পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৯০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ত্যাগ ঐআশালত সিংহ গৃহস্বামী সেদিন একটু দেরি করিয়া তাহার আপিস হইতে ফিরিয়াছিলেন। গৃহে পৌছিয়া দেখেন বন্ধুরা ইতিমধ্যে চায়ের পেয়ালা হাতে লইয়া আসর সরগরম করিয়া তুলিয়াছেন। বিজয়নাথ হাতের ছড়িটা দেয়ালের কোণে রাথিয়া বলিলেন, “ব্যাপার কি ? তোমাদের গলার আওয়াজটা তর্কের উত্তেজনাবশতঃই বোধ করি কিঞ্চিৎ উত্তাল হয়ে উঠেছে । আসতে আসতে মোড় থেকে শুনতে পেলাম । ভাবলাম এতক্ষণ নিশ্চয়ই হিট্‌লার কিংবা মুসোলিনীকে সমালোচনার চোথা চোখ বাণে বিপৰ্য্যস্ত ক’রে তুলেছ কিংবা জাপানীদের বর্বর নৃশংসতার কাহিনী বর্ণনা করতে করতে রোমাঞ্চিত হয়ে উঠেছ। মন্দ না । আমরা বাঙালীর পুইশাকের চচ্চড়ি দিয়ে ভাত খাই, মাঝে মাঝে গৃহিণীর নথনাড়া যে না খাই তাও নয়। আর আপিসে যাই কলম পির্ষি, এবং বড় সায়েবের সবুট পায়ে খোসামোদের কিঞ্চিং তৈল বর্ষণ • করি। আমাদের এই নিরানন্দ বৈচিত্র্যহীন জীবনের অবসানে সন্ধ্যাবেলাটায় এক পেয়ালা চায়ের সঙ্গে যদি রাজ-উজির না মারতে পাই তাহলে আর জীবনের স্বাদ থাকে কোথায় । আজ কি নিয়ে চলছিল তোমাদের ?” প্রমথ হাত নাড়িয়া বলিয়া উঠিল, “আরে শুনেছ ভুলু আর গণেশ দু-জনে এক সঙ্গে মিলে যে ‘গণেশ এণ্ড বসাক’ নাম দিয়ে কারবার খুলেছিল সেটা যে ফেল পড়েছে। আমরা এইমাত্র খবর পেলাম। পাওনাদারের হাত এড়াবার জন্যে যত রকম ফন্দিফিকির আছে দুনিয়াতে তার কোনটাই ওরা, বাদ দেয় নি। আমি জানতাম না, আজই হঠাৎ সতীশের কাছে সমস্ত ব্যাপার গুনলাম। g ব্যাটার অনেক লোককেই ঠকিয়েছে।” সতীশ পাশেই চেয়ারে বসিয়াছিল, সে বলিল, “বাস্তবিক বিজয়, এই বাঙালী জাতটার মত অলস, স্বার্থপর এবং ه ډ سسء چه ډ জোচ্চোর • হিংস্কটে জাত আমি আর একটাও দেখতে পেলাম না। হিটুলার, মুসোলিনীর জবরদস্ত নীতি নিয়ে আমরা সমালোচনার স্রোত বইয়ে দিই, কিন্তু একবার মনে ক’রে দেখ দিকি জাতির উন্নতির জন্তে সে দেশের প্রত্যেকটি লোক কতখানি স্বার্থত্যাগ করেছে, নিজেদের কত কঠিন নিয়ম কত মুকঠোর নিষ্ঠার অঙ্গীভূত ক’রে নিয়েছে। ভেবে দেখলে মনে গভীর শ্রদ্ধা হয় নাকি ? আর বাঙালী ? নিজেদের স্বার্থ ছাড়া আর কিছু জানে ওরা ? পারে কোন ত্যাগ করতে ?” বিজয়নাথের শুনিতে রীতিমত কষ্ট হইতেছিল। ভূত্য রেকাবিতে করিয়া জলখাবার এবং চায়ের পেয়ালা আনিয়া সম্মুখে ধরিয়া দিয়াছে, পেয়ালাটা তুলিয়া লইয়া তিনি বলিলেন, “সতীশ, তুমি কি ঠিক জান বাঙালী ত্যাগ করতে জানে না ? আমি তোমাকে একটি কথা মনে করিয়ে দিই। কথাটি বাঙালীদের মধ্যেই যিনি শ্রেষ্ঠ সত্যভ্রষ্টা, সেই রবিবাবু গোরার মুখ দিয়ে বলিয়েছেন, ‘নিন্দ পাপ, মিথ্যা নিন্দ আরও পাপ এবং স্বজাতির মিথ্যা নিন্দার মত পাপ সংসারে খুব অল্পই আছে। কোন জিনিষ যথার্থ না জেনে সমালোচনা করতে নেই। বিশেষ ক’রে সমস্ত জাতির নিন্দ-ব্যাপারে।" সতীশ কিঞ্চিৎ অপ্রতিভ হইয়া কহিল, “আমি কি বলেছি বাঙালীদের মধ্যে স্বার্থত্যাগ করতে কেউ জানে না ? না, তেমন ক’রে খুজে দেখলে দু’চার জন মহান ব্যক্তির নাম মনে পড়ে না ? কিন্তু সেটা হ’ল দৃষ্টান্ত। প্রতি দিনে আমাদের আশেপাশের জীবনে ঠিক সেই দৃষ্টাস্তের উণ্টোটাই কি আমরা দেখতে পাই নে ?” 勝 বিজয়নাথ গভীর স্বরে বলিলেন, “না তা নয়। আমি ত তোমাদের মত বক্ত নই। গুছিয়ে দু-চার কথা বলতেও পারি নে, কিন্তু আমি অনুভব করতে পারি বাঙালীরা তাদের রোজকার জীবনেই যত ত্যাগ করে তাদের সে