পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৬৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

●s 。 র্তাহাজের অস্তিত্ব ভুলিয়াই থাকি । সত্য বটে, বঙ্গের নিজের দুঃখদুর্দশ এত বেশী যে, আমরা অনায়াসেই বলিতে পারি, যে, আমাদের আর কাহারও কথা ভাবিবার অবসর নাই। কিন্তু আমরা বিহারের, আসামের, ছোটনাগপুরের, অাগ্রা-অযোধ্যার, মধ্যপ্রদেশের এবং বঙ্গের বাহিরের ভারতীয় অন্যান্ত অঞ্চলের বাঙালীদের কথা ত এতটা ভুলিয়া থাকি না। এই ষে ভুলিয়া থাকার অপবাদ ইহা কেবল ব্রহ্মের বাঙালীরাই দেন নাই । একটি মুসলমান ব্যারিষ্টার, বাড়ী এলাহাবাদে, রেজুনে আমাকে বলিতেছিলেন, “ভারতীয় নেতারা অামাদিগকে অবহেলা করিয়াছেন” ( "Our leaders in India have neglected us”) t về sữলোকটি আইনের ডক্টর উপাধিধারী । আমরা অনেকে জানি না, যে, ব্রহ্মদেশে ভারতীয়ের সংখ্যা প্রায় দশ লক্ষ ( ৯,৮১,০০০ ) । ইহার মধ্যে বাঙালীর সংখ্যাও কম নহে। এ-বিষয়ে ভবিষ্যতে কিছু লিখিবার ইচ্ছা আছে। এখন সাহিত্য সম্মেলন সম্বন্ধে কিছু বলি। এই সম্মেলনের অভ্যর্থনা-সমিতির সভাপতি, মূল সভাপতি ও ভিন্ন ভিন্ন শাখার সভাপতিজিগের নাম পৌষের প্রবাসীতে দেওয়া হইয়াছে। মূল সভাপতির বকৃত লিখিত হয় নাই। অন্ত সকলে লিখিত বক্তৃতা পাঠ করেন । তদ্ভিন্ন মূল সভাপতি আচার্ষ্য জগদীশচন্দ্র বস্ব মহাশয়ের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ-সূচক প্রস্তাব সভার সমক্ষে উপস্থাপিত করিয়া একটি বক্তৃত করেন। লিখিত অভিভাষণগুলি বঙ্গে এইরূপ সম্মেলনে পঠিত অভিভাষণসমূহের সহিত তুলনীয়। অনেকগুলি প্রবন্ধও উংকৃষ্ট হইয়াছিল । অভ্যর্থনা-সমিতির সভাপতির অভিভাষণে এবং পঠিত দুইটি প্রবন্ধে ও কোন কোন বক্তৃতায় ব্রহ্মদেশে বাঙালীদের অনেক সামাজিক, শৈক্ষিক ও আর্থিক সমস্যার উল্লেখ ছিল । সেগুলি তাহদের এবং বঙ্গের বাঙালীদেরও গভীর ভাবে আলোচনা করিয়া সমাধান করিবার চেষ্টা করা কর্তব্য । সেগুলির সম্বন্ধে ভবিষ্যতে কিছু লিখিবার ইচ্ছা আছে। ব্ৰহ্মদেশ ভারতবর্ষ হইতে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় ব্রহ্মদেশবাসী সমুদ্রয় ভারতীয়কেই কতকগুলি সমস্যার সম্মুখীন হইতে হইবে । জীবিকার সমস্ত তন্মধ্যে অন্ততম । এই সমস্ত অন্ত ভারতীয়দের চেয়ে বাঙালীদেরই পক্ষে কঠিনতম । কারণ, বাঙালীদের মধ্যে যত বেশী লোক চাকরিজীবী, অন্ত ভারতীয়দের মধ্যে তত বেশী নহে । ব্রহ্মদেশে ইংরেজী শিক্ষার বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে ব্ৰহ্মদেশীয়ের ক্রমশঃ অধিক পরিমাণে সরকারী চাকরি পাইতে থাকিবে । বাঙালীদিগকে তখন ক্রমশঃ অধিক পরিমাণে অন্ত বৃত্তি অবলম্বন করিতে হইবে, কিংবা বঙ্গে ফিরিবার পথ থাকিলে ফিরিয়া আসিতে হইবে, নতুবা বেকার হইতে হইবে। প্রবাসী ఫి ల83 ব্লন্ধের বিদ্যালয়সমূহে ও