পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৭১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গীতাঞ্জলির জন্মকথা শ্ৰীমুধাকান্ত রায়চৌধুরী শান্তিনিকেতন বিদ্যালয় রচনার সঙ্গে-সঙ্গেই আরম্ভ হয়েছিল গীতাঞ্জলি রচনা। অর্থাৎ ইংরেজী গীতাঞ্জলিতেও যে সব বাংলা গানের ইংরেজী রূপান্তর বা অতুবাদ স্থান পেয়েছে, সেই সব গানের রচনাকালেই রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতন বিদ্যালয় রচনায় রত ছিলেন । আমাদের মনে হয় এই দুইয়ের মধ্যে র্তার একই মনোভাব। এটা বোধ হয় সকলেই লক্ষ্য ক’রে থাকবেন যে জীবনের পর্বে পর্বে বাধন কাটিয়ে নূতন মুক্তির পথে বেরিয়ে পড়তে চান, এইটাই কবির স্বভাব। গীতাঞ্জলি রচনার আগেকার পালা ছিল তার রস-সাহিত্যের পালা । “সোনার তরী” ও ‘ক্ষণিকা’য় তার পরিচয় পাই । সেই সময়টাতে তিনি বেশীর ভাগ থাকতেন শিলাইদহে--সঙ্গে সঙ্গে ছিল তার বিষয়কৰ্ম্ম। কিন্তু সেই কৰ্ম্মেও ছিল তার পুৰ্ব্বজীবন হতে মুক্তি। বিষয়কৰ্ম্মে লিপ্ত হবার পূৰ্ব্বে ছিলেন তিনি পারিবারিক বেড়ার মধ্যে, শহরের গণ্ডিতে। কাজের ছুতোয় বেরিয়ে পড়লেন বাংলা দেশের পাড়াগায়ে ; সেখানে প্রকৃতির এবং মামুষের স্পর্শ পেতে লাগলেন বিচিত্রভাবে,—তার স্বাভাবিক সৌন্দৰ্য্যবোধের সঙ্গে মিলে চলল বাংলার পল্লীতে জীবনযাত্রায় বাস্তবের বোধ । নূতন অভিজ্ঞতার বিস্তারে তার আনন্দের লক্ষণ বিশেষ ভাবে দেখতে পাই গল্পগুচ্ছে । যখন র্তার বয়স পৌছল চল্লিশের কাছাকাছি, হঠাৎ তার মন ব’লে উঠল, এর থেকেও বেরিয়ে পড়ব, কাজের ক্ষেত্রে মুক্তি নেব। কিন্তু বিষয়কাজ ত ছিল। সে-কাজের ভিতর দিয়ে যত ক্ষণ সাহিত্য-রসলোকের দরজা খোলা পেয়েছিলেন, তত ক্ষণ সেটাই তাকে মুক্তির আস্বাদ দিয়েছিল। কিন্তু কাজের দিক থেকে বিষয়-কাজ কখনও মুক্তি দিতে পারে না। তার বাধন কাটাবার জন্য, স্বার্থের বাইরে অবৈষয়িক কাজের ক্ষেত্রে তার ডাক পড়ল। এই মুক্তির জন্তে তার চাঞ্চল্যের আবেগ আমরা দেখতে পাই “এবার ফিরাও মোরে" কবিত্মসআমার মনে হয় তারও আগেকার লেখা “যেতে নাহি দিব" কবিতার মধ্যেও অনিবাৰ্য্য টানে পারিবারিকতার বাইরে বেরোবার একটা ঝোকের ভাব যেন পাওয়া যায়। হঠাৎ একটা সময়ে বিষয়-কাজের ভিতর থেকে অবৈষয়িক কাজের ক্ষেত্রে কবি বেরিয়ে পড়লেন। রইল পড়ে তার বোট, তার পদ্মার চর, শিলাইদহের নানা ফসলের নানা রঙের ক্ষেত, আর শিলাইদহের কুঠিবাড়ীর তিন তলায় সিড়িঘরের কোণটুকু। যেখানে এলেন সেখানে দিগন্তজোড়া শূন্ত মাঠ ; মাঝে মাঝে দূরে দূরে দুটাে-চারটে তাল গাছ, নদীর বদলে মাটি-খোদাই-করা শুকনো নদীপথের মতই খোয়াই, লাল কাকরে বিছানো। তখন শান্তিনিকেতনে গাছপালা খুব কমই ছিল, কেবল আশ্রমের দক্ষিণ সীমানায় ছিল শালের বীথিক, পশ্চিম সীমানায় ছিল এক জোড়া বহুকেলে ছাতিম গাছ, আর উত্তর দিক দিয়ে আশ্রমে ঢোকবার পথে দুধারে কয়েকটি আমলকী গাছের সারি। এখানকার প্রকৃতি শিলাইদহের ঠিক উলুটাে, রুক্ষ শূন্য ফ্যাকাসে, ছায়াঘন গ্রামের আবাস থেকে দূরে। এই খানে তার মনের সুর বদল হ’ল, জমিদারী-আবহাওয়া থেকে যেন হাপিয়ে উঠে বেরিয়ে এলেন একটা এমন জগতে যেখানে রুদ্রের পীঠস্থান, জীবনটা হ'ল সাদাসিধে, এমন কি আমাদের মত মধ্যবিত্ত জীবনের মাপকাঠির নীচের মাপের সীমায়। সেদিন তার এই অকিঞ্চনতা পোষাকী ছিল না, এ ছিল অগত্যা। যে-দায়িত্ব নিলেন স্বাচ্ছন্দ্যে তার খরচ কুলোবার মত অবস্থা একেবারেই ছিল না। শুনেছি তখন ছাত্রেরা শুধু ষে বেতন দিত না তা নয়, তাদের অনেকের খাওয়-পরা বাসন-কোসন