পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৮৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাতৃভক্তি শ্রীরামপদ মুখোপাধ্যায়

  • y সওদাগরী আপিসের নিয়মকান্তন না কি কড়া, তাই জরুরী পত্র পাইয়াও মহীতোষ বিশেষ ত্বরান্বিত হইতে পারিল না । বিশ বৎসর লেজার নাড়িয়া, ফাইল ঘাটিয়া ও সাহেবলোকের রুক্ষ মেজাজের আওতায় বাস করিয়াও মহীতোষ অবশ্য অন্তরে বাহিরে আপিস-মাফিক যান্ত্রিক কৰ্ম্মী বলিয়া প্যাতিলাভ করে নাই। সে ভালমতেই জানে, শহরের জলবায়ু, শহরের আলো-হাওয়া তাহার মত নব্বই টাকা দামের কেরানীর ধাতুসহ নহে। আপিস-জীবনের উত্তরকাণ্ডে তাহার জন্য বিছানো আছে পল্লীমায়ের কাব্যকলাসমৃদ্ধ হরিতাঞ্চল ; যে অঞ্চলখানির এক প্রাস্ত রূঢ় বাস্তবের .শত প্রকারের ভয়াল ভ্ৰকুট, অস্বাস্থ্য ও অভাবের মুস্পষ্ট আলিম্পনে বিচিত্রিত এবং অন্য প্রান্ত সুজলা মুফলা মলয়জশীতলার ধ্যানমহিমায় স্বর্গাদপি গরীয়সী । সেই স্বর্গকে বঁাচাইয়া সেখানে যিনি প্রতি প্রভাতে উঠান-বাট ও গোবর-ছড়া দিয়া এবং • প্রতি সন্ধ্যায় তুলসীতলায় প্রদীপ জালিয়া গৃহস্থের মঙ্গল কামনা করিয়া থাকেন তিনি

মহীতোষের বৃদ্ধা জননী। ' R শহরে বাস করিলে যা হয়, মহীতোষের মনেও সেটুকু জমা হইতে বিলম্ব হয় নাই। প্রথমে বৎসরে তিন বার সে বাড়ী আসিত—পূজা, বড়দিন এবং ঈষ্টার। চার বছর এই ভাবে চলিবার পর ক্রমবৰ্দ্ধমান সংসারের পানে চাহিয়া ঈষ্টারের স্বল্পায়ু ছুটিটাকে সে পল্লীদর্শনের স্বচী হইতে বিনা দ্বিধায়ু বাদ দিয়া ফেলিল। কিন্তু বিধাতার এমনই কুপা, সেবার পূজায় বাড়ী আসিয়া ম্যালেরিয়ার আস্বাদ'লাভ করিয়া মহীতোষ সভয়ে পূজার দীর্ঘতর ছুটিটাকেও এক পাশে সরাইয়া দিল । বাকী রহিল বড়দিন । তা সে নাতিদীর্ঘ অবসর আরও দশটি বছর তালিকাভূক্ত করিয়া মায়ের মনঃক্ষোভ সে মিটাইতেছিল। অকস্মাৎ আপিসের সাহেব বদল হওয়াতে বড়দিনের ছুটি হ্রস্বতর হইয়া গেল । যাহারা বৎসরান্তে বাড়ী যায় তাহাদের জন্য বিশেষ বিবেচনার ক্ষেত্রটিও লুপ্ত হইয়া গেল । মহীতোষের মা পাচ বছর পূৰ্ব্বে বড় দুঃখেই লিখিয়াছিলেন –বাবা, বৎসরান্তে তোদের সবাইকে যদি এক বারও না দেখিতে পাই ত কোন আশায় জীবন ধারণ করি বল্‌ ! সকলে একসঙ্গে না খাইয়া ষে কষ্ট ভোগ করিয়াছিলাম সে ষে অনেক ভাল ছিল। এক দিন কিছু না থাইলেও পেট বোঝে, কিন্তু ভালবাসার ধনকে বৎসরান্তে না দেখিলে মনের সাত্বনা কোথায় ? সাহেবকে এ-কথা বলিস, তাদেরও মা আছে, নিশ্চয় বুঝিবেন। * মহীতোষ সংক্ষিপ্ত চিঠির শেষে লিথিয়াছিল – সাহেবদের মা আছেন, কিন্তু আপন সংসারে মাকে তাহারা জুড়াইয়া রাখিতে চাহে না। শিক্ষার দ্বারা ওরা স্নেহকে হয়ত জয় করিয়াছে, আমাদের স্নেহকে তাই দুৰ্ব্বলতা বলিয়া উপহাস করে। বড়দিনের ছুটি না হোক, অন্য সময়ে ছুটি লইয়া আপনার শ্ৰীচরণদর্শনের ইচ্ছা রহিল। ס\ তার পর সুদীর্ঘ পাচটি বংসর স্নেহের आज्ञान-अनिन চিঠিতেই চলিতেছে। মহীতোষ ছুটি লওয়ার সুবিধা করিতে পারে নাই । এমন সময় হঠাৎ জরুরী পত্রের আবির্ভাব ! পত্র পড়িয়া মহীতোষের মুখের ছায়া গাঢ়তর হইল। সুদীর্ঘ পাচটি বৎসরে অবসর-অভাবে ষে শ্ৰীচরণীর্শনের পুণ্যসঞ্চয় সে করিতে পারে নাই, যথাসময়ে না পৌছিতে পারিলে সে-পুণ্যসঞ্চয় হয়ত আর ইহজীবনে ঘটিবে না।