পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/২৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ミ8の প্রবাসী ১ঙ৪৪ খুটিনাটি ভাল করে দেখে তারা ভুল করে না। আমরা ঘাটের দিক থেকে আসছি এবং আমার সাজপোষাক একেবারে বাঙালীর মত দেখে পথের লোকেরা অর্থাৎ গাড়ীর দালাল প্রভৃতি তখনই বুঝে নিল যে আমরা জাহাজ থেকে এইমাত্র নামলাম। টমাস কুকের দরজার কাছে অতি দীর্ঘাকৃতি এই রকম দু-চারজন ষে ঘোরাফেরা করছিল তাদেরই একজন বোধ হয় কিছু পাবার আশায় ডাকাডাকি করে আপিসের দরজা খোলাল । আর একটি দীর্ঘায়ত মূৰ্ত্তি ভিতর থেকে উকি দিল, বললে, “আপিস খুলতে দেরী আছে ।” কি আর করা যায় । তার হাতে চিঠি লিখে দিয়ে আসা হল ষে আমাদের সব চিঠিপত্র ষেন সাড়ে নয়টার আগে ‘আনিও মারু জাহাজে পৌছে দেওয়া হয়। চিঠি নিয়েই ভিতরের দীর্ধমূৰ্ত্তি দরজা বন্ধ করে দিলেন। পথের লম্বা মানুষটি বললে, “তোমরা বেড়াতে যাবে ? গাড়ী চাই ।” আমরা “চাই” বলবামাত্র সে ছুটে পাচ মিনিটের মধ্যে কোথা থেকে একটা ট্যাক্সি এনে হাজির করল । বড় রাস্ত দিয়ে ট্যাঙ্গি ছুটল। বাড়ীর আড়াল, গাছের ফাক দিয়ে ক্ষণে ক্ষণে সমূত্রের জল ঝলমল করে উঠছে, পথটা সমুদ্রের ধার দিয়েই প্রায়। বড় রাস্তা থেকে সমকোণ ভাবে অনেকগুলি গলি বেরিয়ে সমূত্রের দিকে গড়িয়ে cata frats stwa afl R 12th lane, 13th lane এই রকম। আমাদের দেশের মত মহাপুরুষদের নামে পথের কিম্বা পথের নামে মহাপুরুষের খ্যাতি বৃদ্ধি করবার প্রথা বোধ হয় এখানে নেই। এই রাস্তার ধারের বাড়ীগুলি প্রায় সবই একতলা বাংলোর মত, খোলা দিয়ে ঢাকা চাল। প্রত্যেক বাড়ীতেই অনেকখানি জমি, সবুজ স্বন্দর বাগান। আধুনিক কলিকাতায় জমির এক-তৃতীয়াংশ ফেলে রেখে তবে বাড়ী করবার অনুমতি পাওয়া যায়, এখানে বোধ হয় দুই-তৃতীয়াংশ কি ভার চেয়েও বেশী ফেলে রাখার নিয়ম ৷ বোম্বাই প্রভৃতি অনেক স্বধৃগু শহরের ভাল পাড়ায় বাড়ীর বাহারই বেশী, এখানে বাড়ীর বাহ্রার কম বাগানের বাহার বেশী । অনেক বাড়ীর পথের ধারে নীচে. পাচিলের গায়েই সপ্তপণীর মত বড় বড় পাতাওয়ালা এক রকম গাছ পথের শোভা বৰ্দ্ধন করছে । আর এক রকম গাছের পাতা খুব } ফিকে সবুজ। বেঁটে বেঁটে এক রকম গাছ কেয়ারি করে মস্ত বড় এক একটা কদম ফুলের মত কিংবা জাপানী মেম্বের খোপারই মত ফাপিয়ে বাড়ীর সামনে সাজিয়ে রেখেছে। শুধু সবুজেরই যে কত বিভিন্ন রূপ বলা যায় না। চোখ জুড়ানো কথাটা ব্যবহার করলে তাকে শুধু ভাষার অলঙ্কাৰ বলে এখানে হাল্কা করে নেওয়া চলে না । মাথার উপর নীল আকাশ, পায়ের তলায় নীল সমুদ্র আর তারই কোলে ঘনগুাম, স্নিগ্ধগুমি, শুামাণ্ড ও পীতাভ এই গাছের মাথাগুলি বাস্তবিকই মাহুষের চোখ জুড়িয়ে দেয়। ঘণ্টা দুই পথে পথে ঘুরে মানুষ যা দেখলাম ভা:ে স্ত্রীলোক খুবই কম। এটা ত পর্দার দেশ নয় তাই একটু বিস্থিত হলাম। বোধ হয় এত সকালে ঘরের কাজ ফেলে মেয়েদের বাইরে বেরোবার সময় হয় না । পথের লোক দেখে মানুষের যেটুকু ধারণা হয় তাতেই বোধ হল এখানে খ্ৰীষ্ট ধৰ্ম্ম অর্থাৎ সাহেবীয়ানার প্রভাব খুব বেশী। ফলওয়াল, গাড়ীর দালাল, মুদি, দারোয়ান সবাই লুঙ্গির উপর মোটা মোটা ওপন ব্রেষ্ট কোট পরে বসে আছে । এই ত গরম দেশ, পৌষ মাসের শেষেও এক ফোট শীত নেই ; বাংলা দেশ হলে কারুর গায়ে জামাই দেখা যেত না। দরিদ্র খ্ৰীষ্টধৰ্ম্মীরাও বাংলা দেশে এত কোট পরে না ! অল্প দু-চারজন মেয়েও যা দেখলাম, তারাও প্রায় সবাই বুক পৰ্যন্ত জড়ানো লুঙ্গির উপর খুব জাট জ্যাকেট এটে বেড়াচ্ছে। জামার হাতগুলো বহু পুরাকালের বেলুনআস্তিন। আজকাল অবশু বেলুন-আস্তিন আবার ফ্যাশানের কোঠায় নূতন করে উঠেছে, কিন্তু তাতে একটু খানি আধুনিকতার চিহ্ন লেগে আছে, দেখলেই বোঝা যায়। এদের ফ্যাশানটা আধুনিক নয় নিশ্চয়। দেখে মনে হয় ফে সময় এরা ধৰ্ম্মলাভ করেছিল সেই সময় পোষাকটাও উপরি পেয়েছিল। বংশানুক্রমে আজও সেই প্রাচীন পোষাক চলে আসছে । কলম্বোর যে পথ দিয়ে আমরা গেলাম সেখানে ইউরোপীয়ানদের ভিড় খুব বেশী। এই পথটা মাউন্ট লাভানির বলে একটা ছোট ষ্টেশনে গিয়ে পড়েছে। ট্রেন ও বাসেও সেখানে যাওয়া যায়। আমরা ন’টার সময়