পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৯০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

セ〜RS প্রবাসী SNరి83 তিল তিল আত্মত্যাগের পরিসীমা নেই। কত জায়গায় কত ছলে দেখেছি তাদের। অজ্ঞাত অখ্যাত তারা, তাদের কথা এ চায়ের আসরে বললে বেমানান শোনাবে। আর বলবার ভাষাও নেই আমার । কিন্তু আমি এটুকু নিঃসংশয়ে বুঝতে পারি ত্যাগ করবার ক্ষমতা তাদের কি অসীম ! যখন তাদের ডাক আসবে তখন এ অক্ষমতার দোহাই তাদের কেউ দিতে পারবে না । জগতে তার প্রমাণ করবেই এক দিন, এত দিন যে-অপবাদ তাদের নামে সবাই দিয়েছিল, তারা তার অনেক উদ্ধে । দেখে নিও তোমরা ” সতীশ আবে তর্ক না করিয়া একটুখানি অবজ্ঞার হাসি হাসিল । বিজয় যে ভাবপ্রবণ সেকথা তাহারা সবাই জানিত। তাহার সকল কথাই যে বিশ্বাসের যোগ্য এমন কেহই মনে করিত না ; আজও করিল না। তথাপি প্রসঙ্গটা বদলাইয়া বন্ধুরা চ এবং বাড়ীর তৈয়ারী শিঙ্গাড়া-কচুরির সহিত অন্যবিধ চর্চায় লিপ্ত হইলেন। কিন্তু যাহাদের কথা চায়ের আসরে নিতাস্ত বেমানান হইবে বলিয়া বিজয়নাথ সঙ্কোচে বলিতে চাহেন নাই, তাহাদেরই একজনের জীবনের করুণতম অধ্যায় যে সেই দিনই তাহার চোখের সম্মুখে উদঘাটিত হইবে এ আশাও বোধ করি তিনি করেন নাই। কিন্তু ব্যাপারটা ঘটিল তাহাই । বন্ধুরা বিদায় লইবার পর বিজয়নাথ অন্তঃপুরে আসিয়া সবেমাত্র বসিয়াছেন । গৃহিণী একটি তোল-উলুনে স্বামীর রাত্রির আহারের জন্য লুচি ভাজিতেছিলেন । এমন সময় বহিদ্বারে একটা ছেকড়া-গাড়ী দাড়াইবার আওয়াজ পাওয়া গেল। এত রাত্রিতে কে আসিল দেখিবার জন্ত কৌতুহলী হইয়া বিজয়নাথের স্ত্রী মন্দা বারান্দার রেলিং ঝুঁকিয়া মুখ বাড়াইল । গাড়ীর মাথায় অনেক মোটঘাট, পোটলাপুটলি । একটি অবগুণ্ঠনবতী বিধবা আধময়লা কাপড় পরিয়া নামিলেন। র্তাহার সঙ্গে ছোট ছোট তিন-চারিটি ছেলেমেয়ে । t - সিড়ির মুখে আসিয়া তাহারা সসস্কোচে দাড়াইয়া রহিল। মন্দ লুচি ভাজা রাখিয়া তাড়াতাড়ি নামিয়া গেল। মেয়েট যুদ্ধক কহিল, "আপনার ছোট ননদ মাধুরী, আমি তারই খুড়তুতো জা "আমাকে হয়ত, আপনি চিনবেন না, কখনও দেখেন নি। আমি কিন্তু মাধুরীর মুখে অনেকবার আপনার গল্প শুনেছি। আমরা যাচ্ছি রংপুরে। সঙ্গে ঠাকুরপো আছেন, আপনার নন্দাই। ট্রেনটা লেট ছিল, গাড়ীবদল ক’রে ছোট-লাইনের গাড়ী ধরবার আর সময় মিলল না, গাড়ী ছেড়ে দিয়েছে। তাই ঠাকুরপে বললেন, সেই কাল বেলা ন-টার আগে যখন আর গাড়ী নেই তখন আজ রাত্রিটার মত আপনাদের এখানে থেকে যেতে । তিনি ষ্টেশনে আটকা পড়েছেন, আসছেন।” মন্দা তাঁহাদের সমাদর করিয়া কহিল, “তৰু ভাগ্যি যে ট্রেন ফেল হয়েছে । নইলে ত আর আমাদের আপনাকে দেখবার সৌভাগ্য হ’ত না । আমুন আমুন, উপরে চলুন। তা আপনার ঠাকুরপো নরেশ আম্বক, সে এলে তার সঙ্গে ঝগড়া করব । ট্রেন ফেল হোক বা না হোক এই যখন পথ, তখন তার আমাকে একটা খবর দিয়ে আপনাদের এখানে নামিয়ে অন্ততঃ দিন দুই জিরিয়ে নিয়ে যাওয়া উচিত ছিল। কিন্তু আপনার নামটি কি ভাই ? চলুন, দাড়িয়ে কেন ।” “আমার নাম মুহাস”—সিড়িতে উঠিবার পথে মেয়েটি বলিল, বলিয়া একটু স্নান হাসিল । সিড়ি দিয়া উপরে উঠিয়া আসিতে আসিতে বিজলীবাতির উজ্জ্বল আলোর নীচে তাহার মুখখানি বড় স্নান ও করুণ দেখাইল । একমাত্র পথশ্রমকেই হয়ত আতথানি বিষন্ন করুণতার জন্য দায়ী করা যায় না। তাহার পরিধানের বৈধব্য-বেশের দিকে চাহিয়া মন্দা ব্যথিত চিত্তে মনে মনে কহিল, আহা, বেচারীর এই ত বয়স, এরই মধ্যে কপাল পুড়েছে । উপরে আনিয়া ছেলেমেয়েদের খাওয়ানোর ব্যবস্থা করিয়া তাহাদের জন্য চাকরকে বিছানা করিতে বলিয়া সুহাসকে হাতমুখ ধুইবার জন্ত স্বানের ঘরটা দেখাইয়া দিতেছে এমন সময় নীচের তলায় নরেশের গলার আওয়াজ পাওয়া গেল, “বৌঠান কোথা !" g বাক্স খুলিয়। স্বামীর একখানা ধোয়ানো নক্লন-পাড়ের ধুতি বাহির করিয়া স্বহাসকে গাড়ীর কাপড়খানা ছাড়িবার জন্য অনুরোধ করিয়া এবং স্বানের ঘরটা দেখাইয়া দিয়া মনা তাড়াতাড়ি নীচে নামিয়া গেল।