পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৪৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পৌষ এবং প্রতীক্ষা ক'রে আছি, বর্ষার সন্ধ্যা যেন মিথ্যা না যায়। অবিশুি আমি কেবল এই চিড়েভাজা বা ঐ জাতীয় কিছু জিনিষের প্রত্যাণী—তুই আবার ভুল বুঝিস নে। তোর ও মেঘদূতের চেয়ে হাতে একখানা চিড়েভাজার থালা পেলে আমি খুশী হব বেশী। সত্যি কি করিস রাতদিন বই হাতে নিয়ে ? ঐ কবিতার ধ্যানঘ্যাননি রাতদিন ভাল লাগে ?” স্বরেশ বইখানা খুলিয়া বলিল, “বলিস কি রে অনুকূল ? এ-সব কবিতা সম্বন্ধে অমন ক’রে কথা বলিস নে—শুনলেও কষ্ট হয়। শুনবি একটা জায়গা, পড়ব । আহা—শোন একবার * অনুকূল হাতজোড় করিয়া বলিল, "রক্ষে কর দাদা। তুমি যদি কবিতা স্বরু কর ত আমি এখনি রান্নাঘরে বৌদির কাছে পালাব। বাড়ীতে অহোরাত্র কবিতার বই দেখে দেখে এই এক মাসেই আমার চক্ষু ক্ষয়ে গেছে ভাই— এখানে ভূ-দও এসেও আবার সেই উপদ্রব আরাসত্যি বলছি সহ হবে না।” স্বরেশ ক্ষুঃমনে বই বন্ধ করিল। বলিল, “জীবনে ভাল জিনিষ উপভোগ করতে শিখলি নে ? এই মেঘদূতের বাংল। অনুবাদখান আগে পড়ি নি—এই আনিয়েছি । আজ বর্ষার সন্ধ্যায় এটা পড়তে পড়তে এতই ভাল লাগল যে অপর্ণাকে ধরে এনেছিলাম শোনাব ব'লে। এক পাতা শুনতে-নাশুনতে উঠে গেল-বললে বর্ধার সন্ধ্যে নাকি কিছু না খেলে জমে না ; তাই মাছের কচুরি ভাজতে গেল। মেঘদূত পড়ার চেয়ে মাছের কচুরি ভাজা যে বেশী পছন্দ করে— তাকে আর কি বলব বল?” অমুকুল বলিল, “দেখ, স্বরেশ, আত কবিত্ব করিস নে— বাড়াবাড়ি ভাল নয়। মেঘদূত পড়া একটা ভাল জিনিষ হতে পারে, কিন্তু মেয়েদের পক্ষে মাছের কচুরি ভাজা ষে তার চেয়ে হাজার গুণ ভাল জিনিষ তা অামি এক-শ বার বলব। আরে বাবা-খাটলাম খুটলাম, কাজকৰ্ম্ম করলাম-বাড়ী এসে গিরির হাতের রায় পেট ভরে খেলাম—কবিতা যদি একান্তই পড়তে হয় ত সে তার পরে। কাজেই বোঝ, প্রাত্যহিক জীবনে কবিতার স্থানটা কত পরে। দিনরাত তোর মত কবিতার বই হাতে ক'রে বসে থাকলেই সংসার আপনি চলবে কি না ?” স্বরেশ প্রতিবাদে বোধ করি কিছু বলিতে যাইতেছিল, কিন্তু রেক্ষাবি-হাতে অপর্ণাকে এই সময়ে তাহাদের দিকে আসিতে দেখিয়া অনুকূল চেয়ার ছাড়িয়া কলকোলাহলে তাহাকে অভ্যর্থনা করিল—স্বরেশ কিছু বলিবার স্থযোগ পাইল না। “আম্বন আম্বন বৌদি। খবর পেয়েছি আপনি রান্নাঘরে গেছেন - জানি খালিহাতে কখনও অন্নপূর্ণার আবির্ভাব

    • ষাহণ পাই তাহণ চাই ম'.

Bరివి হবে না—তাই আশা ক’রে বসে আছি। . এই স্বরেশ, ই ক'রে বসে রইলি কেন ? ওঠ না, আর একটা চেয়ার টেনে আন বারাও থেকে ...দিন বৌদি আমার ভাগ কোনটে ।” অপর্ণার চুল বাধা হয় নাই—বস্ত্রে রন্ধনগৃহের সমস্ত চিহ্ন বর্তমান । হলুদমাথা মলিন হাতে একখানি রেকাবি অন্তকুলের হাতে দিয়া হাসিয়া বলিল, “আমি রান্নাঘর থেকে আপনার গলা শুনেছি। বন্ধন, খান •••ওগে, ধর নী রেকাবিথানা ; খাও তোমরা দু-জনে। আমি ততক্ষণ কাজ সেরে আসি। না না, চেয়ারে কাজ নেই, আমি ত এখন বসতে পারব না ।* অমুকুল খাইতে আরম্ভ করিয়াছিল। কচুরি মুখে দিয়া উচ্ছ্বসিত প্রশংসায় মুখরিত হইয়া বলিল, “সত্যি বৌদি, আপনার হাতের মত রান্না আমি কখনও থাই নি। কি করেন বলুন ত? ইন্দুকে দিন না একটু শিখিয়ে। আপনার কাছে রোজ রোজ খাবার চাইতে এলে বাদর স্বরেশটা আবার কোন দিন কি বলবে।” স্বরেশ নীরবে থাইতেছিল। এখন বলিল, “আসিস না রোজ—রোজ কেন দু-বেলাই আসিস না, আমার কোনও আপত্তি নেই।” অপর্ণ চলিয়া যাইবার উদ্যোগ করিয়াছিল ; থামিয়া বলিল, “আমার কাছে রোজ রোজ আসতে হবেই বা কেন ? ইন্দু কি আর এই সামান্ত কচুরি ভেজে আপনাকে খাওয়াতে পারবে না, আপনি যদি চান ?” অনুকূল খাইতে খাইতে বলিল, “বেচারীকে দোষ দেব না বৌদি ; কাল সত্যিই রোধে খাইয়েছিল। সেদিন আপনার কাছে যে ঘুগনি খেয়ে গিয়েছিলাম আমরা দু-জনেই, কাল তাই বলেছিলাম সেই রকম করতে। বেচারী কষ্ট ক'রে করেছিল—কিন্তু এত হলুদ না কি মসলার গন্ধ যে পাতে নিয়ে মহা মুস্কিল। ফেলে ত দিতে পারি নে—কষ্ট হবে ওর মনে । মনে ভাবলাম ওরও সাজ, আমারও সাজা—আর কখনও বলব না ।” অপর্ণ হাসিয়া বলিল, “ছেলেমাঙ্গুয-ছেলেবেলা থেকে পড়াশুনা নিয়েই কাটিয়েছে—সব দিক শেখবার সময় কোথা পাবে বলুন ? অার যা বিস্তে ওর আছে তা আমার এ কচুরি-বিদ্যের চেয়ে ঢের ভাল। আমি ত ওর এক কণা পেলে বেঁচে যেভূম। আপনার বন্ধু ত দিনে পাচ বার নালিশ করেন যে আমি ছোটবেলায় রান্না না শিখে কেন লেখাপড় শিখি নি। কি করব বলুন—ষার যেমন ভাগ্য।” অপর্ণ চলিয়া গেলে অমুকুল মুখের গ্রাস নামাইয়া রাগ করিয়া বলিল, “বোঁদিকে তুমি লেখাপড়ায় খোটা দাও রাস্কেল ? এমন ক্ৰৌপদীর মত হাতের রান্না—তোর