পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৮৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ግግዬ প্রবাসী SN988 শ্ৰীমতী ভ্রমর ঘোষ উভয়েই প্রশংসনীয় গবেষণা-ক্ষমতার পরিচয় দিয়াছেন। ঐতিহাসিক গবেষণার ক্ষেত্রে এই বিঘর্ষী তরুণীদ্বয়ের আগমন সানন্দে অভিনন্দনীয়। বরেন্দ্র অনুসন্ধান সমিতির কৰ্ম্মবীরত্রয় অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়, রায় শ্ৰীযুক্ত রমাপ্রসাদ চন্দ বাহাদুর এবং ডক্টর ঐযুক্ত রাধাগোবিন্দ বসাক মহাশয়গণের সাধনার কথা পূৰ্ব্বেই উল্লেখ করা হইয়াছে। পূৰ্ব্ব-ভারতের প্রত্নবিভাগের অধ্যক্ষ ঐযুক্ত ননীগোপাল মজুমদার মহাশয়ের কর্মজীবনের আরম্ভ সেই বরেন্দ্র অনুসন্ধান সমিতিতেই। প্রশংসনীয় অধ্যবসায় এবং কৃতিত্ব সহকারে তিনি অক্ষয়কুমারের আরব্ধ কৰ্ম্ম গৌড়লেখমালার কার্য্য বহুদূর অগ্রসর করিয়া দিয়াছেন। তিনি চন্দ্র, বৰ্ম্ম এবং সেনরাজগণের শাসনাবলী ও শিলালিপিসমূহ (Inscriptions / Bengal, volIII), নাম দিয়া প্রকাশ করিয়া বাংলার প্রত্নপ্রেমিকগণের আশীৰ্ব্বাদভাজন হইয়াছেন । বরেন্দ্র অনুসন্ধান সমিতির প্রকাশিত এই গ্ৰন্থখানি বহুদিন পৰ্য্যন্ত বাংলার প্রত্নক্ষেত্রে আদর্শ গ্ৰন্থরূপে বিরাজ করিবে । মাতৃভাষা অবলম্বনে প্রত্নচচ্চায় যে নীতি গৌড়রাজমালা ও গৌড়লেখমালা প্রকাশে অসুস্থত দেখিতে পাই, মজুমদারমহাশয়ের সম্পাদিত “ইন্সক্রিপশুনস্ অব বেঙ্গল” গ্রন্থে তাহা পরিত্যক্ত হইয়াছে। পুস্তকের মুখবন্ধ এবং ভূমিকা পড়িয়া জানিতে পারি যে বৃহত্তর পাঠকসঙ্ঘের নিকট পৌছিবার উদ্দেশুই এই নীতি-পরিবর্তনের কারণ। বাংলায় র্যাহারা প্রত্নচচ্চ1 করেন, তাহঁাদের শতকরা নিরানব্বই জনই ইংরেজীনবীশ, তাহাতে সন্দেহ নাই। কাজেই এই মাতৃভাষা পরিত্যাগে তাহাদের বিশেষ _ক্ষতিবৃদ্ধি নাই, এবং ইংরেজী ভাষার সহায়তায় বৃহত্তর পাঠকসঙ্ঘের নিকট পৌছিবার সম্ভাবনাও মিথ্যা নহে। কিন্তু তথাপি কেন যেন মনটা প্রসন্ন হয় না। প্রত্নলিপিক্ষেত্রে ননীবাবুর পুস্তকের পরেই পণ্ডিত শ্ৰীযুক্ত পদ্মনাথ ভট্টাচাৰ্য্য মহাশয়ের সঙ্কলিত “কামরূপ শাসনাবলী” উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। এই সুসম্পাদিত পুস্তকখানি গৌড়লেখমালার মতই বাংলা ভাষায় প্রতিষ্ঠা লাভ করিয়াছে। ভট্টাচাৰ্য্যমহাশয় এই পুস্তক ইংরেজীতে সম্পাদন করিলে বৃহত্তর পাঠকসঙ্ঘের নিকট পৌছিতে পারিতেন, সন্দেহ নাই। বাংলায় এমন भूतान গ্রন্থের প্রকাশ কেহ কেহ পাগলামি নামেও অভিহিত করিয়াছেন। কিন্তু মনের উপর ত কাহারও জোর খাটে না । বস্তুত:, বাংলা দেশের অধিকাংশ ঐতিহাসিকের বিরুদ্ধেই আমার এই সাধারণ নালিশ যে র্তাহাদের পরিশ্রমের ফল হইতে মাতৃভাষা , অন্যায় রকমে বঞ্চিত হইতেছেন। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিকত্ৰয় —ডক্টর রায়চৌধুরী, ডক্টর সেন ও ডক্টর রায় বাংলা ভাষায় কলম ধরেন না বলিলে অত্যুক্তি হয় না। অথচ, র্তাহাদের চোখের উপর বঙ্গীয়-সাহিত্য-পরিষৎ পত্রিকা প্রবন্ধাভাবে শুকাইয়া মরে । তাহারা যদি দয়া করিয়া তাহাদের ইংরেজী প্রবন্ধাবলীর সারমর্ম একটু সোজা করিয়া লিখিয়া মাসিক পত্রিকায় প্রেরণ করেন, তবে বাংলা দেশের মাসিক পত্রিকাগুলি রাবিশ ছাপিবার দায় হইতে অব্যাহতি পায় এবং বাংলা দেশে ইতিহাসচর্চ খরবেগে প্রবাহিত হয়। সবু যদুনাথ সেই যে পনর বৎসর পূৰ্ব্বে প্রবাসীতে কয়েকটি মূল্যবান প্রবন্ধ লিখিয়াছিলেন, তাহার পরে বাংলা ভাষায় রচিত র্তাহার আর কোন উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধ পড়িয়াছি বলিয়া মনে পড়ে না । তবে তদ্রচিত শিবাজীর বাংলা সংস্করণ দেখিয়া এবং গত বৎসরের সাহিত্য-পরিষৎ পত্রিকায় প্রকাশিত মারাঠা ইতিহাস সম্বন্ধীয় বঙ্গভাষায় প্রদত্ত অধরচন্দ্র বক্তৃতাবলী পাঠ করিয়া আমাদের মনে আবার ভরসার সঞ্চার হইয়াছে। শ্রযুক্ত ননীগোপাল মজুমদার, ডক্টর ঐযুক্ত রমেশচন্দ্র মজুমদার সম্বন্ধেও আমার সেই একই নালিশ। বৃহত্তর ভারত সম্বন্ধে ডক্টর রমেশচন্দ্র মজুমদার বাংলায় যখন কিছু লিখিয়াছেন, তাহা কি প্রকার সমাদরের সহিত বিভিন্ন মাসিক পত্রিকায় উদ্ধৃত হইয়াছিল, আশা করি তাহা তাহার শ্বরণে আছে। দেশবাসিগণ র্তাহাদের গবেষণার ফল জানিতে উন্মুখ হইয়া থাকে, সে-বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই। র্তাহারা একটু পরিশ্রম স্বীকার পূৰ্ব্বক তাহারে গবেষণার ফল যদি বাংলা ভাষায় লিখিয়া দেশবাসিগণকে জানাইতে আরম্ভ করেন, তবে বঙ্গভাষায় ইতিহাস-সাহিত্য সমৃদ্ধ হয়, দেশবাসিগণও