পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৩৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আগ্রহণরণ “আনন্দমঠে” পরোক্ষভাবে মুসলমানের প্রশংসা আছে। যেমন প্রথম খণ্ডের অষ্টম পরিচ্ছেদের নিম্নলিখিত বাক্যের অপূৰ্ব্ব কথাটিতে – “সেই সময়ে ইংরেজের কৃত আধুনিক রাস্ত সকল ছিল না। নগরসকল হইতে কলিকাতায় আসিতে হইলে মুসলমান-সম্রাটনিৰ্ম্মিত অপূৰ্ব্ব বক্স দিয়া আসিতে হইত।” সাৰ্ব্বকালিক মুসলমান সম্প্রদায় সম্বন্ধে কোন ব্যাপক মন্তব্য বা উক্তি—বঙ্কিমচন্দ্রের নিজের উক্তি—“আনন্দমঠে” নাই, “রাজসিংহে” তাহা আছে। এই উপন্যাসের উপসংহারে “গ্রন্থকারের নিবেদন” নাম দিয়া তিনি লিখিয়াছেন – “গ্রন্থকারের বিনীত নিবেদন এই যে, কোন পাঠক ন মনে করেন যে, হিন্দু-মুসলমানের কোন প্রকার তারতম্য নির্দেশ করা এই গ্রন্থের উদ্দেশ্য। হিন্দু হইলেই ভাল হয় না, মুসলমান হইলেই মন্দ হয় না ; অথবা হিন্দু হইলেই মন্দ হয় না, মুসলমান হইলেই ভাল হয় না । ভাল মন্দ উভয়ের মধ্যে তুল্যরূপই আছে । বরং ইহাও স্বীকার করিতে হয় ষে, যখন মুসলমান এত শতাব্দী ভারতবর্ষের প্রভু ছিল, তখন রাজকীয় গুণে মুসলমান সমসাময়িক হিন্দুদিগের অপেক্ষ অবশ্ব শ্রেষ্ঠ ছিল। কিন্তু ইহাও সত্য নহে ষে, মুসলমান রাজাসকল হিন্দু রাজাসকল অপেক্ষ শ্রেষ্ঠ ছিলেন। অনেক স্থলে মুসলমানই হিন্দু অপেক্ষ রাজকীয় গুণে শ্রেষ্ঠ ; অনেক স্থলে হিন্দু রাজা মুসলমান অপেক্ষ রাজকীয় গুণে শ্রেষ্ঠ । অন্যান্য গুণের সহিত যাহার ধৰ্ম্ম আছে—হিন্দু হৌক মুসলমান হৌক, সেই শ্রেষ্ঠ । অন্যাঙ্ক গুণ থাকিতেও যাহার ধৰ্ম্ম নাই—হিন্দু হৌক, মুসলমান হৌক—সেই নিকৃষ্ট ।” যে গ্রন্থকার এইরূপ কথা লিথিয়াছেন, তাহাকে ধৰ্ম্মান্ধ, মুসলমানবিদ্বেষী মনে করা অযৌক্তিক। এই দুই উপন্যাসে মীরজাফর, মহম্মদ রেজা খা, ঔরঙ্গজেব প্রভৃতি ঐতিহাসিক মানুষদের উল্লেখ ও কথা আছে । এবং “আনন্দমঠে” ও “রাজসিংহে” বর্ণিত সময়ের মুসলমানদের কথা ও তৎসম্বন্ধে মন্তব্য কোথাও কোথাও আছে । যাহা অাছে, তাহা নু্যায্য কিন, ঐতিহাসিকের বিচাৰ্য্য। রাগারগি বৃথা। গ্রন্থ দুইখানির মুসলমান বিচারকদিগকে মনে রাখিতে হইবে, যে, ঐ দুইখানিতে যে-সকল ঐতিহাসিক বা কল্পিত মুসলমানের বা তাৎকালিক মুসলমান সমাজের উল্লেখ ও কথা বা তৎসম্বন্ধে মন্তব্য আছে, তাহারা পয়গম্বর ত নহেনই, তাহার প্রতিনিধিও নহেন, কোরান নহেন, কোরানের কোন প্রতীক বলিয়াও উল্লিখিত ব কল্পিত হন নাই, এবং সৰ্ব্বদেশীয় ও সৰ্ব্বকালিক মুসলমান সমাজ নহেন। 