পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৮০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

“Avළඟ প্রবাসী 88סאמל তিনি সঙ্কোচ বোধ করেন নাই । তিনি প্রধানতঃ নিম্নলিখিত বিষয়গুলি সম্বন্ধে নিজের বক্তব্য বলিয়াছিলেন—সেবকের দুর্গম পথ, দেশের দুর্দশা, দেশের কাজে ‘ভদ্রলোকের দান, ভ্রাতৃবিরোধ, অন্তবিরোধ, দেশসেবকের লাঞ্ছন, ইংরেজের অবস্থা ও মনোভাব, মহাত্মার আহবান, দেশের লোকের মনোভাব, জনগণের দুরবস্থা, ইংরেজের ভরসা, কংগ্রেসের সাধন, কংগ্রেস কি চায়, বাংলার ৰংগ্রেস, কংগ্রেসে মুসলমান, অন্তঃগু দেশের সাধনার কথা, ভাগবাটোয়ারার সমস্ত, ‘বন্দেমাতরম্ সমস্যা, দেশসেবকদের শিক্ষ, হিন্দু-মুসলমান, দেশ স্বাধীন হবেই, কাজের ফর্দ । যতীন্দ্র বাবুর অভিভাষণের অংশগুলি প্রায়ই পরস্পর সংলগ্ন । তথাপি কোন কোন অংশ উদ্ধৃত করিতেছি। অশিক্ষিত অজ্ঞ নিদারুণ দরিদ্রে ভর এই দেশ । কংগ্রেস এত দিন তাদের শুধু জনকয়েকের কানে জপেছে ধোয়াটে অস্পষ্ট স্বাধীনতার নাম । বেশীর ভাগেরই কানে তাও পৌছে নিতে পাবে নষ্ট । সে স্বাধীনতার মধ্যে সাপ আছে কি ব্যাঙ আছে, তাতে তাদের অন্নবস্ত্রের অভাব কি ভাবে ঘুচবে, তা তারা স্পষ্ট করে বোঝে নাই, শুনেছে স্বদেশী করলে দেশের টাকা দেশে থাকে, হয় তো বা থাকে, হয় তো দেশের কেউ কেউ তাতে ধনী হয়। সে দেখে পনী মিল মালিকের বাড়ীতে কোঠার উপর কোঠা ওঠে, স কোঠায় বিজলী বাতি থলে। কিন্তু বেল পাকলে কাকের কি ? তাতে তো তার সাপে-ভরা ভাঙা ঘরের অ"াধার ঘোচে না । মিলের অংশীদার স্বদেশী কাপড়ের দোকানদার, টাকা জমায় । গরীব নিজের দায়ের সময় তাদের কাছে চড়া মুদের হারে সে টাকা ধার করে। দিন চলে না, দেন। শোধ হয় না । ধনীর কাছে মাথ৷ মুইয়ে থাকে। তার সম্বোধনে, তুই তোকারি । ধনীর বাড়ীতে এলে তার বসার আসন চট, বস্তা—বড়জোর এক টুকরা তক্তা । সে সব সয়েও ধনীর বেগার দেয়, ফুট ফরমাস খাটে ! ভরসা, যদি মুদ কিছু কম নেযু—দয়া হয় না, হয় নালিশ । আইনের জোরে তার শেষ সম্বল চাষের জমি বাস্তুভিটা বিকিয়ে যায় । সে কেন করতে যাবে স্বদেশী, কেন শুনবে সে তোমার স্বাধীনতার গালভরা গল্প ? সৰ্ব্বহার দিনমজুরী করে মুন ভাত খায়। রোজ কাজ জোটে না। জুটলেও তার আজুরার উঠতি পড়তি আছে। যুদ্ধে গেলে তার চড়া আজুরারও তিনগুণ সে নিয়মিত পাবে । বেঁচে ফিরে এলে পেনসন পাবে, ম’লে পরিবার মোট টাকা পাবে। “বুভুক্ষিতঃ কি ন করোতি পাপম্‌ ?" এ লোভ দেখালে ইংরেজ লোকও পাবে। তার তাকে বাইরেও ৰচিাবার জন্য তার হয়ে লড়বে, ভারতেও তার আসন অটল রাখার জন্য নিজের জ্ঞাতিগোষ্ঠীকে শায়েস্ত করার জঙ্ক তৈরি হয়ে থাকবে । অশিক্ষিত গরীবের দোষ কি ? সরকারী চাকরি পেলে নেয় না এমন শিক্ষিত যুবক গরীবের মধ্যে কেন, মধ্যবিত্তর মধ্যেও