পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৭১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ఆ8 R ভিতর ঢুকিয়া পড়িল। বিমল ছটিয়া গিয়া তাহার কাপড়ের পুটলিট। তাহার হাতে দিয়া আসিল । আবার বাহিরে ফিরিয়া আসিয়া দেখিল পঞ্চানন পেচার মত মুখ করিয়া বৈঠকখানার ঘরে একলা বসিয়া আছে । বীরেনবাবু কোথাও কাজে বাহির হইয়াছেন, নয় ভিতরে ঢুকিয়াছেন। বিমলকে দেখিয়াই পঞ্চানন বলিল, “কি হে ভাগ্নে, সকালবেলাই কোথায় চরতে বেরিয়েছিলে ?” বিমল বলিল, “কোথায় আর চরব, ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়াচ্ছি। তা তোমার মুখ দেখে ত মনে হচ্ছে না যে নিজেও না চ’রে এসেছ, এত দেরি কেন ?” পঞ্চানন মুখটা বিকৃত করিয়া বলিল, “সকালে আমার অনেক কাজ থাকে জানই ত। গ্যাল্যাষ্টি করবার লোভে ত খাওয়াদাওয়া পূজাআচ্চা ছেড়ে তোরবেলাই ছুটে বেরিয়ে পড়তে পারি না ?” বিমল ভাবিল, “আহ, বাছার আমার গাছে নাউঠতেই এককাদি, দিতে হয় থ্যাবড়া নাকে কিল বসিয়ে ” মুখে বলিল, “ত গ্যাল্যাস্ট্রি, জিনিষটা জগতে যখন আছে তখন কেউ না করলে চলবে কেন ? এতে তোমার মত ধাৰ্শ্বিকরা বসে বসে পুজো করবার কত অবসর পায় দেখ না ?” পঞ্চানন খানিক চুপ করিয়া থাকিয়া বলিল, “কলকাতা শহরে কি গাড়ীর অভাব পড়েছিল ?” বিমল বুঝিতেই পারিয়াছিল পঞ্চাননের রাগের আসল কারণ কোনখানে । একে ট্রাম, তাহাতে সঙ্গে বিমল । মৃণাল যেন ইহারই মধ্যে তাহার সহধৰ্ম্মিণী হইয়া উঠিয়াছে, এমনই তাহার ধরণ। সে বলিল, “গাড়ী থাকবে না কেন ? কিন্তু ট্রামে উঠলেই বা ক্ষতি কি ? গায়ে একটু বাইরের হাওয়া লাগলেই কি কেউ ক্ষয়ে যায় ?” পঞ্চানন বলিল, “ক্ষয়ে যায় কি ম’রে ষায় সে কথা তোমার মত মুখকে বোঝাব কি ক’রে ? আমার মতে কাজটা অন্যায় হয়েছে।” বিমল বিরক্ত হইয়া বলিল, “আমার মতে বিন্দুমাত্র অন্যায় হয় নি। আর যিনি এসেছেন, এবং যিনি তাকে নিয়ে এসেছেন, দুজনের একজনেরও যখন ট্রাম সম্বন্ধে কোনও আপত্তি নেই, তখন তোমার আত মাথা ঘামাবার প্রবাসী SN983 দরকার নেই । যখন অধিকার হবে তখন খাটিও, এখন এগুলো অনধিকারচর্চা ।” ইহার কোনও সদুত্তর ছিল না। কিন্তু তাই বলিয়া পঞ্চানন চুপ করিয়া থাকিত না। কিন্তু বীরেনবাবু আবার এই সময় বাহির হইয়া আসায় তাহাকে চুপ করিয়া যাইতে হইল। তিনি আসিয়া বলিলেন, “বাবা পঞ্চু, মা তোমাকে দশটি সদব্ৰাহ্মণের নাম করতে বলছেন, তাদের এখনই নেমস্তন্ন ক’রে আসতে হবে। আর বিমল বাবা, তুমি যদি খাওয়াদাওয়া সেরে একবার এস, তাহ’লে তখন বাজারটা সেরে আসা যায় ।” পঞ্চানন বলিল, “আচ্ছা দেখছি।" বলিয়া পকেট হইতে কাগজ পেন্সিল বাহির করিয়া ফর্দ করিতে লাগিয়া গেল । “আচ্ছ, আমি তাহ’লে নাওয়া-খাওয়া সেরে আসব” বলিয়া বিমল বাহির হইয়া গেল । পথে যাইতে যাইতে মনের বিরক্তিটা খানিক তাহার কাটিয়া গেল। মেয়েটি সত্যই দেখিতে মনোরম, স্বভাবটিও কোমল ও মুন্দর বলিয়া বোধ হয়। কলিকাতার অত্যুগ্র আধুনিকতা তাহার মধ্যে নাই, আবার পাড়াগায়ের জড়ভরত ভাবটাও নাই। পঞ্চমামার বোধ হয় মেয়েটিকে খুবই ভাল লাগিয়াছে, না হইলে এখন হইতেই তাহার সম্বন্ধে এমন উগ্র সচেতনতা কেন ? যা মানাইবে, যেন মৰ্কটের গলায় মুক্তার হার। বেচারী মৃণাল ! মল্লিকমহাশয় কি আর জগতে পাত্র খুজিয়া পান নাই ? কিন্তু জগতে যোগ্যের সহিত অযোগ্যের মিলন ঢের হয়, বিমল তাহার জন্য হাহুতাশ করিয়া কিছুই করিতে পারিবে না। তবে মেয়েটি কোমল-স্বভাব হইলেও একেবারে মাটির মানুষ নয়, তেজ আছে খানিকটা ভিতরে। পঞ্চমামার অদৃষ্টে কিঞ্চিং ঘোল খাওয়া আছে। মেসের কাছে আসিয়া বিমল ট্রাম হইতে নামিয়া পড়িল । একটু হাসিয়া নিজের মনকে মৃদু তিরস্কার করিল। সারাটা পথই সে মৃণালের তাবনা ভাবিতে ভাবিতে আসিয়াছে। পঞ্চানন জানিলে তাহাকে আস্ত গিলিয়া খাইবে । তাহার মতে মৃণাল এখনই বিমলের গুরুজন'স্থানীয়া, সেইমত চলা উচিত বিমলের । তা আর কি করা বায় ? মনের উপর ত মামুষের হাত নাই ? [ ক্রমশঃ ]