রেজুন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ লাভার্থ ব্ৰহ্মদেশীয় ভাষা অবশুশিক্ষণীয় হওয়ায় বাঙালা বালকবালিকাদের শিক্ষার ক্ষেত্রেও একটি সমস্যার উদ্ভব হইয়াছে । বাংলা ন-জানিলে তাহার বঙ্গের সংস্কৃতির সহিত যোগ রাখিতে না পারিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হইবে—ঠিক বাঙালী থাকিবে না ; আবার বম ভাষা না-শিখিলে তথাকার স্কুল-কলেজে স্থান পাইবে না । বঙ্গে ছেলেমেয়েদিগকে পাঠাইয়া বাংল। শিখাইবার সুযোগ ও সামর্থ কম অভিভাবকেরই আছে, ব্ৰহ্মদেশে কিছু শিক্ষা দিয়া পরে উচ্চতর শিক্ষার জন্য বঙ্গে পাঠাইতে হইলেও বাংলা জ্ঞান চাই। অবশু ইংরেজী ছাড়া আরও দুটা ভাষা শেখ অসাধ্য নহে। জামেনীর বহু বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীরা জামান ছাড়া আরও দুটা আধুনিক ইউরোপীয় ভাষা শিখিতে বাধ্য হয়। আমাদের ছেলেমেয়েরা তাহদের চেয়ে কম বুদ্ধিমান নয় । আমি রেজুন, মাণ্ডালে ও মেমিও এই তিনটি শহর দেখিয়াছি। রেজুনে অনেক বৎসর হইতে বেঙ্গল একাডেমি বিদ্যালয়ে ছাত্র ও ছাত্রীদিগকে বাংলা শিখাইবার ব্যবস্থ৷ আছে। তম্ভিন্ন চারি বৎসর পূৰ্ব্বে চট্টল-সমিতির গৃহে বাণীমন্দির স্কুল নামক যে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়, সেখানে ৭ম শ্রেণী পৰ্য্যন্ত শিক্ষার ব্যবস্থা আছে। তাহাতে সব বিষয় পড়ান হয় বাংলায়, তা ছাড়া ইংরেজী ও ব্ৰহ্ম ভাষা শেখান হয় । ইহার বর্তমান ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ২৫০ । ইহার নূতন গৃহ নিৰ্ম্মিত হইয়াছে। ইহার এই গুহে প্রবেশ উপলক্ষ্যে প্রবাসী-সম্পাদককে লইয়া যে ফোটোগ্রাফ তোলা হয়, তাহা মুদ্রিত হইল। ইহার কর্তৃপক্ষের উৎসাহ ও উদ্যোগিতা প্রশংসনীয় । মাণ্ডালেতে বাঙালী ছোট ছেলেমেয়েদের জন্য সম্প্রতি একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা হইয়াছে। কালক্রমে ইহার ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বাড়িবে এবং ইহা মধ্য ও পরে উচ্চ বিদ্যালয়ে পরিণত হইবে। ইহার কর্তৃপক্ষ, শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের উৎসাহ দেখিয়া প্রীত হইয়াছিলাম। মেমিও ব্রহ্মের গবন্মে’ন্টের গ্রীষ্মকালীন শৈলাবাস। এখানে বাঙালী ছেলেমেয়েদের জন্ত একটি মধ্য-বিদ্যালয় আছে । তাহার নিজের বাড়ী আছে । ছাত্রছাত্রীর ংখ্যা ৭০এর উপর। ছেলেমেয়েদের খেলা ও দৌড়ঝাপ দেখিয়া প্রীত হই । বেঙ্গল একাডেমি ছাত্রবিভাগ ও ছাত্রীবিভাগে বিভক্ত । উভয়ে মোট ৫০০ ছাত্রছাত্রী শিক্ষা পায়। বাড়ী নিজস্ব । বহু বৎসর ধরিয়া সরকারী পরীক্ষায়ু ছাত্রছাত্রীরা কৃতিত্ব দেখাইয়াছে এবং সরকারী অনেক বৃত্তিও পাইয়াছে । ইহার ছাত্রেরা খেলা ও নানাবিধ ব্যায়ামেও ব্রহ্মদেশের স্কুলসমূহের মধ্যে প্রসিদ্ধ। ছাত্রীদের নানাবিধ ড্রিল দেখিয়া প্রীত হই।