始 তাহাদিগকে ইহাও মনে রাখিতে হুইবে, যে, ইহুদীরা শেক্সপীয়্যারের মাৰ্চেণ্ট অব ভেনিস পোড়ায় নাই বা তাহার প্রচার নিষেধ করিতে বলে নাই, তাহাতে আহাদের কোন ক্ষতি হয় নাই । বিবিধ প্রসঙ্গ—রবীন্দ্রনাথ ও স্বাধীনতা ఇSS বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস দুখানি সম্বন্ধে আমরা স্বেরূপ মত প্রকাশ করিলাম, সেইরূপ মত পোষণের সমুদয় কারণ যথেষ্ট সময় ও স্থানের অভাবে এখানে বলা হইল না । “বন্দেমাতরমৃ” গান সম্বন্ধে আন্দোলন “বন্দেমাতরম্ গানটির বিরুদ্ধে অভিযান হওয়ায় এবং কংগ্রেসের কার্য্যনিৰ্ব্বাহক কৰ্মীটি ঐ গানটি সম্বন্ধে যেরূপ মন্তব্য প্রকাশ করিয়াছেন তাহা প্রকাশিত হওয়ায় বাংলা দেশে প্রতিক্রিয়াজনিত যে বিক্ষোভ ও আন্দোলন দেখা যাইতেছে, তাহ অস্বাভাবিক নহে। দুঃখের সহিত এই আন্দোলনের একটি অবাঞ্ছনীয় বিশিষ্টতার উল্লেখ করিতে হইতেছে। কাহারও সহিত মতের অনৈক্য হইলে তাহার মতের বিরুদ্ধে যুক্তি প্রয়োগ করা উচিত, ব্যক্তিগত আক্রমণ অনুচিত। হীন অভিসন্ধি আরোপ যদি অগত্যা করিতেই হয়, তাহ হইলে সেরূপ অভিসন্ধি আরোপের অকাট্য প্রমাণ উপস্থিত করা কর্তব্য । তর্কবিতর্কের উদ্দেশু সত্যের ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা । যেরূপ আক্রমণ ও অভিসন্ধি আরোপের কথা বলিতেছি, তাহার দ্বারা সে উদ্দেপ্ত সিদ্ধ श्ध्न नॉ । 稳 ses ংগ্রেসের কার্য্যনিৰ্ব্বাহক সভা যেরূপ মন্তব্য প্রকাশ করিয়াছেন, তাহার সহিত আমরা সৰ্ব্বাংশে একমত নহি, কিন্তু আমরা মনে করি, তাহারা অস্তিরিক বিশ্বাস বশতঃ কৰ্ত্তব্যবোধে এইরূপ করিয়াছেন । ঐযুক্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর “বন্দেমাতরম্ সম্বন্ধে পণ্ডিত জৱাহরলাল নেহরুকে যে চিঠি লিখিয়াছিলেন, তাহার জগু ব্যক্তিগত আক্রমণ ও হীন অভিসন্ধি আরোপ স্বলবিশেষে তর্কবিতর্কের রীতি লঙ্ঘন এবং শিষ্টাচারের সীমা অতিক্রম করিয়াছে। এরূপ আক্রমণে সত্যের মধ্যাদা রক্ষিত হয় না । বল বাহুল্য, রবীন্দ্রনাথ যাহা বলিয়াছেন, তাহা তাহার আস্তরিক বিশ্বাস ।

রবীন্দ্রনাথ ও স্বাধীনতা “বন্দেমাতরম্ সম্বন্ধীয় আন্দোলন সম্পর্কে কেহ কেহ রবীন্দ্রনাথ-বিরচিত জাতীয় সঙ্গীতগুলির বিরুদ্ধে এই মর্শের কথাও বলিয়াছেন, যে, তাহাজের মধ্যে স্বাধীনভার আকাঙ্ক্ষা নাই, স্বাধীনতা লাভ চেষ্টার. জগু মানুষ সেগুলি হইতে কোন প্রেরণা পায় না। রবীন্দ্রনাথ স্বাধীনত চান না, কোন সমালোচক যে একথা বলেন নাই, ইহাও সমালোচকদের দয়া বলিতে হইবে। উত্তেজনার সময় মানুষের মনের সত্যান্থভূতির শক্তি হ্রাস পায়। *