পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৮৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলা দেশে ইতিহাসচর্চা শ্ৰীনলিনীকান্ত ভট্টশালী, এম-এ, পিএইচ-ডি বাংলা দেশের বর্তমান ও ভবিষ্য ঐতিহাসিকগণ ঐতিহাসিকগণ কালের পরিবর্তনের সাক্ষী, কালপ্রবাহের বেলাভূমিতে বসিয়া তাহারা কালতরঙ্গের গণনায় প্রবৃত্ত। জগতের কিছুই যে স্থায়ী নহে, এ-সত্য র্তাহাদের অপেক্ষা আর কে ভাল জানে ? অক্ষয়কুমার, হরপ্রসাদ, রাখালদাস—কেহই চিরজীবী হইয়া জগতে আসেন নাই। কাল পূর্ণ হইলে সকলকেই পরপারে যাত্রা করিতে হইত। কিন্তু রাখালদাসের কি কাল পূর্ণ হইয়াছিল ? এই অসাধারণ কৰ্ম্মী, এই বিরাটু-হৃদয় পুরুষ, এই বন্ধুবৎসল বাংলার স্বসস্তান অকালে যে খেলা থামাইয়া চলিয়া গেলেন, আমাদের সেই দুঃখ রাখিবার স্থান কোথায় ? অকালমৃত্যু বাংলা দেশের পরম অভিসম্পাত,—এই দম্য কেশবকে হরণ করিয়াছে, এই দম্য বিবেকানন্দকে ছিনাইয়া লইয়াছে। র্যাহার কণ্ঠধনি, যাহার মুখাবয়ব চিন্তা করিলেই আজিও অসীম অশ্রুর উৎস লইয়া স্মরণপথে সমুদিত হয়, আমাদের অনেকেরই অন্তরঙ্গ বন্ধু সেই রাখালদাসও ইহারই করাল কবলগত হইয়াছেন। অক্ষয়কুমারও বাণীচরণে র্তাহার অগাধ পাণ্ডিত্যাকুযায়ী অঞ্জলি দান আরম্ভ করিতেনা-করিতেই তিরোহিত হইলেন। আমরা হরপ্রসাদের --ল্যর্থক সাধনার সম্প্রদ্ধ বন্দনাগীতি রচনা করি, অক্ষয়কুমারের জন্য দীর্ঘনিশ্বাস ফেলি, কিন্তু অশ্ৰুজল ভিন্ন রাখালদাসের স্থতি-তৰ্পণের আর কোন উপাদান খুজিয়া পাই না। o - দুর্ভাগ্যের অমুশোচনার সঙ্গে সঙ্গে এই কথাও মনে জাগে যে, বিধাতার করুণার কথাও বিশ্বত হওয়া উচিত .নহে। একমাত্র পুত্রের মৃত্যুশোক-শল্য বক্ষে অহনিশি ধারণ করিয়া রোগজর্জর দেহে প্রাচ্যবিদ্যামহার্ণব নগেন্দ্রনাথ যেভাবে অনন্তমনা হইয়া বিশ্বকোষের দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশে নিযুক্ত আছেন, তাহা পুরাণ-বর্ণিত দধীচিকেই মনে করাইয়া দেয়। এই প্রকার দুরবস্থার মধ্যেও যে র্তাহার এতখানি কৰ্ম্মক্ষমতা আদ্যাপি বর্তমান রহিয়াছে, তাহাই নিষ্ঠুর বিধাতার করুণা বলিয়া ব্যাখ্যা করিতে হইবে। অক্ষয়কুমারের সহকৰ্ম্মী রায় ঐযুক্ত রমাপ্রসাদ চন্দ বাহাদুর কৰ্ম্মবহুল জীবনের অপরাহ্লে অদ্যাপি কৰ্ম্মবিমুখ নহেন। তাহার অক্লান্ত উদ্যমের ফলে মহাপুরুষ রামমোহন রায় সম্বন্ধে নূতন নূতন তথ্য আবিষ্কৃত হইতেছে। র্তাহার আরব্ধ ময়ূরভঞ্জের ইতিহাস সমাপ্ত হইলে ইতিহাস-সাহিত্যের সম্পদ বুদ্ধি হইবে, সন্দেহ নাই। অক্ষয়কুমারের অপর সহকৰ্ম্মী ডক্টর ঐযুক্ত রাধাগোবিন্দ বসাক "উত্তর-পূর্ব ভারতের ইতিহাস’ নামক পুস্তক ইংরেজী ভাষায় প্রকাশ করিয়া যশস্বী হইয়াছেন। বাংলা ভাষায়ও ইনি মধ্যে মধ্যে প্রবন্ধাদি প্রকাশ করিয়া নৃত্তন নূতন তথ্য বঙ্গবাণীকে উপহার প্রদান করিয়া থাকেন। এই ত্রয়ীর মধ্যে সৰ্ব্বকনিষ্ঠ হিসাবে তাহার নিকট আমাদের অদ্যাপি অনেক পাওনা রহিয়াছে। সমস্ত জীবন যিনি একলব্যের একনিষ্ঠার সহিত ইতিহাস চর্চা করিয়াছেন সেই বিশ্ৰুতকীৰ্ত্তি সরু যদুনাথ সরকার যে পরিণত বয়সেও অক্লান্ত উদ্যমে অদ্যাপি ইতিহাসের সেবায় নিযুক্ত থাকিতে পারিয়াছেন, ইহাও বিধাতার বিশেষ করুণা বলিয়া মনে করি। তাহার “আওরংজীব”, তাহার “শিবাজী,” তাহার “মোগলসাম্রাজ্যের পতন’ এবং মোগল রাজত্বকাল সম্বন্ধীয় বিবিধ প্রবন্ধাবলী চিরদিন তাহাকে স্মরণীয় করিয়া রাখিবে । জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালের পূৰ্ব্ব-ভারতের স্ববিস্তৃত ইতিহাস প্রত্যক্ষদর্শী মির্জ নাথন প্রণীত বাহার-ই-স্তান-ই-ঘায়ী গ্রন্থের আবিষ্কার, ও তাহার সারমর্ম প্রচার অধ্যাপক