পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৮৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চৈত্র আরণ্যক جيجلأسوا কেশাগ্র স্পর্শ করিলে আমি তাঁহা সন্থ করিব না। গত বৎসর এই ব্যাপার লইয়া রাসবিহারী সিংয়ের লাঠিয়াল-দলের সঙ্গে আমার, কাছারির মুকুন্দি চাকলাদার ও গণপৎ তহশীলদারের সিপাহীদের একটা ক্ষুদ্র রকমের মারামারি হইয়া যায়। গত শ্রাবণ মাসেও আবার একটা গোলমাল বাধিয়াছিল । তাহাতে ব্যাপার পুলিস পৰ্য্যন্ত গড়ায়। পুলিসের দারোগ আসিয়া সেটা মিটাইয়া দেয় । তাহার পর কয়েক মাস যাবৎ রাসবিহারী সিং আমার মহালের প্রজাদের কিছু বলে না। সেই রাসবিহারী সিংয়ের নিকট হইতে হোলির নিমন্ত্রণ পাইয় বিস্মিত হইলাম । গণপং তহশীলদারকে ডাকিয়া পরামর্শ করিতে বসি । গণপং বলিল—কি জানি হুজুর, ও-লোকটাকে বিশ্বাস নেই। ও সব পারে, কি মতলবে আপনাকে নিয়ে যেতে চায় কে জানে ? আমার মতে না-যাওয়াই ভাল । আমার কিন্তু এ-মত মনঃপূত হইল না। হোলির .নিমন্ত্রণে না-গেলে রাসবিহারী অত্যন্ত অপমান ৰোধ করিবে। কারণ হোলির উৎসব রাজপুতদের একটি প্রধান উৎসব । হয়ত ভাবিতে পারে যে ভয়ে আমি গেলাম না । তা যদি ভাবে, সে আমার পক্ষে ঘোর অপমানের বিষয়। না, যাইতেই হইবে, যা থাকে অদৃষ্টে । দুপুরের কিছু আগে খাসমহালে রওনা হইলাম । কাছারির প্রায় সকলেই আমায় নানা মতে বুঝাইল । বুদ্ধ মুনেশ্বর সিং বলিল—হুজুর, যাচ্ছেন বটে, কিন্তু আপনি এ-সব দেশের গতিক জানেন না। এখানে হটু বলতে খুন ক’রে বসে। জাহিল আদমির দেশ, লেখাপড়া-জানা লোক ত নেই । তা ছাড়া রাসবিহারী অতি ভয়ানক মাহুষ। কত খুন করেছে জীবনে, তার লেখাজোখা আছে হুজুর ?-ওই মোহনপুরা জঙ্গলের ধারে বসে যদি ও একটা ছেড়ে দশটা খুনই করে, কে আসবে তদন্ত করতে, আর •কে-ই বা মুখ ফুটে কোনও কথা বলতে ভরসা করবে। ওর অসাধ্য কাজ নেই—খুন, ঘর-জালানি, দাঙ্গা, মিথ্যে মকদ্দমা খাড়া করা, ও সব-তাতেই মজবুত। অজস্র টাকা, টাকা ঢাললেই সব ঠাণ্ড। পুলিস ত ওর হাতে, পুলিস এসে কি করবে ? ও-সব কথা কানে ন-তুলিয়াই রাসবিহারীর বাড়ী গিয়া পৌছিলাম। খোলায় ছাওয়া ইটের দেওয়ালওয়াল} ঘর, যেমন এ-দেশে অবস্থাপন্ন লোকের বাড়ী হইয়া থাকে। বাড়ীর সাম্নে বারান্দা, তাতে কাঠের খুটি, আলকাতরমাখানো । দু-খানা দড়ির চারপাই, তাতে জন-দুই লোক বসিয়া ফর্সিতে তামাক খাইতেছে। আমার ঘোড়া উঠানের মাঝখানে গিয়া দাড়াইতেই কোথা হইতে গুডুম গুডুম করিয়া দুই বন্দুকের আওয়াজ হইল। রাসবিহারী সিংয়ের লোক আমায় চেনে, তাহারা স্থানীয় রীতি অনুসারে বন্দুকের আওয়াজ দ্বারা আমাকে অভ্যর্থনা করিল, ইহা বুঝিলাম . কিন্তু গৃহস্বামী কোথায় ? গৃহস্বামী না আসিয়া দাড়াইলে ঘোড়া হইতে নামিবার প্রথা নাই । একটু পরে রাসবিহারী সিংয়ের বড় ভাই রাসউল্লাস সিং আসিয়া বিনীত স্বরে দুই হাত সামনে তুলিয়া ধরিয়া বলিল—আইয়ে জনাব, গরিবখানামে তস্রিফ, লেতে আইয়ে—আমার মনের অস্বস্তি ঘুচিয়া গেল। রাজপুত জাতি অতিথি বলিয়া স্বীকার করিয়া তাহার অনিষ্ট করে না । কেহ আসিয়া অভ্যর্থনা না-করিলে ঘোড়া হইতে না-নামিয়া ঘোড়ার মুখ ফিরাইয়া দিতাম কাছারির দিকে । উঠানে বহু লোক। ইহারা অধিকাংশই গাঙ্গোত প্রজা। পরনের মলিন ছেড়া কাপড় আবীর ও রঙে ছোপানে, নিমন্ত্রণে বা বিনা-নিমন্ত্রণে মহাজনের বাড়ী হোলি খেলিতে আসিয়াছে । আধ-ঘণ্টা পরে রাসবিহারী সিং আসিল এবং আমায় দেখিয়া যেন অবাক হইয়া গেল। অর্থাৎ আমি যে তাহার বাড়ী নিমন্ত্রণ রক্ষা করিতে যাইব, ইহা যেন সে স্বপ্নেও ভাবে নাই । যাহা হউক, রাসবিহারী আমার ষথেষ্ট খাতির করিল। দেখিলাম আমি যাওয়াতে সে সত্যই খুব খুশী হইয়াছে। পাশের যে-ঘরে সে আমায় লইয়া গেল, সেটায় থাকিবার মধ্যে আছে খান-দুই-তিন সিসম কাঠের দেশী ছুতারের হাতে তৈরি খুব মোটা মোটা পায় ও হাতলওয়াল চেয়ার এবং একখানা কাঠের বেঞ্চি। দেওয়ালে সিন্মুর-চন্দন লিপ্ত একটি গুণেশমূৰ্ত্তি।