পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৬৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

झोड्छन्। সেদিন মলয়া বলিল, “সত্যি মেজ, তোর উপর আমার ভারী হিংসে হয়, কেমন নিজের সংসারটা গুছিয়ে নিলে বল ত ?” অঞ্জলি বলে, “কেন দিদি, সংসার ত তোমারই । আমি আর ওর কি করি বল ? বরং আমার হিংসে হয়, ও এসে তোমার কাছ থেকে আমার আদরটুকু কেড়ে নিয়েছে। এখন কি আর তুমি আমায় দেখ। আগে কত দেখতে বল ত ?” মলয়ার অন্তর অপূৰ্ব্ব পুলকে ভরিয়া উঠে, যেন তাহার সব অভাবই গিয়াছে। সে অঞ্জলির কথার উত্তরে বলে, “এখন ছেলের সঙ্গে হিংসে, নয় ?” অঞ্জলি “নয় ত কি ?” বলিয়া মুখ টিপিয়া হাসিয়া আরক্ত মুখে আবার কাথা সেলাইয়ের জন্য মাথা নামায় । আবার কিছুক্ষণের জন্য সব চুপ। মলয়া বলিল, “হঁ্যা মেজ-ঠাকুরপোকে যা বলতে বলেছিলাম বলেছিলে ?” অঞ্জলি বলিল, “হ্যা, তিনি বললেন যে সে-সব দাদা জানেন । আমি কি করব ? আর সত্যি দিদি, তিনি কি করবেন ? যা করবার তোমরা কর ভাই । আমরা শুধু হুকুম শুনব ? মলয় বলিল, “ঠিক ত ? কিন্তু ঠাকুরপোর বন্ধুবান্ধব কাকে কাকে বলতে হবে সে ত জানা নেই। সেটা কে করবে ?” অঞ্জলি বলিল, আবার বন্ধুবান্ধবের হাঙ্গামা কেন দিদি ? একে মা-বাবাকে আসতে লিখেছ, তার খরচ । এখানকারও লোকজন কম নয় ; তার উপর আবার বন্ধুবান্ধব । তুমি যেন কি করবে ভেবে পাচ্ছ না। ব্যাপার ত একটা ছেলের ভাত ।” মলয়া একটু ভঙ্গীতে বলিল, “হ্যাঁ, তোমার আর গিল্পীপনা করতে হবে না। তুমি ভারী গিল্পী হয়ে উঠেছ। একটা ছেলের ভাত বইকি ! এ একটি ছেলে আর সব ছেলের সমান নাকি ? বলে আমার খোকামণির ভাত হবে । আমি আমার খোকামণির সারা গায়ে গহনা দিয়ে দেখাব । খরচ-পত্তর আর কার জন্ত তুলে রাখব ? बकT WERふ খবরদার, আর এসব কথা ব’লো না বউ, রাগ হয় । সবার সঙ্গে আমার সোনার চাদের তুল্যি!” বলিয়া হাতের কাজ ফেলিয়া রাখিয়া খোকাকে সে তুলিয়া লয়, আর কেবলই চুমা খাইতে থাকে, খোকা খিল খিল করিয়া হাসিয়া উঠে। মলয়া ত বোঝে না, কিন্তু অঞ্জলি বোঝে যে আজ তাকার কাছে ও-ছেলের যত দাম, সব মায়ের কাছেই সব সস্তানের ঐ একই দাম । অঞ্জলি মনে মনে হাসে এবং তাহার পুত্রকে এক জন এত ভালবাসে জানিয়া মনে অসীম তৃপ্তি অনুভব করে। তার পর ক্রমশ খোকার অন্নপ্রাশনের দিন স্থির হইয়া গেল। দেবেশের দাদা শ্ৰীশ প্রবল উৎসাহে ভ্রাতৃপূত্রের অন্নপ্রাশনের ব্যবস্থায় লাগিয়া গেলেন। মলয়া কোমরে আঁচল জড়াইয়া আগাগোড়া কাজ দেখিতে লাগিয়া গেল । তাতের বাকী আর পনর দিন। পনর দিন আগেই অঞ্জলির পিতামাতা ও ছোট ভাই আসিল, মলয়া তাহাদের যত্ন করিয়া অভ্যর্থনা করিল। নাতিকে পাইয়া সুখদাম্বন্দর অত্যন্ত আনন্দিত হইলেন ; আর কেই বা না হইবে। সত্যই ছেলেটি দেখিতে একটি সদ্যপ্রস্ফুটিত ফুলেরই মত, তাহার মাথায় কোকড়া-কেঁকড়া কালে রেশমের মত চুল, আর ঠোঁট দুটি কি লাল । সুখদাসুন্দরী এখন প্রায়ই খোকাকে লইয়া থাকেন। মলয়া কাজে ব্যস্ত থাকে। অঞ্জলি দিদির সঙ্গে সঙ্গে থাকে। কাজে কাজেই মলয়া এখন আর সময় পায় না বেশীক্ষণ পোকাকে দেখিতে। সে এক রকম ভাল— কাজগুলি সারা হইতেছে ত । সারা বাড়ীটা ঝাড়িয়া মুছিয়া প্রসাধন করিল। অন্নপ্রাশনের দু-দিন আগে বাড়ীখানা ঝলমল করিতে লাগিল । সারাদিন খাটিয়া চুনকাম-করা বড়িীখান চাকরবাকর দিয়া সাফ করাইয়া সন্ধ্যার আগে দুই জায়ে কলতলায় গেল স্নান করিতে । সাবান দিয়া গা ঘষিতে ঘষিতে আজ মলয়ার গলার মাজুলিগুলি বড় বেশী শব্দ করিতে লাগিল। সেগুলি যেন একটা বোঝা । কি ভাবিয়া সে পটু পটু করিয়া সেগুলি ছিড়িয়া ফেলিতে লাগিল। অঞ্জলি মুখে চোখে সাবান মাখিয়া কলের জলে মুখ ধুইতেছিল, সে কিছু,