পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৭০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

سیSobہوا প্রবাসী NNඑංHI গুরুজন তুমি, তোমার স্ত্রী হবে তেমন। যাই হোক, আমি নেমন্তয় খেতে পেলেই খুনী । আচ্ছা কিশোরীমোহন রায়ের বাড়ী কোথায় বলতে পার ? বীরেনবাবুর মাসতুতে ভগ্নীপতি। বৃদ্ধ ভার দিয়েছেন আমায় তার বাড়ী খুঁজে দিতে ” পঞ্চানন বলিল, “ঠিক বলতে পারি না, তবে মুকিয়া ষ্ট্রীটে থাকেন তিনি। কর্ণওয়ালিস্ ষ্ট্রীটের মোড়টার কাছাকাছি।” বিমল বলিল, “আচ্ছ, খুজে নেব। তবে তুমি এখন দুদু থাও, আমি উঠি ” পঞ্চাননের বাড়ী হইয়া সে চলিল সুকিয়া ষ্ট্রীটের দিকে। একেবারে জামাইয়ের খোঁজখবর সহ উপস্থিত হইতে পারিলে বৃদ্ধ খুশী হইবেন। তাহাদের স্কন্ধে একবার মাতাপুত্রকে তুলিয়া দিতে পারিলে বিমলও দায় হইতে অব্যাহতি পাইবে । পঞ্চমামা যে পরোপকার করিতে এক পাও বাড়াইবে, এমন ত কোনও লক্ষণ দেখা গেল না । অনেক ঘোরাঘুরি করিয়। তবে সে ভদ্রলোকের বাড়ী আবিষ্কার করিল। আগমনের কারণ শুনিয়া কৰ্ত্তা তাহাকে খাতির করিয়া বসাইলেন । এধার-ওধার তাকাইয়া পরিবারটিকে বিমলের সম্পন্নই বোধ হইল। । মাসীমাকে পুত্র সহ দিন-কয়েক স্থান দিতে ইহার কাতর হইবেন না বোধ হয়। অবশ্য যদি সেরকম ইচ্ছা থাকে। মাসীমার আগমন-সংবাদে অন্দরমহলে একটু চাঞ্চল্যের সঞ্চার হইয়াছে বুঝা গেল। দুই-তিনটি ছেলেমেয়ে আসিয়া তাহাকে উকি মারিয়া দেখিয়া গেল । তাহাকে চা খাইতেও একবার অনুরোধ করা হইল, সে সেটা সসম্মানে প্রত্যাখ্যান করিল। অবশেষে কৰ্ত্তা ভিতর বাড়ী ঘুরিয়া আসিয়া বলিলেন যে গৃহিণী গাড়ী করিয়া এখনই গিয়া মাসীমাকে লইয়। আসিতে চান। বিমল যদি অনুগ্রহ করিয়া কর্ণধারের কাজটা সারিয়া দেন ত ভাল, কারণ র্তাহার আবার আপিসের বেলা হইয়া যাইবে। বিমলের আপত্তি ছিল না। তবে আরও মিনিট কুড়ি তাহাকে বসিতে হইল। এর কমে বাংলা দেশের স্ত্রীলোক বাহিরে যাইবার জন্য প্রস্তুত হইতে পারেন না। গৃহিণী তৰু মধ্যবয়স্ক, তাহার সঙ্গে ছোট দুটি মেয়ে চলিল, তাহাদের চুলের ফিতা বাধা ও মুখে পাউডার মাথার ঘটাতেই দেরিটা বেশী করিয়া হইল । অবশেষে সকলে বাহির হইয়া পড়িলেন। ইহাদের সঙ্গে সাক্ষাৎভাবে পরিচয় না থাকাতে বিমল আর গাড়ীর ভিতরে বসিল না, উপরে কোচম্যানের পাশেই বসিল । হোটেলে পৌছিতে বেশী দেরি হইল না। বৃদ্ধ ত বোনকিকে দেখিয়া বৰ্ত্তাইয়া গেলেন । পুণ্য করিতে আসিয়া এমন অদ্ভূত জায়গায় উঠিয়া তাহার আর অস্বস্তির সীমা ছিল না। বিশেষ করিয়া এথানকার ঝি, চাকর, ঠাকুর প্রভূতিকে তিনি সন্দেহের চক্ষে দেখিতেছিলেন । ইহারা যে সকলেই মুচি বা মুদফরাস, জাত ভাড়াইয়া কাজ করিতেছে, এই মহাভয় তাহাকে পাইয়া বসিয়াছিল। বোনঝির চিবুকে হাত দিয়া বারবার হস্তচুম্বন করিতে করিতে তিনি বলিতে লাগিলেন, “ভাগ্যিস্ এলি মা, বাঁচলাম। এখানে জলটুকু খেতে মৃদ্ধ ভরসা হচ্ছিল না।” - র্তাহার বোনঝি বলিলেন, “মাসীমা, গুছিয়ে নাও, এখনি বেরিয়ে পড়ি। ওঁর অফিসের গাড়ী, বেশীক্ষণ ত বসতে পারব না ?” - গুছাইবার জিনিষ বড় বেশী কিছু ছিল না, ঘটিবাটি আর খান-কয়েক কাপড়। তাহাই পুটলি বাধিয়। হোটেলের বিল চুকাইয়া দিয়া, তাহার নামিয়া আসিলেন। বিমল র্তাহীদের সঙ্গে সঙ্গে নামিয়া আসিয়া বলিল, “আমি তাহ’লে আসি এখন ?” বীরেনবাৰু বলিলেন, “একেবারে পালালে চলবে না, বাবা । দেখা করতে হবে রোজ ! আমি এখানকার কিছু জানি না, চিনি না।” বিমল বলিল, “নিশ্চয়, দেখা করব বই কি ?” বীরেনবাবু জিজ্ঞাসা করিলেন, “তোমার ঠিকানাট কি, বাবা ?” বিমল ঠিকানা বলিয়া তাড়াতাড়ি সরিয়া পড়িল । তাহার ট্রাম আসিয়া পড়িয়াছে। পড়াশুনা তাহার ভাল হইতেছে না, স্কলারশিপের আশা রাখিলে আরও ভাল করিয়া পড়া উচিত। কিন্তু নানা দিকের নানা ঝঙ্কাট আসিয়া জুটে, সে কিছুই বাড়িয়া ফেলিতে পারে না ।