পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৭১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যাত্রা শুভ ঐবিজয় গুপ্ত শেষরাত্রে সুবলগা ষ্টেশনে নামিয়া জটাধর গ্রামাভিমুখেই চলিয়াছে। ফাঙ্কনের শেষ ; অস্পষ্ট কুয়াশায় দূরের গ্রামখানি ভাল করিয়া দৃষ্টিগোচর হয় না। দশমীর চন্দ্র সমস্ত রাত্রি জাগরণের পর যেন শ্রান্ত হইয়া পড়িয়াছে। আবছা, পাণ্ডুর জ্যোৎস্নায় নিদ্রিত ধরণীকে স্বপ্নপুরীর মত দেখাইতেছে। পথ চলিতে চলিতে কুয়াশার আবরণ ভেদ করিয়া সহসা একান্ত সম্মুখে দেখা যায় পল্লববিস্তারী বিরাট বটবৃক্ষ অথবা গ্রামবাসীদের খড়ে চালের শ্রেণীবদ্ধ ধূসর ছবি । জটাধর দ্রুতপদে অগ্রসর হইতে লাগিল। আর একখানা গ্রাম পার হইলেই রূপোখালি। আরও কিছু দূর অগ্রসর হইয়া বাণেশ্বরের সান-বাধানো চত্বরে জটাধর নতজামু হইয়া ভক্তিতরে প্রণাম করিল। কি প্রার্থনা করিল সে-ই জানে। তার পরে বাণেশ্বরকে বামে রাখিয়া দ্রুতপদে মাঠে নামিয়া পড়িল ।... প্রভাতের পূৰ্ব্বে কেশবের নিকট পৌছিতেই হইবে । এ-বৎসরটা বড়ই মন্দা গেল । দেখা যাক, শেষের দিকে যদি কিছু জুটিয়া যায়। শুভ কাজটা চুকিয় গেলে কেশবের নিকট হইতে ঘটক-বিদায় হিসাবে দু-পাচ বিঘা জমি নিশ্চয়' পাওয়া যাইবে । আজই, যেমন করিয়া হউক, মেয়ে দেখাইয়া একটা পাকাপাকি বন্দোবস্ত করিয়া ফেলিতে হইবে । আজ না হইলে পঞ্জিকার মতে সমস্ত মাসের মধ্যে আর একটিও শুভদিন নাই। ভাবিতে ভাবিতে পথটা ফুরাইয়া আসিল । বেলডাঙার শালুকদীঘির পাড় অতিক্রম করিয়া জটাধর কেশবের দাওয়ার সম্মুখে গিয়া ডাকিল, ‘কেশব, ও কেশব, *س-چtal fت ভিতর হইতে সাড়া আসিল, ‘কে জটিল নাকি ? জটাধর হাসিয়া উঠিল, বলিল, ‘তবু ভাল, আমি বলি, ভায়া বুঝি ঘুমিয়ে কাদা হয়ে গেছে।’ কেশব দ্বার খুলিয়া বাহিরে আসিয়া দাড়াইল। মুন্দর, দীর্ঘচ্ছন্দ চেহারা, ত্রিশ বোধ হয় সবে পার হইয়াছে। চোখে বুদ্ধির উজ্জল দীপ্তি, মুখে শিশুসুলভ সরল কোমলতা। জটাধর তীক্ষদৃষ্টিতে কেশবের মুখের প্রতি চাহিল । অমন মন্থণ ললাটেও যেন চিন্তার কুটিল রেখা জাগিয়াছে, মুখের পরিচ্ছন্ন দীপ্তিতেও যেন দুশ্চিন্তার মানিমা দেখা দিয়াছে। দাওয়ায় উঠিতে উঠিতে জটাধর বলিল, দাড়িয়ে রইলো যে, নাও তৈরি হয়ে নাও s' তথাপি কেশবের কোন আগ্রহ দেখা গেল না । আরও কিছুক্ষণ নীরবে কাটিয়া গেল। জটাধরের নিকট আগাগোড়া সমস্তটাই যেন দুৰ্ব্বোধ্য বোধ হইতে লাগিল।... এত দূর আনিয়া তরী বুঝি ডুবিয়া যায়। কত হাটাহঁাটি করিয়া যে মেয়ে দেখিবার জন্য কেশবকে সম্মত করা হইয়াছে তাহার আর আদি-অন্ত নাই। দুৰ্ব্বলতা ও নৈরাশ্যে জটাধরের কণ্ঠতালু শুষ্ক হইয়া আসিল ; তবুও কণ্ঠস্বরে সরসতা আনিয়া জটাধর বলিল, নাও ভায়া, তৈরি হও,—শুভ সময়ে বেরুতে হবে।’ কেশব বিমর্ষ মুখে জবাব দিল, “কিন্তু আজ কেমন ক’রে হবে জটিদা। আজ যে একবার কনকপুরে যাব ভাবছি ? কনকপুর ? জটাধরের কণ্ঠস্বরে বিস্ময় প্রকাশ পাইল । ‘হু”, বলিয়া শয্যার তলদেশ হইতে কেশব একখানা চিঠি বাহির করিয়া জটাধরের হাতে দিল । ব্যাপারটা ক্রমশই জটিল হইয়া উঠিতেছে, তথাপি ধীরভাবে জটাধর বলিল, “তুমিই পড় না শুনি । কেশব উঠিয়া পূৰ্ব্ব দিকের জানালাটা খুলিয়া দিল, তার পর চিঠিখানি চোখের সামনে মেলিয়া ধরিয়া ধীরে ধীরে পড়িল :– পরম কল্যাণীয়, & বাবাজীবন, দুর্ভাগ্যক্রমে গত আট বৎসর তোমার সহিত কোন সম্পর্কই আমাদের নাই। তথাপি কৰ্ত্তব্যের অমুরোধে জানাইতেছি যে, গত কয়েক মাস হইতে কল্যাণী কঠিন পীড়ায় শয্যাশায়ী। অবস্থা দিন দিন খারাপ হইয়া, আসিতেছে, চিকিৎসকেরা সকলেই প্রায় জবাব দিয়াছেন । পার ত শেষ দেখা দেখিবার জন্য একবার আসিও । আমি আমার কর্তব্য করিলাম, তুমি তোমার বিবেচনায় যাহা হয় করিও । আশীৰ্ব্বাদ জানিও, ইতি ● শ্ৰীঅন্নদাপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় । চিঠিটা শেষ হইতে-না-হইতেই জটাধর বিকটভাবে হাসিয়া উঠিল। হাসি যেন তাহার কিছুতেই থামিবে না। অবশেষে অনেক কষ্টে হাসি সংবরণ করিয়া কেশবের বিস্ময়বিহ্বল মুখের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করিয়া