পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কাভিক মাটির বাস। ●● থে জুটিবে না, তাহ মৃণালের জানিতে বাকী নাই। ইহা । ত আর তাহার মামার বাড়ী নয় যে যাত্রার আগে তাঁহাকে মাছ-ভাত খাওয়াইবার জন্ত সকাল হইতে সকলে উঠিয় ছুটাছুটি করিতে থাকিবে ? বক্সটা গুছাইয়া রাখিয়া সে শুইতে চলিয়া গেল । বিছানা সকালে উঠিয়া বাধিলেই চলিবে। আর ত বিশেষ কিছু তাহার গুছাইবার নাই ? সকালে উঠিয়া প্রথমেই সে স্নান করিয়া ফেলিল । তাহার পর বাকী জিনিষপত্র বিছানার মধ্যে ঢুকাইয়া দিয়া বিছানাটাও বাধিয়া ফেলিল । ভিজা চুল বাধিলে তাহার মাথা ধরে, তাই আজ মৃণাল চুল না ভিজাইয়াই স্বান করিয়াছে। সারা পথ ত এতখানি চুল ঝুলাইয়া যাওয়া যায় না ? কাপড়চোপড় পরিয়া একেবারে প্রস্তুত হইয়া সে খাইতে গেল । মেট্রন বলিয়াছিলেন মৃণাল শুধু আলুঙাতে ভাত খাইতে পাইবে, কিন্তু সে এক বাটি ডাল, এবং একটু দইও তাহার সঙ্গে পাইল । বোর্ডিঙের এই মাসীমাটি স্বভাবে অতিশয় কুক্ষ, কিন্তু অস্তঃসলিলা ফন্তুর মত একটি গুপ্ত স্নেহের স্রোত যে তাঁহার মধ্যেও প্রবাহিত, তাহার পরিচয় মেঘেরা যখনতখন পাইয়া থাকে। পাইয়া উঠিয় বার দুই-চার ঘড়ি দেখিবার পরই মুণালের মেসোমশায় গাড়ী লইয়া আসিয়া উপস্থিত হইলেন। স্কুলের অধ্যক্ষ এবং সঙ্গিনীদের কাছে বিদায় লইয়া মৃণাল তাড়াতাড়ি গিয়া গাড়ীতে উঠিয়া বসিল । দরোয়ান তাহার বাক্সবিছানা গাড়ীর উপর তুলিয়া দিল। কলিকাতার রাস্তার দিকে তাকাইলে মন ভরিয়া উঠে না, কিন্তু না তাকাইয়াও মৃণাল থাকিতে পারে না। ইহার কেমন একটা অদ্ভুত আকর্ষণ আছে। এত বিচিত্র লোকের মেলা; আর কোথাও দেখা যায় কি ? ষ্টেশনেও দেখা যায় সেই ভিড়, সেই কোলাহল, সেই প্রচও ব্যস্তত। পৃথিবীতে এত মানুষ যে আছে, কলিকাতায় আসিবার আগে মৃণালের ' उँfश् ५ांद्रशांठे छ्लि नां । ষ্টেশনে সেদিন যেন মানুষের স্রোত বহিয়া চলিয়াছে। " কি তার তুমুল কলরব, কি তার আস্ফালন। মৃণালের ভা করিতে লাগিল। এই ভীষণ ঘূর্ণির মধ্যে সে একেবারে তলাইয়া যাইবে না ত f মেসোমশায় মুটের মাথায় জিনিষপত্র চাপাইয়ু বলিলেন, “সাবধানে আমার পিছন পিছন এস, যা ভয়ানক ভিড় হয়েছে, আজ গাড়ীতে জায়গা পেলে হয়। ভাগ্যে কাল টিকিটটা ক'রে রেখেছিলাম।” মৃণাল অসংখ্য মানুষের গুতা থাইতে থাইতে অগ্রসর হইতে লাগিল। মাঝে মাঝে মেসোমশায়ের সঙ্গে চলে, মাঝে মাঝে পিছাইয় পড়ে। তখন ভয়ে তাহার বুকের ভিতরট গুরুগুর করিয়া উঠে। আর যদি উহাদের সঙ্গ ধরিতে না পারে ? তখনই আবার দূরে জনসমুদ্রের মাথার উপর ভাসিয়া উঠে মুটের মাথায় তাহার নীল ডোরাকাটা ট্রাঙ্কের মুৰ্বি, মেসোমশায়ের কাচা-পাকা মাথাটাও কাছাকাছিই দেখা যায়। খানিক নিজের চেষ্টায়, খানিক পিছনের লোকের ঠেলায় মৃণাল অগ্রসর হইয়া যায়। লোহার গেটট পার হইয়া, প্ল্যাটফর্শ্বের ভিতর ঢুকিয়া পড়িয়া তবে মৃণাল যেন হাফ ছাড়িয়া বঁাচে । এখানে এতটা মারামারি ঠেলাঠেলি নাই । মেসোমশায় জিজ্ঞাসা করেন, “আমার সঙ্গেই, উঠবে, না মেয়েদের গাড়ীণ্ডেই যাবে ?” মেয়েদের গাড়ীই ভাল। পুরুষ-যাত্রীদের সঙ্গে যাইতে হইলে মৃণালের অস্বস্তির সীমা থাকে না । একে ত এক পাল অপরিচিত পুরুষের দৃষ্টির সম্মুখে অন্তক্ষণ বসিয়া থাকিতেই তাহার দেহমন যেন আড়ষ্ট হইয় উঠে, তাহার উপর জলটুকু থাইতে মৃদ্ধ তাহার সঙ্কোচ লাগে, একটু পা বদলাইয়া বসিতে পৰ্য্যন্ত লজ্জা করিতে থাকে। গাড়ীতে উৎপাতেরও অস্ত নাই, তামাক খাওয়া, সিগারেট খাওয়া লাগিয়াই থাকে, গন্ধে মৃণালের মাথা ধরিয়া উঠে । তাহার উপর ক্যানভাসারের উপদ্রব, ভিখারীর উৎপাত, ইহার হাত হইতেও নিস্কৃতি নাই। ভিড়ও এই গাড়ীগুলিতেই হয় বেশী । আজকাল কিসের ভয়ে জানি না, কোনও মেয়েই প্রায় মেয়ের গাড়ীতে উঠিতে চায় না, আণ্ডাবাচ্চা পোটলাপুটলি লইয়া সেই পুরুষদের গাড়ীতেই ভিড় করে, মেয়েদের গাড়ীগুলি অপেক্ষাকৃত ফাকাই থাকিয়া যায়। কাজেই সেখানে যাওয়াই স্থবিধা। মেসোমশায় বলিলেন, “দেখ, ভষ্ট্ৰয় করবে না ত?” -