পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/২৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অংগ্রহণয়ণ স্রোতের ফুল SNes হাত দেখিয়া বলিয়া গেল—অতি অল্প দিনের ভিতর তাহার বিবাহ অনিবাৰ্য্য। কথাটা তখন সকলে হাসিয়া উড়াইয় দিলেও ভাগ্যচক্রে ভবিষ্যতে সেইটাই আমার বিপক্ষে শৈলজার প্রধান যুক্তি হইয়া দাড়াইল । অতএব বিবাহের পর হইতেই আমার গৃহে গণংকার মাত্রেরই সাদর অভ্যর্থনা শুরু হইয়াছে। একবার পাচটি রৌপ্যমুদ্র-বিনিময়ে এক আশ্চৰ্য্যশক্তিসম্পন্ন অজ্ঞাত বৃক্ষমূল মাদুলীরূপে শৈলজার কণ্ঠভূষণ হইয়াছে ; আর এক বার দশটি রৌপ্যমুদ্র-বিনিময়ে একটি নীল কাচখণ্ড, মন্ত্ৰপূত নীলারুপে গৃহিণীর অঙ্গুলির শোভা বৰ্দ্ধন করিয়াছে। নীলাসংক্রাপ্ত ব্যাপারটি হইয়াছে কিছুদিন পূৰ্ব্বে । অঙ্গুরীট যে সত্যই একটি কাচখণ্ড ব্যতীত অঙ্ক কিছু নহে—ইহা স্বনিদিষ্টরূপে প্রমাণিত হইবার পর হইতে শৈলজ স্বীকার করিয়াছে যে গণক-সম্প্রদায়ের প্রতি তাহার আর আস্থা নাই। স্বতরাং অনর্থক অর্থব্যক্ষ হওয়াতে আমার অদৃষ্টের দুষ্টগ্ৰহগণ শাস্ত হইয়াছেন কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত না হইলেও, গৃহিণী শাস্ত হইয়াছেন এই ভাবিয়া আমিও নিশ্চিন্তু হইয়াছিলাম । কিন্তু এক্ষণে সেই পুরাতন প্রশ্নের পুনরভূখান হওয়াতে মনে মনে চমকিত হইলাম । বিছানাটায় বেশ আরাম করিয়া গুইয়া অবজ্ঞার স্বরে কহিলাম, “না” । “কিন্তু অনেক সময় ত ঠিক হয়ে যায়, হাত দেখে ঠিক কখা ব’লে দিতে পারে, পজিতে লেখা—* বলিয়া কথাটা শেষ না করিয়াই সহসা সে কহিল, “হ্যা গা, যোগেনবাবুকে দেখতে গিয়েছিলে নাকি তুমি ?” আগের দিন সাইকেল হইতে পড়িয়া যোগেনবাবু শয্যাশায়ী হইয়াছেন। যোগেনবাৰু লোকটি অত্যন্ত ভীতু। সামান্ত জরকে টাইফয়েড, এবং সঙ্গিজরকে নিউমোনিয়াতে রূপান্তরিত করিতে র্তাহার বিশেষ বিলম্ব হয় না। এইবারও আঘাত বিশেষ কিছু নয়। কিন্তু সে-কথা কে শোনে, নিজের অভিজ্ঞতায় যতগুলি রোগের নাম জানা আছে, যে-কোন মুহুর্ভে তাহারই কোন একটার আক্রমণ আশঙ্কা করিয়া গৃহস্থ সকল লোককে তিনি অস্থির করিয়া তুলিয়াছেন। 總 কহিলাম, “তুমি গিয়েছিলে নাকি ?” মূখখানাকে যথাসম্ভব করুণ করিয়া শৈলজা কহিল, “হ্যা, দেখেও এলুম ! আহা ! কি কষ্টই না পাচ্ছেন ভদ্রলোক, রোগ বউটি ত কেঁদে কেঁদে অস্থির। পাশের বাড়ীর মুখুজ্যে-গিল্পী এসে বললেন, ‘তোমরা সব আজকালকার মেয়ে, পূজো-আর্চায় ত আর বিশ্বেস নেই। কেন, পাঞ্জিতেই ত লেখা রয়েছে, কুম্ভরাশির পতন-ভয় ।” বউটি কেঁদে কেঁদে বললে, ‘আহা কেন আমি আগে একটু সাবধান হলুম না, কেন আমি—” বাধা দিয়া কহিলাম, “সাবধান কি ক’রে হতেন শুনি ? কৰ্ত্তাটিকে আঁচল-চাপা দিয়ে রাখতেন ?” ভ্র কুঞ্চিভ।করিয়া শৈলজা কহিল, “তোমার ঐরকম বাকা বাকা কথা । আঁচল-চাপ দিতে যাবেন কেন শুনি ? ঐ যে মুখুজ্যে-গিী বললেন পূজো-আর্চ, শত হ’লেও বামুনের কথা ত•••” - আমি সত্যই অবাক হইলাম, রাগও করিলাম। কহিলাম, “হ্যা তা ঠিক ! বামুনকে কয়েকটা টাকা ঘুষ দিলে পতনেও কিছু ব্ৰহ্মতেজ প্রকাশ পেত। সাইকেল থেকে না পড়ে অনায়াসে তাল কিংবা স্বপুরিগাছ, থেকে পড়তে পারতেন। একবার অর্থ-বিনিময়ে তুমি আমার ভিতরে কিছু ব্ৰহ্মতেজের সঞ্চার করেছিলে কিনা, তাই বলছি।” শৈলজার মুখখান এইবার মান হইল। গত বৎসর গ্রীষ্মের সময় এক গণতকার আসিয়া শৈলজার হাত দেখিয়া বলিয়াছিল—আমার খুবই ভাল সময়, রাজার স্থায় ঐশ্বৰ্য্য, অটুট স্বাস্থ্য, তবে বর্ধার সময় সামান্ত উদরসংক্রাস্ত পীড়ায় ভূগিবার সম্ভাবনা। তবে এক বাটি স্বত, একটি নূতন কাপড় এবং কিছু প্রণামী কোন সজব্রাহ্মণকে দান করিয়া শাস্ত্রাঙ্গুযায়ী স্বস্ত্যয়ন করিলে ফললাভ আনিবার্ষ্য । স্থতরাং একদিন শুভক্ষণে আমার সৰ্ব্বরোগকে চিরকালের স্কায় অগ্নিতে আস্থতি দিয়া সদব্ৰাহ্মণটি একটি বৃহৎ পুটুলি স্কন্ধে প্রস্থান করিলেন। পরের সপ্তাহে আমার হইল টাইফয়েণ্ড । অতএব সেই ব্ৰহ্মতেজের উক্তিতে শৈলজার মুখ মান হইল, এবং অচিরে কথাবাৰ্ত্ত সাজ করিয়া সে স্বানকক্ষের অভিমুখে যাত্রা করিল।