পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৫৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাঘ মাটির বাসণ Sግግ মেয়েদের যতই অবজ্ঞা করুক, তাহাদের সামনে নিজের দৈহিক সমালোচনাট পঞ্চাননের ভাল লাগিল না। মুখ বাকাইয়া বলিল, “খাবার ঢের লোক আছে হে । গত বারে যে গুড় এনেছিলাম গ্রাম থেকে, তাতে তুমিও ভাগ বসিয়েছিলে ।” বিমল বলিল, “ভা বসাব বই কি ? বয়সে না-হয় তুই মাত্র এক বছরের বড়, তাই বলে সম্পর্কে ষে মামা তা ভুলব কেন ? যা আনবি তা আগে ভাগ্নেকে দিবি, তবে নিজে গিলবি । এত বড় আর্য্যবংশাবতংস হয়ে এটা জানিস্ না ?” গাড়ীর ভিত্তরের মাত্রীর দল নিজেদের স্ববিধা-অস্থবিধার চিস্তায় ব্যস্ত। কেহ কাহারও কথার দিকে বড় একটা মন দিতেছে না। মৃণালের কানে কিন্তু পঞ্চানন এবং বিমলের সব কয়টি কথাই আসিয়া পৌছিতেছে । আত মন দিয়া তাহাঁদের কথা শুনিবার তাহার ষে বিশেষ কোন প্রয়োজন ছিল তাহা নয়, তবু কেমন যেন শুনিতে ইচ্ছা করিতেছে । ঐ ছেলেটি সত্যই পঞ্চাননের ভাগ্নে নাকি, না শুধু গ্রামসম্পর্কেই মামা বলিয়া ডাকে ? চেহার বা চালচলনে কোথাও ত বিন্দুমাত্রও সাদৃগু নাই ? ট্রেনটা বিশেষ জোরে চলে না, সারা মাটি মাড়াইয়া চলিয়াছে যেন। পনের মিনিট কুড়ি মিনিট পরে পরে এক একটি ছোট ষ্টেশন, কোথাও বা এক মিনিট দাড়ায়, কোথাও বা দুই মিনিট, কিন্তু ইহারই ভিতর যাত্রী উঠানামার হুড়াছড়ি অবিশ্রাম চলিয়াছে। দেশস্থদ্ধর যেন এই ট্রেনে কলিকাতায় গিয়া না পৌছিলেই নয়। মৃণালের সহযাত্রী বীরেন্দ্রবাবু ঘন্টা-দুই দাড়াইয়া থাকিস্থা এতক্ষণে পঞ্চাননের বেঞ্চেই একটু বসিবার জায়গা করিয়া লইলেন। তাহাকেই সম্বোধন করিয়া বলিলেন, “দেখ বাপু, তোমাদের ভরসায়ই আমার বেরনো। গেয়ে মাহুষ আমি, তোমাদের কলকাতার হালচালও জানি না, রাস্তাঘাটও চিনি না। . আমাকে একটা হিন্দু হোটেল-টোটেল দেখে উঠিয়ে ৎি, আর এই মল্পিক-মশায়ের ভাষ্ঠীটিকে তার বোড়িঙে পৌছে দিও।” পঞ্চাননের আত পরোপকার বরিবার ইচ্ছা ছিল না, ত্তি সোজাম্বজি অস্বীকারই বা করে কি প্রকারে ? তাহার ناسسسسده وانا .লাগিত । উপর মৃণালকে বোর্ভিঙে পৌছাইয়া দিবার প্রস্তাবটা তাহার কাছে মন্দ লাগিল না। বলিল, “আচ্ছ, তা আমি আছি, বিমল আছে, ভাগাভাগি ক’রে হয়ে যাবে এখন ।” মৃণাল মনে মনে আতঙ্কিত হইয়া উঠিল । তাহাকে বোর্ভিঙে পৌছাইয়া দিবার ভারটা যদি পঞ্চানন গ্রহণ করিতে চায়, তাহা হইলেই হইয়াছে আর কি ? ষে যাহাই মনে করুক, সে বীরেনবাবুজের সঙ্গ ছাড়িতেছে না। বিমল ফিশ ফিশ করিয়া বলিল, “লাকী ভগ।” পঞ্চানন গম্ভীর হইবার ব্যর্থ চেষ্টা করিতে করিতে বলিল, “ব, যা, জ্যাঠামি করতে হবে না।” মৃণাল দেখিয়া শুনিয়া আরও হাড়ে হাড়ে জলিয়া গেল । - যাহা হউক, গড়াইতে গড়াইতে ট্রেন অবশেষে গিয়া কলিকাতায় পৌছিল। লোকের ভিড় আর কুলীর চীৎকারে চক্ষুকৰ্ণ ব্যথিত হইয়া উঠে। যাত্রীদের জিনিষপত্রের উপর যেন ডাকাত পড়িল । একেবারে হৈ হৈ রৈ রৈ কাও ৷ বীরেন্স ভীত কণ্ঠে বলিলেন, “দেখে বাপু, শেষ রক্ষা করে। আমি ত এই বুড়ে মামুষকে সামলাব না জিনিষপত্র দেখব, কিছু ঠিক পাচ্ছি না।” পঞ্চাননও তখন নিজের দ্বিয়ের হাড়ি লইয়া ব্যস্ত। অজাত-কুঞ্জাতকে তাহ ছুইতে দিবার তাহার ইচ্ছা নাই, কিন্তু অত বড় হাড়ি সামলাইয়া আর কিছু করাও ত শক্ত। সে হাকিয়া বলিল, “ওরে বিমলে, তোর সঙ্গে ত কিছু জিনিষপত্র নেই, তুই এ দিকে একটু দেখ, না।” বিমল অগ্রসর হইয়া আসিল । বলিল, “আপনাদের জিনিষ কোনগুলো একটু আমায় দেখিয়ে দিন। ও, এই কণ্টা মাত্র ? আচ্ছা আপনারা নেমে পড়ুন, কিছু ভাবতে হবে না, আমি সব গুছিয়ে নামিয়ে নিচ্ছি। দেখবেন সাবধান ।” অতিকায় এক ট্রাঙ্ক মাথায় করিয়া এক মুটে মৃণালের ঘাড়ের উপর আসিয়া পড়িল । বিমল ব্যস্ত হইয়া তাহাকে টানিয়া সরাইয়া ন দিলে মাথায় মৃণালের নিদারুণ আঘাত ভয়ে সঙ্কোচে তাহার বুকের ভিতরটা খরখর করিয়া কাপিয়া উঠিল। 鬱 বীরেন্দ্র স্বাৎকাইয়া বলিয়া উঠিলেন, “কি সব্বনেশে জায়গা রে রাব, প্রাণ নিয়ে বেরতে পারলে ষে বাচি " |