পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৮২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সভ্যতার অভিব্যক্তি সত্যতার ভিত্তিমূলের অনুসন্ধানকল্পে তথাকথিত অসভ্য আদিম মানব সমাজের কিঙ্কিং অনুশীলন অপরিহার্য্য। আদিম মানবের প্রকৃতি আদিম জাতিদের উন্মুক্ত জীবন-স্রোত লক্ষ্য করিয়া কবিসম্রাট রবীন্দ্রনাথ গাহিয়াছেন— উন্মুক্ত জীবন-স্রোত বহে দিনরাত, সম্মুখে আঘাত করি, সহিয়া আঘাত অকাতরে । পরিতাপ-জজুর পরাণে বৃথা ক্ষোভে মাতি চায় অতীতের পানে । ভবিষ্যং নাহি হেরে মিথ্যা দুরাশায় ;বৰ্ত্তমান তরঙ্গের চূড়ায় চূড়ায় নৃত্য ক'রে চলে যায় আবেগে উল্লাসি । উচ্ছ জ্বল সে জীবন সেও ভালবাসি। অসত্য জাতি সম্বন্ধে কবির এ বর্ণনা কাল্পনিক বা অতিরঞ্জিত নহে । কিন্তু পরিতাপের বিষয়, কবিবর্ণিত ইহাদের এই উন্মুক্ত উদাম ভাব জীবনসংগ্রামের নিষ্পেষণে স্থায়ী হইতে পারে না । পাদ্যসমস্ত ও জীবন-সংগ্রাম পৃথিবীর ইতিহাসের শৈশব যুগ হইতে আজ পর্য্যস্ত আবহমান কাল সকল জাতির মধ্যেই অল্পবিস্তর বর্তমান । আধুনিক কলকারখানার যুগে পৃথিবীর অধিকাংশ ধনসম্পদ অল্পসংপ্যক ধনকুবেরের হস্তে কেন্দ্রীভূত হওয়ায় সভ্য, অসত্য বা অৰ্দ্ধসভ্য সকল সমাজেই জীবন-সংগ্রাম অধিকতর তীব্র ও ব্যাপক হইয়া পড়িয়াছে । আদিম জাতিদের পক্ষে খাদ্যসমস্ত সভ্যতর জাতিদের অপেক্ষ অধিকতর কঠোর ও দুরূহ। প্রতিকূল পারিপার্থিক অবস্থার নিষ্পেষণে ইহাদিগকে নিরস্তর খাদ্যান্বেষণে ও শীতাতপ ও আধিব্যাধি হইতে আত্মরক্ষার প্রচেষ্টায় বিব্রত থাকিতে হয়। যদিও ভবিষ্যৎ চিন্ত তাহাদিগকে ক্লিষ্ট করে না, তবু বর্তমানের অভাব পূরণ করাই তাহাদের পক্ষে অনেক সময় দুরূহ হয় । এ-সমস্ত বাধাবিপত্তি সত্ত্বেও স্বষ্টির প্রারম্ভ হইতে মানব মাত্রই প্রাণের পরিপূর্ণতার জন্য, অমৃতময় প্রাণসলিলে হৃদয়-কলস ভরিয়া লইবার সুযোগের জন্য উদগ্রীব। হিন্দুদর্শনের ভাষায়, তাহারা প্রাণময় কোষে বিচরণ ও অবস্থান করিবার জন্য লালায়িত । কিন্তু বাস্তব জীবনে আদিম মানবের--আদিম কেন-- সভ্য সমাজেও অনেকের পক্ষে ইহার সুযোগ ও অবসর অল্পই ঘটে। তবে এ-সম্বন্ধে সভ্য মানবের সহিত আদিম মানবের প্রভেদ এই যে, যখন ভাগ্যক্রমে এরূপ শুবৰ্ণ সুযোগ উপস্থিত হয় তখন সভ্যমন্ত মানব আমর জীবনের দুঃখদৈন্য, চিস্তা-জর মন হইতে একেবাপে বিতাড়িত করিতে পারি না । অপর পক্ষে, তথাকথিত অসভ্য মানব এইরূপ শুভ মুহূৰ্ত্তে সমস্ত দুখ-ক্লেশ, দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও শুবিষ্যতের ভয় ভাবন মন হইতে একেবারে মুছিয়; ফেলিয়া অবাধে জীবন-মদিরাধারা পানে বিভোর থাকে, এবং সনিৰ্ব্বন্ধে মধ্যে মধ্যে উহার হযোগ ও অবসর খুজিয়া লয়। তখন তাহাদের প্রাণে ঢারিদিকে গান বেজে ওঠে— চারিদিকে প্রাণ নেটে ছোটে, গগনভর। পরশথানি লাগে সকল গায় । জ্যোংক্ষা রাত্রে কিম্বা উহাদের কোনও পৰ্ব্ব উপলক্ষে উহাদের গ্রামে গেলে দেখা যায় উহারা দৈনন্দিন কার্যের অবসানে কাজের ধূলা ঝাড়িয়া ফেলিয়া সানন্দে নৃত্যগীতে প্রাণসাগরে দেহমন ভাসাইয়া দেয়। হিলদর্শনের ভাষায় বলিতে গেলে বলা যায় যে তখন ক্ষণিকের জন্য তাহারা অন্নময় কোষ অতিক্রম করিয়া প্রাণময় কোষে বিচরণ করে। তখন এই সব অসভ্য মানবের প্রাণ কিছুক্ষণের জন্যও অনালিগ আনন্দে, গীতে ও ছন্দে, বর্ণে ও গন্ধে, আলো' পুলকে প্লাবিত হয়। শরতে ও হেমস্তে ধানক্ষেতে সোনার গানে ইহারা সমান তানে যোগ দেয় ; বর্ষণ