যহীন তাহার মনে হয় না, মামামামীর স্নেহের ছায়ায় সে যেমন বাড়িয়া উঠিতেছে, যত আরামে দিন কাটাইতেছে, অনেকে নিজের মা-বাপের ঘরেও ততট আরাম পায় না। তবু বাহিরের দিক্ দিয়া দেখিতে গেলে মৃণালকে দুর্ভাগিনীই বলিতে হয় । তাহার মা নাই, বাবা থাকিয়াও নাই, ভাইবোন সহোদর কেহ নাই । সে কুমারী। এখন পৰ্য্যস্ত তাহার জীবন স্নেহুপ্রেমের বন্ধনে অন্ত কোনও জীবনের সহিত বাধা পড়ে নাই। জগতে সে বড় একাকিনী । কিন্তু এই একাকীত্ব সে তেমন অনুভব করে না ত ? হৃদয়ের শূন্তত কিসে তাহা পূর্ণ হইয়া আছে ? [ ক্রমশঃ ]