কম। $. এই বিপদের বেড়া আগুনের মধ্যে পড়েও ইংরেজের এই সাহস । এই বলে বঙ্গীয়ান হয়েই সে এখনও তার অর্ডিনান্স তুলছে না । গান্ধীজীকে তুচ্ছ করতে পারছে, কংগ্রেসকে গ্রাহ মাত্র করছে না। সে যেন বলছে, চালাও পানসী রোখে কে ? ক্লখবে তুমি ? তুমি ভারতের কংগ্রেস ? তোমার বেশীর ভাগ সদস্তের মনের থাভা খতিয়ে দেখ—সেই পূৰ্ব্বপুরুষের গরীব-মার। ভদরলোকীভাবে ভরপুর। তোমার সদস্যগণ আর তাদের আত্মীয় বন্ধুগণ জমিদার জোতদার মহাজন বণিক মিলমালিক রূপে, তোমারই দেশের গোবেচার গরীবগুলিকে পায়ের তলায়ু চেপে রেখে তিল তিল ক'রে ছিড়ে থাচ্ছে ; আমরা জাতি হিসাবে শক্তিশালী বড় জাতি, তোমরা পৃথিবীর জাতিসঙ্গে অপাত্তেয়ু অস্ত্যঞ্জ, তোমারে আমরাও এই ভাবে রাখবো, এমনি করেই তোমাদের দিয়ে নিজের কাজ হাসিল করবো । পারে, প্রতিকার করে । এই কথার জবাব দেবার সাধ্যমত চেষ্টা করছে কংগ্রেস । কংগ্রেস ত্রিশ বছরের বেশী কাল আমলাতন্ত্রকে হিতোপদেশ দিয়েছে, যুক্তি দেখিয়েছে, ঠায়ের তর্ক শুনিয়েছে । অমুনয় বিনয় মিনতি ব্যর্থ হয়েছে । সমালোচনা করেছে, কড়া কথা শুনিয়েছে । শেষ পর্য্যস্ত অভিমানের ভঙ্গীতে অসহযোগের চেষ্টা করেছে । শক্তিইৗন ভারতের কংগ্রেস শেষ পর্য্যস্ত তার অভিমানের বিশুদ্ধতাও রক্ষা করতে পারে নাই । বৃটিশ রাজলক্ষ্মীর স্পন্ধিত ভ্ৰভঙ্গীর একটি রেখা পরিবৰ্ত্তিত হলেও ভারত-সংসারে তার ঘরকল্পার ব্যবস্থায়ু এখনও তারই জিদ বঙ্গাল রয়েছে । ভারতাত্মার বৃহত্তর অংশ এখনও তার মোহিনীমায়ামুগ্ধ। তাই ভারতের কংগ্রেসকে সে অভিমান সম্বরণ করতে হয়েছে। অসহযোগ ষাপ্য অবস্থায় রাখতে হয়েছে, মন্ত্রীত্ব স্বীকার করতে হয়েছে । অনন্যকৰ্ম্ম দেশসেবকের সংখ্যা আমাদের দেশে কত কম, তাহা যতীন্দ্র বাবু দেখাইয়া দিয়াছেন। তিনি বলিয়াছেন— আই. সি. এস. ও তাদের সমপদস্থ লোক সাড়ে একত্রিশ শে । এতে জেলা-প্রতি আই. সি. এস.-এর সংখ্যা দাড়ায় গড়ে দশ জনেরও বেশী । থানায় থানায় কাজের লোক হিসাবে, আর আর লোক না ধরে যদি দারোগ। পর্য্যস্ত ও ধরা যায় তবে প্রতি থানায় অস্তুতঃ দুজন করে আমলাতন্ত্রের পক্ষের চলনসই লোক আছে । কংগ্রেসের দিক দিয়ে থানা-প্রতি দুরের কথা, জেলা প্রতি, অনন্যকৰ্ম্ম সেবক কজন করে আছে তা আপনার ভেবে দেখুন। অনন্তকৰ্ম্ম সেবক, আর র্তাদের সঙ্গে আর পাচটা কাজের অবসরে যারা কংগ্রেসের কাজ করেন, তাদের দিয়ে মাঝে মাকে দেশের কিছু কিছু জায়গায় কংগ্রের কথার আলোচনা হয় । এ অবস্থায় দেশের সকলের কাছে কংগ্রেসের রাজনীতি অর্থনীতি সমাজনীতি প্রভৃতি জটিল বিষয়ের সব কথার আলোচনা অসম্ভব । প্রতিবৎসর কংগ্রেসের মহাধিবেশনে যে-সমস্ত প্রস্তাব গৃহীত হধ সেগুলিও পল্লীর উল্লেখযোগ্য লোকের কাছে, মোটামুটিভাবে উপস্থিল করারও লোক নাই—তাই সবুর করতেই হবে।