পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৭৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৭২২ প্রাণাস্ত। ডলার আবার নানা রকম, চীনা ডলার, সিঙ্গাপুরী ডলার, আমেরিকান ডলার। কুইনস্ রোডে বড় বড় অনেক দোকানপাট আছে। কিছু চীনা জিনিষ কেনবার ইচ্ছায় টমাস কুকের এক জন চীনা ভদ্রলোককে একটা ভাল দোকানের নাম জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বলে দিলে আমরা সেই দিকে চললাম । বাস্তায় পা দিয়েই চীনাম্যানের ভিড় দেখে কেমন যেন অবাস্তব মনে হয় । ম্যাপেতে চীন দেশ দেখে কল্পনায় তার সম্বন্ধে নানা রকম বেশ ভাবা যায়। কিন্তু সশরীরে মাটির দেশের উপর ফুটপাথ দিয়ে ইটুেতে হাটুতে চারি পাশে খালি শত শত চীনা দেখলে কেমন যেন নিজেকে নিজে এবং চীনকে চীন বলে বিশ্বাস হচ্ছিল না । স্বৰ্গীয় দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের “বিলেত দেশটা মাটির” গানটা মনে আসে। এমন বেশী বাস্তব এবং আধুনিক ভাবে চীন দেশ দেখলে তাকে চীন মনে করতে মনট একটু ইতস্তত করে । অবশু, হংকং ইংরেজের চীন সে-কথা ভূললে চলবে না। যাই হোক, পথে খানিকটা ঠাটতেই আমাদের কল্পনার চীনের নমুনা কিছু কিছু চোখে পড়তে লাগল। এখন আর মনে হচ্ছে না যে কলকাতার বেণ্টিঙ্ক ষ্ট্রীটের পালিশ-করা সংস্করণরা অকস্মাং দলে দলে চৌরঙ্গীতে ছাড়া পেয়েছে এবং ভারতীয়দের কে রূপার কাঠি ছুইয়ে সব ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে। চৈনিক শিশুর পাল সৰ্ব্বপ্রথম আমাদের সচকিত করে তুলল। যত ভারী ভারী গাল, খাদা নাক আর ছোট ছোট হাত পা নিয়ে কপালের উপর চুলের জাফরি কেটে মোটা মোটা পোষাক পরে ছেলে আর মেয়ের পাল “মামা” “মামা" করে ছুটেছে । তাদের বক্তব্য যে তাদের হাতে হাতে একটা করে পয়সা দিতে হবে। আমাদের সঙ্গিনী ক্যানেডিয়ান মহিলা একটা পয়সা এক জনকে দিতেই আর যায় কোথায় ? পাইড পাইপার অব হামলিনের বঁাশীর স্বরে যেমন সারা শহরের কুচোকাচ ছুটে বেরিয়ে এসেছিল তেমনি যেন কুইনস্ রোড-নিবাসী সব চীন সস্তানসন্ততিরা পয়সার লোতে আমাদের পিছনে জুটে গেল। তাদের মোটা মোটা হাত আর হাসি হাসি মুখ দেখতে ভারি মজার। ক্যানেডিয়ান মহিলা অনেক পয়সা গচ্চা দিয়ে কোন রকমে মুক্তি প্রবাসী ১৩৪৪ পেলেন। তার দশা দেখে আমি ভয়ে একটা পয়সা দিলাম না, শেষে হয়ত পঞ্চাশ জনে ছেকে ধরবে । পথের ধারে চীনা মারা পিঠে নাদুসনুদুস থোকাখুকী বেঁধে খবরের কাগজ বিক্রী করছে। তারা অবশ্ব কলকাতার মত “নায়ক, বসুমতী, এক পয়সা বাবু’ বলে চীৎকার করছে না। তার দিব্যি ফুটপাথের থামের গায়ে ঠেস দিয়ে বসে আরামেই কাগজ বিক্রী করছিল, ছুটোছুটি নেই। আমি যত জনকে খবরের কাগজ বিক্ৰী করতে দেখলামু সবাই স্ত্রীলোক। স্ত্রীলোকের পক্ষে ব্যবসাটা ठाँठण ! আমরা কলকাতায় দুরকম পুরুষ চীনা দেখি, এক দল একটু বেশী সাহেব সাজা, আর এক দল গলাবন্ধ কোটের উপর বিলাতী হাটপরা । কিন্তু মেয়েদের যা দেখি, সবই এক সনাতন কালো পাজামা, কালো কুৰ্ত্তি আর লম্বা বেণী । খোপাও অবশ্য দু-চার জন বাধে সামনের চুলট যথাসাধ্য পিছনে টেনে। সিঙ্গাপুরে প্রথম বারে দুইতিন ঘণ্টায় যত চীনা মেয়ে দেখলাম সবই একরকম কৃষ্ণ পাতলুন। কিন্তু হংকং ফ্যাসানেবল শহর, তার নাগরিকদের বেশভূষা সম্পূর্ণই প্রায় অন্ত রকম। শহরের পথ কালোয় কালোয় অন্ধকার নয়, বেশ রঙের খেলা আছে । অল্পক্ষণের জন্য পথের ধারে দাড়িয়ে কিংবাপথে হেঁটে যত পুরুষকে দেখলাম তাদের কারুর ছাই ও কালো ছাড়া পোষাক দেখি নি । বোধ হয় এটা অভিজাতদের পাড়া বলে অন্য রং বেশী চোখে পড়ে নি। আমরা ফেরবার সময় সাংহাওঁ থেকে যত চীনা আমাদের জাহাজে ডেক-প্যাসেঞ্জার হয়ে উঠেছিল তারা কিন্তু সকলেই ঘন নীল জোব্বা পরা। হংকঙের ঘাটে নৌকায় যে মেয়ের দাড় টানছিল তারা সকলেই কালো পায়জামা ও কোর্ভাধারিণী বিস্তু কুইনস্ রোডের পথে ধনী কি অবস্থাপন্ন ঘরের মেয়ে ই ভিড় বেশী। তারা নানা রঙের দামী দামী রেশমী পোয । পরেছে। এত রঙ যে শহর বেশ ছবির মত দেখায় সবাই যে খুব ধনী তা নিশ্চয় নয়, কারণ তা হলে পা হেঁটে বোধ হয় পথে বেড়াত না । মেয়েদের পোষা : রঙের যতই বাহার থাকুক, এত সরু ষে রেখায় স্বযম একান্ত অভাব। গোড়ালী পৰ্য্যন্ত সরু লম্বা কোটের ম ।